বিরোধী দলের উদ্দেশে স্পীকার_ যা বলার সংসদে এসে বলুন

সংসদ রিপোর্টর্ার বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দলকে আবারও সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। নবম জাতীয় সংসদের বর্ষপূর্তি উপলৰে সোমবার সংসদের শুরম্নতে এ আহ্বান জানিয়ে স্পীকার বলেন, "আপনারা সংসদে আসুন, আপনাদের যা কিছু বলার আছে সংসদে এসে বলুন। সংসদকে কার্যকর রাখতে আপনাদের সহযোগিতা একানত্মভাবে কামনা করছি।"
নবম জাতীয় সংসদ সোমবার দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করে। বিকেল সোয়া ৪টায় স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরম্ন হয়। দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম দিন কিং চুন ওয়াং-এর নেতৃত্বে কোরিয়া-বাংলাদেশ পার্লামেন্ট ফ্রেন্ডশিপ এ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধি দল সংসদ অধিবেশন প্রত্যৰ করেন।
সংসদের প্রারম্ভিক বক্তব্যে স্পীকার তাঁর সংৰিপ্ত বিবৃতিতে সরকার ও বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পরমতসহিষ্ণুতা। রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকাটা অত্যনত্ম স্বাভাবিক। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে একে অন্যের মতামতকে গুরম্নত্ব দিতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হবে। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন নির্ভর করছে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা সৃষ্টির ওপর।
গত এক বছরের সংসদকে অত্যনত্ম কার্যকর বলে মনত্মব্য করেন স্পীকার। তিনি বলেন, সংসদের এই এক বছর ছিল অত্যনত্ম তাৎপর্যপূর্ণ। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ যে ভূমিকা পালন করে, সেখানে সংসদ সদস্যদের ভূমিকাই মুখ্য। সংসদ সদস্যদের অংশ গ্রহণের ওপরই নির্ভর করে সংসদের কার্যকারিতা। আর এমপিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই তৈরি করতে পারে কার্যকর সংসদ। এক বছরে সকলের সহযোগিতায় জাতীয় সংসদ দেশ ও জাতির জন্য রেখেছে অত্যনত্ম কার্যকর ভূমিকা, যার পুরো কৃতিত্ব সকল সংসদ সদস্যের।
এক বছরের কর্মকা-ের বিসত্মারিত তুলে ধরে স্পীকার জানান, এক বছরে তিনটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে চতুর্থ অধিবেশন চলছে। এতে ৯৫ কার্যদিবসে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন ইসু্যতে এমপিরা আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা ৭৩ কার্যদিবস সংসদে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ২৩ কার্যদিবস। এর মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন তিন কার্যদিবস।
স্পীকার বলেন, সংসদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রথম অধিবেশনে সব স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিগুলো ইতোমধ্যেই কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। প্রধান বিরোধীদলীয় সদস্যরা কমিটিগুলোতে উপস্থিত থেকে দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করছেন। এতে মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা বাড়ছে। তিনি বলেন, গত বছর ৩১টি সংসদীয় প্রতিনিধি দল আইপিইউ এবং সিপিএ সম্মেলনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ওই দুটি সংগঠনের স্থগিত করা সদস্যপদ বাংলাদেশ ফিরে পায়। এছাড়া সমপ্রতি কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে সংসদীয় দলের সদস্যদের যোগদান অত্যনত্ম তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি জানান, চারটি অধিবেশনে ৯১টি বিল উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে পাস হয়েছে ৬৯টি। ৭১ বিধিতে নোটিস জমা পড়ে তিন হাজার আট শ' ২১টি। এর মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে ১৭১টি ও ১২৮টি নোটিসের ওপর আলোচনা হয়েছে। ৭১ বিধিতে পাওয়া নোটিসের সংখ্যা ছিল এক হাজার চারটি। ৬২ বিধিতে নোটিস জমা পড়ে ২০৩টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ১১২টি। ১৪৭ বিধিতে ১৬টি নোটিসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয় ছয়টির।
স্পীকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরের জন্য নোটিস জমা পড়ে এক হাজার এক শ' ৪৪টি। এর মধ্যে ১২৮টি প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া মন্ত্রীদের উত্তরের জন্য পাওয়া নোটিসের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার নয় শ' ৬৫টি। এর মধ্যে উত্তর দেয়া হয়েছে সাত হাজার ৩১টি প্রশ্নের। তিনি জানান, এক বছরে সংসদে ২টি সিদ্ধানত্ম প্রসত্মাব পাস হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.