সেই 'লাল' রম্নমাল_হাত থেকে ফেললেই ফাঁসিত by গাফফার খান চৌধুরী

 কারাগারে এসেছে নতুন লাল রম্নমাল। হাত থেকে রম্নমাল ছেড়ে দেয়ার কসরত করছেন এক উর্ধতন কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মৃতু্যর দিন ঘনিয়ে আসছে। খুনীরা গুনছে মৃতু্যর প্রহর। খুনীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাত পর্বেরও অনানুষ্ঠনিক সমাপ্তি ঘটেছে।
রিভিও পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে। আজ আদালত আদেশ দেবে। সর্বশেষ লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিনের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে কারাবন্দী পাঁচ খুনীর সাৰাত পর্ব। হয়ত এ দেখাই তাদের শেষ দেখা! স্বল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পর্যায়ক্রমে ৫ খুনীর ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে। সূত্র জানায়, ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি আদালতের আদেশের ওপর নির্ভর করছে। ইতোমধ্যেই রিভিও পিটিশনের শুনানি শেষ হয়েছে। আজ আদালত আদেশ দেবে। আদালতের আদেশের ওপর নির্ভর করছে ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টি। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাত পর্বেরও অনানুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছে। গত ২৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর খুনী মেজর (অব) একেএম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) সঙ্গে তার স্ত্রী হোসনে আরা মহিউদ্দিন, মেয়ে দিল আক্তার, ভাই হাই তালুকদার, শ্যালক হুমায়ুন ইকবাল। কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খানের সঙ্গে মাছুয়ারা খান, ছেলে আশরাফুল রশীদ, মেয়ে শেহনাজ রশীদ, জামাতা ফুয়াদ ও ভাই মামুন রশীদ। মেজর (অব) বজলুল হুদার সঙ্গে তার স্ত্রী নাফিজা মরিয়ম, মেয়ে আনিকা হুদা, ভাই নাজমুল হুদা, বোন মাহমুদা ফেরদৌস ও মাহফুজা পাশা দেখা সাৰাত করেন। সোমবার বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের সঙ্গে তার মা মাহমুদা রহমান, ভগি্নপতি ইশফাকুর রহমান, বোন ইয়াছমিন রহমান, ভাগি্ন মাহমুদা রহমান ঐশ্বী কারাগারে সাৰাত করেন। সর্বশেষ লে. কর্নেল (অব) মহিউদ্দিন আহম্মেদের (আর্টিলারি) সঙ্গে তার স্ত্রী শাহিদা মহিউদ্দিন, ছেলের বৌ ফাতেমা আহম্মেদ, চাচা কামাল উদ্দিন, মামাতো ভাই সাদিক ও নাতনি সিফাত সাৰাত করেন।
সূত্রগুলো বলছে, হয়ত এ দেখাই শেষ দেখা। আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কম। খুনী মহিউদ্দিন তার স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনদের অশ্রম্নসজল নয়নে বিদায় দিয়েছে। নিজেও অনুশোচনায় ভুগছে। আলস্নাহর কাছে কান্নাকাটি করছে। পরিবারের সবাইকে তার জন্য দোয়া করতে বলেছে। খুনীরা সবাই ফাঁসির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ৫ খুনীর সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজনের সাৰাত হয়েছে। সর্বশেষ মহিউদ্দিনের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাতের মধ্য দিয়েই খুনীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের সাৰাত পর্বের সমাপ্তি ঘটছে। কিন্তু কারা সূত্র বলছে, বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। খুনীদের সঙ্গে আত্মীয়স্বজনদের আবারও সাৰাত হতে পারে।
কারা সূত্র জানায়, পুরোদমে চলছে ফাঁসির কার্যকরের প্রস্তুতি। ফাঁসি কার্যকর করতে ২০ জলস্নাদ রয়েছে রীতিমতো প্রসত্মুত। জলস্নাদদের দ্রম্নত ফাঁসি কার্যকর করার কৌশল রপ্ত করানোর প্রশিৰণ চলছে। জলস্নাদদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। জলস্নাদদের শারীরিক কসরতও চলছে। হালকা ব্যায়াম করে হাত পা পাকিয়ে নিচ্ছে। যাতে বিশেষ লিভারে টান দেয়ার সময় কোন অসুবিধা না হয়। আবার জলস্নাদরাও রয়েছে কড়া কারা গোয়েন্দাদের নজরদারির মধ্যে। কে পাবে লিভার টান দেয়ার সুযোগ সে নিয়েও চলছে জলস্নাদদের মধ্যে আলোচনা। সেই সঙ্গে চলছে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ। ফাঁসির মঞ্চের আশপাশের জায়গা ধোয়ামোছার কাজ চলছে অবিরাম গতিতে। ফাঁসি কার্যকর করতে ব্যবহৃত মেনিলা রশিও প্রস্তুত করা হচ্ছে। রশিতে শান দেয়া হচ্ছে। পিচ্ছিল করা হচ্ছে রশি। যাতে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প সময়ের মধ্যে ফাঁসি নিশ্চিত হয়।
কারাগারের এসেছে নতুন লাল রম্নমাল। একজন উর্ধতন কর্মকর্তা হাত থেকে লাল রম্নমাল ছেড়ে দেবেন। ওই উর্ধতন কর্মকর্তা রীতিমতো রম্নমাল ছেড়ে দেয়ার প্রাকটিস করছেন। রম্নমাল ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলস্নাদ লিভারে টান দেবে। আর নিচ থেকে সরে যাবে কাঠের তৈরি পাটাতন। লাল রম্নমাল হাত থেকে মাটিতে ফেলে দেয়ার কারণ হচ্ছে রম্নমাল মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাতে ফাঁসি কার্যকর হয়ে যায়। চারদিকে সতর্ক পাহারা বসানো হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে খুনীদের। খুনীদের সেলগুলোতে বসানো সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি রেকর্ড করা হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা। ক্যামেরার মাধ্যমে খুনীদের ওপর সর্বৰণিক নজরদারি চলছে।
খুনীদের শারীরিক চেকআপ চলছে নিয়মিত। কারাগারে ঘন ঘন উর্ধতন কর্মকর্তাদের রম্নদ্ধদ্বার বৈঠক হচ্ছে। অন্যদিকে ফাঁসির মঞ্চে যারা উপস্থিত থাকবেন তাঁদের নামের তালিকা চূড়ানত্ম করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশাপাশি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারেও ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ চলছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই ৫ খুনীর ফাঁসি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হতে পারে। নিরাপত্তার কারণে খুনীদের অন্য কারাগারে স্থানানত্মর করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করছে। একই কারাগারে পর্যায়ক্রমে একাধিক ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করতে আইনগত কোন বাধা নেই। বিগত এরশাদ ও জিয়াউর রহমানের শাসনামলে একই কারাগারে একাধিক ব্যক্তির পর্যায়ক্রমে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান।

No comments

Powered by Blogger.