পাহাড়ি-বাঙালি শান্তি মিছিলে সম্প্রীতির অঙ্গীকার

সংঘর্ষের ঘটনায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে টানা কয়েক দিনের উত্তেজনার পর রাঙামাটি শহর এখন শান্ত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় গত সোমবার সন্ধ্যায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ যৌথভাবে শহরে শান্তি মিছিল করেছে।


শান্তি মিছিলে সম্প্রীতি রক্ষার অঙ্গীকার আর অসাম্প্রদায়িক নানা স্লোগান-সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ছিল হাতে হাতে।
মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রাঙামাটি জেলার আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে জরুরি মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ভবিষ্যতে যেনো এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সোয়া ৯টার দিকে শান্তিকামী পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ মিছিলটি শহরের পৌরসভা থেকে শুরু হয়। শেষ হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই শান্তি মিছিলের আয়োজন করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেডের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান, পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম ভূট্টো, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি উষাতন তালুকদার, জেলা বিএনপির সভাপতি দীপেন দেওয়ান মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
মিছিল শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে অনুষ্ঠিত জরুরি মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার। সভায় পাহাড়ি ও বাঙালি গণমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
একটি কুচক্রীমহল রাঙামাটির শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে বলে দাবি করে প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তারা সেটি করতে পারেনি। তিনি বলেন, 'আমরা যদি রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে থাকি, তাহলে কেউ এসব করতে আর সাহস পাবে না। তাই ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।'
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পাহাড়ে চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে। যত দিন এগুলো বন্ধ না হবে, তত দিন শান্তি আসবে না।
ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, 'রাঙামাটি শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে কাউকে ভয় লাগাতে হবে কারো ভয় কাটাতে হবে। প্রকাশ্যে যারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঘুরেছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।'
পাহাড়ি বা বাঙালি যে-ই দোষী হোক, তাকে আইনের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে দেবাশীষ রায় ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, 'পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে। পার্বত্য এলাকার সমস্যা রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে।'
পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দাবি করে উষাতন তালুকদার মনে করেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনসহ এখানকার সব সংস্থাকে কার্যকর করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। তিনি পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে যাতে পুনরায় এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.