দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণ : আইনজীবীর অভিযোগ-আসামিদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে

দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফা আদালতে হাজির করা হয়। আগামী সোমবার পর্যন্ত বিচারকাজ মুলতবি করা হয়েছে। আলোচিত এ মামলাকে দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তরের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে পুলিশের দাখিল করা অভিযোগপত্রের আরো যাচাই-বাছাই করা দরকার বলে রুল জারি করেছেন নয়াদিল্লির সাকেত মহানগর হাকিম আদালত।
এদিকে তিন অভিযুক্ত মুকেশ সিং, অক্ষয় ঠাকুর ও রাম সিংয়ের পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী মনোহর লাল শর্মা গতকাল অভিযোগ করেছেন, এক মক্কেলকে ১০ দিন ধরে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে পুলিশ। আদালতের অধিবেশন শুরুর আগে সকালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'অভিযুক্ত সবাইকে খুব নির্যাতন করা হয়েছে।' তাঁর দাবি, 'এক মক্কেলের এখন কথা বলারও ক্ষমতা নেই।' 'জনবিক্ষোভ প্রশমন করতে কাজে আসবে_এমনভাবে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে' বলেও মনোহরের অভিযোগ।
গত ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণী ২৯ ডিসেম্বর মারা যান। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেয়।
দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা মনোহরের এ অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত আইনি বিধিনিষেধের কথা তুলে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিহার জেল কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র সুনীল গুপ্ত বলেন, অভিযুক্তদের আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি এখানে সুনিশ্চিত।
আইনজীবী মনোহর জানান, তাঁর মক্কেলরা কেউ আদালতে দোষ স্বীকার করবে না। চতুর্থ অভিযুক্ত পবন গুপ্তের আইনজীবী বিবেক শর্মাও জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেলও আদালতে দোষ স্বীকার করবে না। পঞ্চম অভিযুক্ত বিনয় শর্মার ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক ষষ্ঠজন নিজেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করায় গত সোমবার তাকে কিশোরদের জন্য গঠিত আদালতে তোলা হয়েছিল। ওই দিন এ পাঁচ অভিযুক্তকেও প্রথমবারের মতো আদালতে তোলা হয়। ষষ্ঠজনকে আগামী মঙ্গলবার আবারও আদালতে হাজির করা হবে।
গত বুধবার ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইনজীবী মনোহর বলেন, ঘটনার দিন তরুণীর সঙ্গে থাকা তাঁর পুরুষ বন্ধুই 'সব কিছুর জন্য দায়ী'। তাঁর মতে, দুজন অবিবাহিত নর-নারীর রাতে বাইরে থাকা ঠিক নয়। 'আমি আজ পর্যন্ত এমন কোনো যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের ঘটনা দেখিনি, যাতে সম্মানিত কোনো নারী এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন। এমনকি অন্ধকার জগতের ডনরাও সম্মানিত কোনো নারীকে উত্ত্যক্ত করেন না।' এ বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার নিহত তরুণীকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে মনোহর এএফপিকে গতকাল বলেন, 'আমি ধর্ষণের শিকার তরুণীর বিষয়ে কিছুই বলিনি। আমি শুধু বলেছি, ভারতে নারীদের মা-বোন ও বন্ধু হিসেবে সম্মান করা হয়।' উল্টো তিনি প্রশ্ন করেন, 'এমন দেশ কি আছে, যেখানে যৌনকর্মীদের সম্মান করা হয়?' এ কথার মাধ্যমে কি ওই তরুণীকে যৌনকর্মী সাব্যস্ত করা হচ্ছে না_এমন প্রশ্নের উত্তরে মনোহর বলেন, 'না, মোটেই তা না। তবে আমাকে তো আমার মক্কেলদের রক্ষা করতে হবে। প্রমাণ করতে হবে যে তারা এই মারাত্মক অপরাধ ঘটায়নি।' সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.