'মাগো, আমি মিছিলে যাচ্ছি, ফিরে না এলে, মনে রেখো তোমার ছেলে মুজিবের জন্য জীবন দিয়েছে'

মাগো, আমি মিছিলে যাচ্ছি, যদি ফিরে না আসি তবে মনে রেখো, দেশের জন্য, শেখ মুজিবের জন্য তোমার ছেলে জীবন দিয়েছে।" ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি শহীদ মতিউরের পকেটে থাকা রক্তভেজা চিরকুটের এই কথাগুলো উচ্চারণ করে চার দশক আগের গণঅভু্যত্থানের সেই ঐতিহাসিক দিনে ফিরে যান অভু্যত্থানের অন্যতম নায়ক তোফায়েল আহমেদ।
জনতার রম্নদ্ররোষ এবং গণঅভু্যত্থানের প্রচ-তায় আইয়ুব শাহীর পতন, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি আর স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা এই ঐতিহাসিক গণ অভু্যত্থান আন্দোলনের সফল নেতৃত্বদানকারীদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে আন্দোলনের নায়কদের মিলনমেলা বসেছিল মঙ্গলবার বিকালে। রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ মিলনমেলার আয়োজন করে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালীর মুক্তিসনদ ৬ দফা সম্বলিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা আন্দোলনের সফলতার চূড়ানত্ম রূপলাভ করে উনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি। দিবসটির তাৎপর্য পর্যালোচনা এবং আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন আন্দোলনের ১০ নায়ককে সন্মাননা প্রদান করেছে। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন_ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা তৎকালীন ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ, তৎকালীন ডাকসুর জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী, ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি আবদুর রউফ, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি সাইফউদ্দিন আহম্মেদ মানিক (মরণোত্তর), ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দোহা, ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সভাপতি মোসত্মফা জামাল হায়দার, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি দীপা দত্ত, ছাত্রনেতা মাহবুবুল হক দোলন (মরণোত্তর) এবং ছাত্রনেতা ফখরম্নল ইসলাম মুন্সী। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে নাজিম কামরান চৌধুরী, ফখরম্নল ইসলাম মুন্সী এবং মাহবুবুল হক দোলনের পৰে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মরহুম সাইফউদ্দিন আহম্মেদ মানিকের পৰে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন তাঁর স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া মোসলেম। সম্মাননাপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী এবং ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি সৈয়দ মাযহারম্নল হক বাকী।
এ উপলৰে আয়োজিত আলোচনা সভায় সম্মাননাপ্রাপ্তরা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ সভাপতি সৈয়দ মাযহারম্নল হক বাকী, প্রাক্তন ছাত্র লীগ নেতা আমির হোসেন আমু এমপি, শেখ শহিদুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোসত্মফা মহসীন মন্টু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ রশিদ।
সম্মাননাপ্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় তোফায়েল আহমেদ এমপি উনসত্তরের আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সম্মানের জন্য আমরা আজ আসিনি। আমরা আজ এসেছি উনসত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিতে। তিনি বলেন, আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি এখনও হয়নি। রাজনীতির বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে আমরা একে অপরকে সম্মান দেই না, একজনের সুনাম আরেকজন বলি না, যার যা প্রাপ্য তা তাকে দেই না। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে মনত্মব্য করে তিনি বলেন, উজ্জ্বল সম্ভাবনার দেশ এই বাংলাদেশ। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের জন্য কাজ করলে অবশ্যই বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার ৰেত্রে বঙ্গবন্ধু প্রত্যেকটি পদৰেপে ছাত্রলীগকে অগ্রণী ভূমিকায় রাখতেন। তিনি ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাসকে সারাদেশের নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস মানেই ছাত্রলীগের ইতহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস মানেই স্বাধীনতার ইতিহাস। তিনি ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস স্মৃতিচারণ করে বলেন, আগের সময় একজন ছাত্রনেতার যে সম্মান ছিল, এখন অনেক মন্ত্রীও সে সম্মান পান না। সৈয়দ মাযহারম্নল হক বাকী বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাসে ছাত্রলীগের ভূমিকা স্বর্ণাৰরে লেখা থাকবে। আবদুর রউফ বলেন, বর্তমানে ছাত্র রাজনীতিতে অবৰয় নেমে এসেছে। নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে ছাত্রনেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ধরনের আত্মঘাতী কর্মকা- থেকে বিরত রাখতে প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভাপতির বক্তব্যে নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, উনসত্তরের আন্দোলনের নায়কদের কারণেই বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, জাতির পিতা হয়েছেন। তাই কালৰেপণ না করে তাঁদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.