বাংলা একাডেমীতে কারুশিল্প মেলা উদ্বোধন, চার শিল্পী পুরস্কৃত- সংস্কৃতি সংবাদ

‘কারুশিল্পের অনেক ঐতিহ্য এখনও আমাদের দেশে বিদ্যমান। কিন্তু এই শিল্পকে যাঁরা হৃদয়ে ধারণ করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের মূল্যায়ন খুবই কম। এই কারুশিল্পীদের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করলে বিশ্বে আমাদের পুরনো এই ঐতিহ্যকে তুলেধরা সম্ভব।
আমরা যদি কারুশিল্পকে চর্চা বা লালন না করি কালের স্রোতে এগুলো হারিয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে আমাদের নিজস্বতাই আমাদের গর্ব। যে সকল কারুশিল্পী আজ পুরস্কৃত হলেন, তাঁদের দেখে অন্য শিল্পীরাও সাহস, শক্তি ও উৎসাহিত হবেন। সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা অবশ্যই এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে শুক্রবার সকালে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার প্রদান ও মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। কারুশিল্পের জাতীয় ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও শিল্পীদের সৃজনশীলতায় নবীন মাত্রা সঞ্চারের লক্ষ্যে জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে ১৪১৯ সালে কারুশিল্পে চারটি মাধ্যমে চারজন শ্রেষ্ঠ কারু শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয়। এঁরা হলেন শতরঞ্জি মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য রংপুরের পীরগাছার মোঃ আরিফুজ্জামান, বাঁশ-বেত মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য কুষ্টিয়ার দূর্বাচারার প্রদীপ কুমার দাস, টেপা পুতুল মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য রাজশাহীর পবার সুবোধ চন্দ্র পাল এবং দারুশিল্প মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য কুষ্টিয়ার জুগিয়ার মোঃ শরিফুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য লেখিকা সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পরিচালক সুবীর চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি মনিরা এমদাদ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের অন্যতম লক্ষ্য। সূচনালগ্ন থেকে বেশ কিছু ধারাবাহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদান করেছে সম্মাননা। প্রচলন করেছে প্রতি দু’বছর অন্তর শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার। তবে ২০১০ সাল থেকে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সহযোগী হিসেবে সম্পৃক্ত হওয়ায় এই কার্যক্রম প্রতিবছর নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৪টি মাধ্যমে মোট ৫৫ জন কারুশিল্পীকে সম্মানিত করা হয়েছে। এ বছরও চারটি মাধ্যমে চারজন কারুশিল্পীকে সম্মানিত করা হলো। ২০১২ সালের পুরস্কার ওই বছরের মধ্যে দেয়া সম্ভব না হওয়ায় এ বছরের শুরুতেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ কারুমেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কারুশিল্পীরা তাঁদের সৃষ্ট চমৎকার শিল্পকর্ম দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে এই মেলা। কোন স্টলে বেত, কাঠ ও নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি দেশীয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সমাহার আবার কোনটিতে মাটি ও ধাতুর তৈরি পুতুল ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আবার কোনটিতে তাঁতের তৈরি কাপড়ে শোভা বর্ধন করছে মেলার আঙ্গিনা।
১৪১৯ সালে কারুশিল্পের চারটি মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ কাজের জন্য প্রত্যেক কারুশিল্পীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যমানের শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ ছাড়া আরও ৩২ জন কারুশিল্পীকে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়। প্রায় কুড়িটি স্টলে বিভিন্ন কারুশিল্পী তাঁদের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করছেন। মেলা চলবে ১৩ জানুয়ারি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
জাতীয় সংসদ ভবনের সৌন্দর্য আঁকলেন ২৩ শিল্পী ॥ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের সৈন্দর্য রঙ-তুলির ছোঁয়ায় তুলে ধরলেন দেশের স্বনামধন্য ২৩ জন নবীন ও প্রবীণ চিত্রশিল্পী। ‘বর্ণে বর্ণিল স্বপ্নে উজ্জ্বল আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন’ শীর্ষক এ আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেছে যৌথভাবে জাতীয় সংসদ ভবন কর্তৃপক্ষ ও ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভস (আইএসসি)। এতে সহযোগিতা করেছে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেল। শুক্রবার সকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে দুই দিনের এই আর্ট ক্যাম্প উদ্বোধন করেন ডেপুটি স্পীকার শওকত আলী।
কবি ও লেখক পরশে হিমুর বন্ধু হিরু প্রকাশনানুষ্ঠান ॥ নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট হিমু চরিত্রের পরবর্তী হিরু চরিত্র রূপায়নে কথাশিল্পী দেলোয়ার হাসানের ‘হিমুর বন্ধু হিরু’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে শুক্রবার বিকেলে। সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওপার বাংলার নন্দিত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন।
বাংলা একাডেমীর সভাপতি ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কবি বেলাল চৌধুরী, আসাদ চৌধুরী, আল মুজাহিদী, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, হেলাল হাফিজ, হাসান হাফিজ প্রমুখ। ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বইটির লেখক দেলোয়ার হাসান বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার থেকে প্রাপ্ত লেখক সম্মানীর সব অর্থের চেক শাওনের হাতে তুলে দেন। এই অর্থ সম্পূর্ণ ব্যয় হবে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের উন্নয়নের জন্য।
ছায়ানটে সোহ্রাব হোসেন স্মরণানুষ্ঠান ॥ ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের প্রধান মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় গানে ও কথায় সদ্য প্রয়াত সঙ্গীতগুরু শিল্পী সোহ্রাব হোসেনকে স্মরণ করা হয়। ছায়ানট আয়োজিত এ অনুষ্ঠান শুরু হয় ‘জাগো অমৃত পিয়াসীচিত’ সমবেত গানের মধ্যদিয়ে। পরে প্রয়াত শিল্পী সম্পর্কে স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য রাখেন ছায়ানটের অধ্যক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ সন্জীদা খাতুন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এটিএম নজরুল ইসলাম ও সাদিয়া আফরিন মালিক। অনুষ্ঠানে পরিবেশিত উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে, বধু তোমার আমার এইযে বিরহ, ভেসে আসে সুদূর, আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, সাঁঝের পাখিরা ফিরিল কুলায়, শূন এ বুকে প্রভৃতি। সঙ্গীতে অংশ নেন শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল, শামিমা পারভীন, বিজন মিস্ত্রি, ফারহানা আক্তার শার্লি, সুমন মজুমদার, সুমন চৌধুরী, কল্পনা আনাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.