বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের জন্য দায়ীদের ছাড় নয় : হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিলের প্রকৃত নেপথ্য অপরাধীদের শনাক্ত করার তদন্ত বন্ধ করবে না। কারণ যাঁরা এই অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে রয়েছেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না।


প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার রাতে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুক্তরাষ্ট্র শাখার কাউন্সিল ২০১২-তে ভাষণদানকালে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অর্থায়ন বন্ধের পেছনের অপরাধীদের আমরা ছাড় দেব না। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে আমরা সংকল্পবদ্ধ।'
শেখ হাসিনা জানান, তিনি এক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাঁকে এ সংকল্পের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বলেছি, এ বিষয়ে আমরা পূর্ণ তদন্ত চাই। আমি জানতে চাই, পূর্ববর্তী অর্থায়ন কেন বাতিল করা হয়েছিল? এই অর্থায়ন বন্ধের নেপথ্য ঘটনা জানার ব্যাপারে আমি অনড়।'
ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এক ব্যক্তি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদের জন্য অর্থায়ন বাতিলে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি ওই ব্যক্তির নাম বলতে চাই না। কারণ সবাই তাঁর নাম জানেন। ওই ব্যক্তির ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকার বয়স ছিল না; কিন্তু তিনি ওই পদে থাকতে চেয়েছিলেন।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ধরনের ঘুষ-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি- এটা কল্পনারও বাইরে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটা তারা শেষ করবে। আমরা এই তদন্তে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংককে তাদের প্রতিনিধি নিয়োজিত করতে বলেছি।'
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে এবং এ বিচার শেষ করা হবে। আমাদের অবশ্যই দেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হবে।'
আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনের শাসনের ভিত্তিতে নিরাপদ একটি বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং এসব আইনের নিরপেক্ষ ও যথাযথ প্রয়োগে সমর্থন দিতে শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সমতার নীতি নিশ্চিত করতে প্রধান প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকতর সক্রিয়তা ও প্রতিনিধিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার আইনের শাসনের ওপর উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় এ কথা বলেন।
সাধারণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় শেখ হাসিনা আরো বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক যে আইনের শাসনের ভিত্তিতে নিরাপদ এক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা কাঠামো ও পরিধি এবং আন্তর্জাতিক আইনের সমপ্রয়োগ ও বাস্তবায়ন এখনো অধরা রয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তথ্য কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, আইন কমিশন ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার সন্ত্রাসবিরোধী ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে ১৪টি আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘদিনের অনেক সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মোট জনশক্তির অর্ধেকই হবে নারী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সাল নাগাদ প্রশাসন, চাকরি, নেতৃত্বসহ বাংলাদেশের সব কর্মক্ষেত্রের অর্ধেক প্রতিনিধিত্ব করবে নারীরা। তিনি বলেন, 'আমি সংসদে ও নেতৃত্বের সব পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ব্যাপারে অঙ্গীকার করছি।'
প্রধানমন্ত্রী সোমবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্কলে হোটেলে 'সম-অংশীদারিত্বের ভবিষ্যৎ' শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক হবে নারী এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও গৃহে নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য আইন প্রয়োগের জন্য আরো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শেখ হাসিনা বলেন, 'যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে; কিন্তু এখনো তা যথেষ্ট নয়।'
মার্কিন প্রেসিডেন্টের দেওয়া সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর পত্নী ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামার দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৭তম অধিবেশনে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে ওয়ালডর্ফ অ্যাসটোরিয়া হোটেলে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.