গাইবান্ধার আলোকিত তিন নারীনেত্রী

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে নিজ অধ্যবসায় ও কর্ম প্রচেষ্টায় আত্মনির্ভর প্রতীকে পরিণত হয়েছেন গাইবান্ধার আলোকিত ৩ নারীনেত্রী কাজল রেখা, জুলেখা বেগম ও জাহানারা বেগম।
সম্প্রতি বেগম রোকেয়া দিবসে তাদের কর্মের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সংবর্ধনা এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতি পদক প্রদান করা হয়। রোকেয়া দিবস উপলক্ষে গাইবান্ধা পৌর পার্ক ও শহীদ মিনার চত্বরে গণউন্নয়ন কেন্দ্র আয়োজিত ‘উন্নয়ন সম্ভাবনায় নারী’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় দু’দিনব্যাপী নারী মেলায় তাদের পদক প্রদানসহ সংবর্ধিত করা হয়। কাজল রেখা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লাহেরীর খামার গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী নারী কাজল রেখা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যার জীবন জীবিকাকে বিপন্ন করতে পারেনি। বরং হুইল চেয়ার নির্ভর চলৎশক্তিহীন এই নারীর অদম্য স্পৃহা তাকে করেছে আত্মনির্ভরতার প্রতীক। একজন অনুকরণীয় মানুষ।
মাত্র ১২ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে অতি দরিদ্র পরিবারের কাজল রেখা অতিকষ্টে ভাইয়ের আশ্রয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শুধু ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ পায়। অতঃপর অপ্রাপ্ত বয়সেই তার বিয়ে হয় ধুতিচোরা গ্রামে। কিন্তু ভাগ্য তার বিরূপ। বিবাহিত জীবনের মাত্র দু’বছরেই হঠাৎ জ্বরে ভুগে তাকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। স্বাভাবিক চলাফেরা করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন তিনি। পা দু’টো অবস হয়ে শুকিয়ে যায় তার। হুইল চেয়ার নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় ভেঙ্গে যায় সংসার জীবন।
এ থেকে অধ্যবসায় আর প্রবল ইচ্ছাশক্তির বলে তিনি হতাশার অমানিশা কাটিয়ে জীবন জীবিকায় স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন। সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে মেশিন কিনে বাড়িতে শিশু আর মেয়েদের পোশাক সেলাই শুরু করেন। সেই সঙ্গে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষ, হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন শুরু করেন। এর পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোও শুরু করেন বাড়িতেই। এভাবেই আয় করে দারিদ্র্যকে জয় করে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করে গ্রামের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
এ কারণে গাইবান্ধা জেলা শহরে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে গণউন্নয়ন কেন্দ্র আয়োজিত নারী মেলায় অন্য ৫ জন গুণীজনের সঙ্গে তিনি বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন।

No comments

Powered by Blogger.