খুনীদের ফাঁসি- জলস্নাদ হতে এত সাড়া কখনও মেলেনি by গাফফার খান চৌধুরী

 বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি দিতে প্রস্তুত ২০ জলস্নাদ। জলস্নাদদের ফাঁসি দ্রম্নত কার্যকর করার নানা কৌশল রপ্ত করানো হচ্ছে। নির্বাচিত জলস্নাদরা সবাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী। নির্বাচিতরা সবাই কমপৰে ৩০ বছরের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
জলস্নাদদের রাখা হয়েছে খুনীদের সেলের মাত্র ৫শ' গজ দূরে। জলস্নাদদের দৃষ্টি এখন ফাঁসির মঞ্চের দিকে। পাঁচ খুনীর ফাঁসি ভিন্ন ভিন্ন কারাগারে কার্যকর করা হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করছে। তবে একাধিক কারাগারে পুরোদমে চলছে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ। অন্যদিকে ফাঁসির মঞ্চে যাঁরা উপস্থিত থাকবেন তাঁদের নামের চূড়ানত্ম তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা সাৰাত করেছেন।
কারা সূত্র জানায়, জলস্নাদরা রীতিমতো উত্তেজনায় ভুগছে। ইতিহাসে সাৰী হয়ে থাকার আনন্দে আত্মহারা জলস্নাদরা। বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ৪ জলস্নাদ রয়েছে রীতিমতো খোশ মেজাজে। এই চার জলস্নাদই ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করবে। প্রতিজন খুনীর ফাঁসি নিশ্চিত করতে ৪ জন করে জলস্নাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনী ও জলস্নাদরা রয়েছে শ্বাসরম্নদ্ধকর অন্যরকম এক প্রতীৰায়। করম্নণ প্রতীৰায় রয়েছে খুনীরা। অপরদিকে ফাঁসি দিতে পারলেই ৬০ দিন সাজা মওকুফ হবে। যত তাড়াতাড়ি ফাঁসি হবে তত তাড়াতাড়ি সাজা মওকুফ শুরম্ন হবে। শাসত্মি মওকুফের আশায় প্রহর গুনছে জলস্নাদরা। জলস্নাদদের প্রতীৰার যেন শেষ নেই! কখন পড়বে ডাক!
কারা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি কার্যকর করতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ডাকা হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকর করতে জলস্নাদ হিসাবে রাজি রয়েছে এমন কয়েদীদের রাজি থাকলে হাত তুলতে বলা হয়। উপস্থিত অনত্মত ৫০ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীই হাত তুলে। জলস্নাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণকারীদের সবার সাজার মেয়াদ কমপৰে ৩০ বছর। জলস্নাদ নির্বাচনের ৰেত্রে এমন সাড়া ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। এতে বিপাকে পড়ে কারা কতর্ৃপৰ। এরপর শুরম্ন হয় সবচেয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জলস্নাদ বাছাই। সর্বশেষ ২০ জলস্নাদকে বাছাই করা হয়। কেউ জলস্নাদ নির্বাচিত হওয়ার দিন থেকেই তাকে নির্দিষ্ট কয়েদ ভবনে রাখা হয়। কয়েদ ভবন ফাঁসির মঞ্চ থেকে মাত্র ৫শ' গজ দূরে। নির্বাচিত জলস্নাদরা অন্য যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। ফাঁসি দেয়ার আগ পর্যনত্ম জলস্নাদদের তুলনামূলক ভাল খাবার সরবরাহ করা হয়। যাতে কোন জলস্নাদ অসুস্থ হয়ে না পড়ে। এছাড়া নির্বাচিত জলস্নাদদের সাজার সময়সীমা কমিয়ে দেয়া হয়। নির্বাচিত জলস্নাদদের মধ্যে যে জলস্নাদরা ফাঁসি দিয়ে মৃতু্য নিশ্চিত করবে তাদের সাজার মেয়াদ ৬০ দিন কমে যাবে। এমন আশায় অনেক জলস্নাদ কারা কতর্ৃপৰকে জলস্নাদ হিসাবে মনোনীত করতে অনুরোধ করেছে। তাছাড়া ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকতেও অনেক জলস্নাদ কারা কতর্ৃপৰকে অনুরোধ করে।
নির্বাচিত ৪ জলস্নাদের মধ্যে হাফিজের বাড়ি গাজীপুরে। রাজুর বাড়ি ঢাকায়। সানোয়ার ও ফারম্নকের বাড়ি গোপালগঞ্জে। এ চারজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী। আবার এদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। বহুল আলোচিত এরশাদ শিকদার, খুকু মনিরের মনির ও নারায়ণগঞ্জের রিপনের ফাঁসি দেয়। এছাড়া ২০০৫ সালের ঝালকাঠি আদালতে বোমা হামলা করে দুই বিচারক সোহেল আহম্মেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাঁড়ে হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া জঙ্গী নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ ৬ জঙ্গীকে ফাঁসি দেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে এ চার জলস্নাদের। নির্বাচিত জলস্নাদরা রয়েছে খোশ মেজাজে। সাজা মওকুফের আশায় জলস্নাদদের যেন তর সইছে না। আমোদে ফুর্তিতে রয়েছে তারা। দিব্যি আরাম আয়েশে খাওয়া-দাওয়া সারছে। নিজেদের মধ্যে ফাঁসি দেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। কে কি দায়িত্ব পালন করবে তার হিসাব নিকাশ চলছে। জলস্নাদদের দৃষ্টি এখন শুধুই ফাঁসির মঞ্চের দিকে। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি দিতে জলস্নাদ হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় নিজেদের বিরাট ভাগ্যবান মনে করছে নির্বাচিত জলস্নাদরা। ইতিহাসের সাৰী হয়ে থাকার এমন সুযোগ পাওয়ায় দারম্নণ গর্বিত জলস্নাদরা। ফাঁসির জন্য ফিলিপিন্সের তৈরি মেনিলা রশিও প্রস্তুত রয়েছে। এটি বিশেষভাবে তৈরি রশি। ফিলিপিনের রাজধানী মেনিলাতে এই বিশেষ রশি তৈরি হয়। মেনিলা শহরের নামানুসারে এর নাম মেনিলা রশি। জলস্নাদদের দ্রম্নত ফাঁসি কার্যকর করার নানা কৌশল শিৰা দেয়া হচ্ছে।
ফাঁসির দিন জলস্নাদদের আগাম প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেয়া হবে। জলস্নাদরা ভাল খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রামে থাকবে। হঠাৎ করেই কোন এক সন্ধ্যায় ডাক পড়বে জলস্নাদদের। জলস্নাদদের সন্ধ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে ফাঁসির মঞ্চে। সন্ধ্যা থেকে ফাঁসির মঞ্চের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হবে জলস্নাদদের কাছে। ফাঁসির মঞ্চের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকবে জলস্নাদদের হাতে। ফাঁসি কার্যকর করার পর ধোয়া মোছার পর জলস্নাদদের দায়িত্ব শেষ হবে। এদিকে ফাঁসির মঞ্চে যাঁরা উপস্থিত থাকবেন তাঁদের নামের তালিকা চূড়ানত্ম করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের একজন, সিভিল সার্জনের একজন, জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধিসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে সোমবার বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমানের সঙ্গে তার মা মাহমুদা রহমান, ভগি্নপতি ইশফাকুর রহমান, বোন ইয়াছমিন রহমান, ভাগি্ন মাহমুদা রহমান ঐশ্বি্য কারাগারে সাৰাত করেন। বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যনত্ম সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে পরিবারের সদস্যরা ফারম্নক রহমানের সঙ্গে সাৰাত করেন। সাৰাতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফারম্নক রহমানের পারিবারিক ও মামলা সংক্রানত্ম বিষয়াদি নিয়ে আলাপ আলোচনা হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান।

No comments

Powered by Blogger.