নাস-এর হেলাফেলায় হজযাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

নাস এয়ারলাইন্স গতবারের মতো এবারও হজযাত্রীদের নিয়ে হেলাফেলা করছে। সীমাহীন গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার দরুন কযেকশ’ হজযাত্রী বিমানবন্দরে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। ভ্ক্তুভোগী কয়েক হজযাত্রীকে আল্লাহর কাছে হাত তুলে নাস এয়ারলাইন্সকে হেদায়েত করার দোয়া করতেও দেখা গেছে।


হজযাত্রীদের এমন দুর্দশা ঘটেছে গত দুদিন সোম ও মঙ্গলবার। পর পর দুটো ফ্লাইট দেরি হওয়ায় প্রায় ৯শ’ হজযাত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকা পড়েন। নাস এয়ারলাইন্স সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে একটি ফ্লাইটে যাত্রী উঠানোর পর কয়েক ঘণ্টা ভেতরেই কাটাতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরও নাস এয়ারওয়েজ কয়েক হাজার হজযাত্রীকে সীমাহীন দুর্ভোগে ফেলে দেশ বিদেশের মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। বিশেষ করে ফিরতি ফ্লাইটে জেদ্দা বিমানবন্দরে হাজীদের দিনের পর দিন ফেলে রেখে চলে যায়। নাসের পক্ষ থেকে কেউ তাদের খোঁজখবর নেয়নি। এমনকি তাদের খাবারও দেয়া হয়নি। এবার হজ ফ্লাইটের শুরুতেই নাস এয়ারওয়েজ যাত্রীদের নিয়ে রীতিমতো তামাশা করছে। তাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যাত্রীরা। উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় ফ্লাইটেই দেখা দেয় কযেক ঘণ্টা বিলম্ব।
শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্তব্যরত এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, নাস এয়ারওয়েজের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে শত শত হজযাত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করছেন। সোমবার সন্ধ্যায় নাস এয়ারওয়েজের একটি বিমান এওয়াই-৫৯১৯ নম্বরের ফ্লাইটটির প্রায় তিন শতাধিক নন-ব্যালটি হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নাস এয়ারওয়েজের ওই বিমানটি সময়মতো বিমানবন্দরে না পৌঁছায় সিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে।
বিকেল থেকে ওই ফ্লাইটের তিন শতাধিক যাত্রী বিমানবন্দরে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। নির্ধারিত সময়ে বিমানটি না ছাড়ায় হজযাত্রীরা ওই বিমানের কাউন্টারে গেলে বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, মঙ্গলবার ভোর ৫টায় বিমানটি ছাড়বে।
অপরদিকে সাড়ে ৪শ’ হজযাত্রী নিয়ে নাস এয়ারওয়েজের অপর একটি বিমান সোমবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সে ফ্লাইট সিডিউলও বাতিল করা হয়। ফলে ২ ফ্লাইটের কয়েক শতাধিক হজযাত্রী বিমানবন্দরে রো-ইতে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছেন।
জানতে চাইলে হজ টাস্কফোর্সের প্রধান জয়নাল আবেদীন তালুকদার মঙ্গলবার দুপুরে জনকণ্ঠকে বলেন, দুটো ফ্লাইটের ৯ শতাধিক হজযাত্রী বিলম্বের কারণে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফ্লাইটের যাত্রীদেরকে আগের রাতে হোটেলে নিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের ভোরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালের ফ্লাইটের সাড়ে ৪ শতাধিক যাত্রীকে বিমানের ওঠানোর পর কয়েক ঘণ্টা ভেতরে বসেই কাটাতে হয়েছে। বিকেলে সে ফ্লাইটটা জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। তবে এ সময় তাদের জানতেও দেয়া হয়নি কেন এত বিলম্ব হচ্ছে। এমনকি তখন তাদের প্রয়োজনীয় সেবাও দেয়া হয়নি।
এধরনের গাফিলতিতে হজ টাস্কফোর্স কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন তালুকদার উত্তর দেন আমি ইতোমধ্যে নাস এয়ারওয়েজের কাছে বিলম্বের কারণ জানতে চেয়েছি। তারা এখনও আমাকে জানায়নি। আগে দেখি কোন ধরনের গাফিলতি করেছে। টেকনিক্যাল কিছু হয়েছে কিনা সেটাও জানতে হবে।
এ পর্যন্ত কত হজযাত্রী সৌদিতে পৌঁছেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত গত ৮ দিনে মোট ১৬০৫৭ হজযাত্রী জেদ্দা পৌঁছেছেন। এঁদের মধ্যে বিমান ১৩১৭৮ জন, সৌদিয়া ২৪২৯ জন ও নাস ৪৫০ জন বহন করেছে।
জানতে চাইলে নাস এয়ারওয়েজের স্থানীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, আমি এখন মিটিং করছি। আপনার প্রশ্নের জবাব এখন দেয়া সম্ভব নয়। পরে কথা বলব।
এদিকে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা হজযাত্রীদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন বলে একজন হজযাত্রী জানিয়েছেন। এএসপি এহতেশাম বলেন, যাত্রীরা দুপুর পর্যন্ত বিমানবন্দরে আটকা ছিল। সীমাহীন দুর্ভোগের পর বিকেলে তাদের নিয়ে টেক অফ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.