তামিমময় একদিন অন্যরকম বাংলাদেশ- আরিফুর রহমান বাবু

এবার বোঝ, খুব তো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলে? ফেরার দিন এগিয়ে নিতেও চেয়েছিলে। ভেবেছিলে, খেলা তিনদিনেও শেষ হয়ে যেতে পারে। তা না হলে চতুর্থ দিন প্রথম সেশনে শেষ হবেই।
ঘরে ফেরার তাড়া থেকে বিমানের টিকেটের দিনণও পাল্টে ফেলতে চেয়েছিলে? এখন কি করবে? খেলা তো আর তিনদিনে শেষ হলো না। চতুর্থ দিনেও শেষ হবে, তারইবা নিশ্চয়তা কি?'_ চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন দেবাশিষ দত্ত। মঙ্গলবার চা বিরতির সময় স্বদেশী সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রেসবক্সে জোর গলায় বললেন কলকাতা তথা ভারতের অন্যতম শীর্ষ ক্রিকেট লেখিয়ে। বলার কারণও আছে। সিরিজ কভার করতে আসা ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের বড় অংশ একদিন আগেই ফেরার চিনত্মায় ছিল। এমনিতে ফাইট সিডিউল ২৯ জানুয়ারি। আগামী পরশু শুক্রবার সকালে 'জেট এয়ারওয়েজে' চেপে দেশে ফিরে যাবার কথা ধোনি বাহিনীর। সঙ্গে আসা সাংবাদিকদেরও ওইদিন ফেরার কথা। কিন্তু সোমবার দ্বিতীয় দিনশেষে ভারত ২২৬ রানে এগিয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ ভেবেছিলেন, মঙ্গলবারই বুঝি খেলা শেষ হয়ে যাবে। আর তা না হলে বুধবার তো হবেই। কাজেই বাকি দু'দিন বসে থেকে লাভ কি? এরচেয়ে আগেভাগে চলে যাওয়াই ভাল। এই ভেবেই ফাইট এগিয়ে আনার চিনত্মা। কিন্তু তা আপাতত ভেঙ্গে গেছে। মঙ্গলবার খেলা শেষ হয়নি। আজ বুধবার হবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। কেউ জোর গলায় বলতে পারবেন না, ঢাকা টেস্ট বুধবারই শেষ হয়ে যাবে। আসলে কি হবে, সব নির্ভর করছে বাংলাদেশের মিডল ও লেট অর্ডার ব্যাটিংয়ের ওপর। অন্যভাবে বললে খেলার ভাগ্য, আয়ুষ্কাল দুই-ই নির্ভর করছে আশরাফুল, রকিবুল, শাকিব, মুশফিকুর ও রিয়াদদের ওপর। ওরা আজ পুরোদিন উইকেটে কাটিয়ে দিতে পারলে চট্টগ্রামের মতো ঢাকা টেস্টও জমে উঠবে। না জমলেও অনত্মত শেষ দিনে গড়াবে। দ্বিতীয় দিন শেষেই টাইগাররা পিছিয়ে পড়েছিল অনেকটা। মনে হচ্ছিল, তৃতীয় দিন ওই লিডটা আরও বাড়াবে ভারত। বাড়িয়ে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবে, যেখানে শাকিবদের পেঁৗছানো কঠিন হবে। কারও কারও ধারণা ছিল, ধোনির দল হয়ত ৪০০/৪৫০ রানের লিড নিয়ে ফেলবে। টাইগাররা নিশ্চয়ই অত রান করতে পারবে না। ইনিংসে হারবে। কিন্তু কাল মঙ্গলবার ভোজবাজির মতো দৃশ্যপট বদলে গেছে। গেছে বলা বোধকরি ঠিক হলো না। তামিম একাই সব হিসেব বদলে দিয়েছেন। এই মারকুটে ওপেনারের ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়েই পেছন থেকে অনেকটাই সামনে এখন বাংলাদেশ। যারা খেলা দেখেছেন, তাদের জানা, তামিম ১৫১ রানের এক দুর্দানত্ম ইনিংস খেলেছেন, যা দেখে মুগ্ধ ভারতীয় কোচ গ্যারি কারস্টেনও। দণি আফ্রিকার এই সাবেক বাঁহাতি ওপেনার অকপটে স্বীকার করেছেন, তামিম অসাধারণ খেলেছেন। পুরো ইনিংসটি ছিল ইতিবাচক মানসিকতায় গড়া এবং আক্রমণাত্মক মেজাজে সাজানো। এই বাঁহাতি তরম্নণকে সময়ের অন্যতম আক্রমণাত্মক টপ অর্ডার অভিহিত করে গ্যারি কারস্টেন বলে ওঠেন, প্রতিপ বোলিং তছনছ করে দেয়ার মতা ও সামর্থ্য আছে তামিমের। কারস্টেন এমন কথা বলতেই পারেন। তামিমঝড়ে কাল মঙ্গলবার ল-ভ- হয়েছে জহির খান, ঈশানত্ম শর্মা, হরভজন সিং ও প্রজ্ঞান ওঝার বোলিং। ১৫১ রানের হ্যারিকেন ইনিংসে ভারতীয় বোলিং এলোমেলোই শুধু হয়নি। শাকিব বাহিনীর অবস্থার উন্নতিও হয়েছে যথেষ্ট। এখন ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কাই গেছে কমে। আজ চতুর্থ দিন সকালে অতিনাটকীয় কিছু না ঘটলে বাংলাদেশের ইনিংস হারের সম্ভাবনা খুবই কম। আর মাত্র ৮৩ রান। তাহলেই ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা ঘুচবে। কাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনশেষে খেলার যা অবস্থা তাতে বাংলাদেশের উল্টো লিড নিয়ে ফেলার সম্ভাবনাই বেশি। এখন দেখার বিষয় ওই লিড কত দাঁড়ায়?
সেটা নির্ভর করছে আশরাফুল, রকিবুল, শাকিব, মুশফিকুর ও রিয়াদদের ওপর। তামিম যে জায়গায় পেঁৗছে দিয়েছেন, বাকিরা দায়িত্ব নিয়ে খেললে অবশ্যই ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা এড়িয়ে একটা মাঝারি লিড নেয়া খুবই সম্ভব। ওই মাঝারি লিড ২০০ থেকে ২৫০ হলে খেলা জমে উঠতে পারে। কি ভারতীয় দলকে আড়াই শ' রানের টার্গেট ছুড়েই বিপাকে ফেলার চিনত্মা। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? খেলা না দেখা এবং এই ম্যাচের কোনরকম খোঁজখবর না রাখা কেউই কেবল এমন প্রশ্ন করতে পারেন। বাকিরা জেনে গেছেন, শিবির ইনজুরি আক্রানত্ম। পেসার রাজিবের বলে চোয়ালে প্রচ- আঘাত পাওয়া রাহুল দ্রাবিড় মঙ্গলবার স্কয়ার হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরলেও ম্যাচে ফিরতে পারবেন না। একই অবস্থা যুবরাজ সিংয়েরও। কব্জির ইনজুরিতে পড়া এ মারকুটে মিডল অর্ডারের সিরিজও শেষ। মোদ্দা কথা, টার্গেট যতই হোক, ভারতীয়রা ১১ জন ব্যাট করতে পারবেন না। দু'জন কমই থাকবেন। যেমন ছিল প্রথম ইনিংসেও। এ জন্যই তৃতীয় দিন লাঞ্চের ঠিক আগে ধোনি আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ঘোষণায় বাধ্য হন ভারতীয়রা। বোর্ডে ভারতের রান তখন ৮ উইকেটে ৫৪৪। কাজেই শ' দুয়েক রানের লিড নিতে পারলেও খেলা জমে উঠতে পারে।
২৩৩ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করা বাংলাদেশ যখন ৩১১ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামল তখন শঙ্কা জাগছিল_ কি জানি আজই বুঝি সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু তামিম-জুনায়েদ সে শঙ্কা কাটিয়েছেন। ১৯ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর দ্বিতীয় উইকেটে ২০০ রানের বিশাল জুটি গড়েছেন এ দুই বাঁহাতি।
ওরা অনেক করেছেন। যে দলের গত তিন ইনিংসে ১০০'র নিচেই ৫ উইকেট পড়েছে, তার এক জুটির ২০০ রানই অনেক। কাজেই তামিম-জুনায়েদ প্রশংসা-স্তুতিতে ঢেকে যেতে পারেন। তার পরও বলা চলে দু'জনই বড্ড অসময়ে ফিরে গেছেন। যখন মনে হচ্ছিল, আজ চতুর্থ দিন হাতে ৯ উইকেট নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ, তখনই আঘাত। মাত্র ১০ বলের মধ্যে দুজনই ফিরে গেছেন। দুজনই জহির খানের শিকার। জুনায়েদ ৫৫ রানে উইকেটের পেছনে খোঁচা দিয়ে আউট হবার পর তামিম ফেরেন অফস্টাম্পের সামান্য বাইরের বলে ব্যাট পেতে দিয়ে। আর তাতেই ১ উইকেটে ২১৯ থেকে তিন উইকেটে ২২২ হয়ে যায়। দিনশেষে যা ৩/২২৮।

No comments

Powered by Blogger.