লবণ আমদানি উন্মুক্ত ॥ বিদেশ থেকে ১০ হাজার মে. টন আনার অনুমতি by এম শাহজাহান

সাধারণ লবণ আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একজন মিলমালিক সর্বোচ্চ ১০ হাজার মে. টন লবণ আমদানি করতে পারবেন। আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ লবণ আমদানি উন্মুক্ত থাকবে। এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতর।


বাজারে লবণের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। মঙ্গলবার দেয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘লবণ আমদানি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত (এসআরও নং ২৭৯/২০১১) ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১-এর কার্যকারিতা আগামী ১১ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।’ শর্ত হিসেবে, একজন মিলমালিক পরিশোধিত ভোজ্য লবণ আমদানিকারক সর্বোচ্চ ১০ হাজার মে. টন লবণ আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে পারবেন। এছাড়া লবণ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমদানিকারককে ঋণপত্রের সকল তথ্য আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অবহিত করতে হবে। আমদানিতব্য লবণ আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে জাহাজীকরণ করতে হবে। লবণ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে মন্ত্রণালয়ে টানাপড়েন লক্ষ্য করা যায়।
প্রথমে প্রতি মিলমালিকের ৫ হাজার মে. টন করে লবণ আমদানির জন্য সিদ্ধান্ত গহণ করা হলেও সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন বাণিজ্য সচিব মোঃ গোলাম হোসেন। প্রতি মিলমালিকের ২০ হাজার মে. টন করে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুমতি চান। মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে আমদানির পরিমাণ ১০ হাজারে নামিয়ে আনেন।
অন্যদিকে, লবণ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি নতুন ভাবে কাজ শুরু করেছে। প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনে লবণের প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত না হওয়ায় ফের তদন্তের নির্দেশ দেন বাণিজ্য সচিব। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য মঙ্গলবার বলেন, তদন্তে কোন কোন বিষয় তুলে আনতে হবে প্রথমে তা স্পষ্ট করা না হলেও এবার তা চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে সেই অনুসারে কাজ চলছে। প্রথম প্রতিবেদনে লবণ উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও বাজারমূল্য পরিস্থিতি উঠে আসে। প্রথম লবণ প্রতিবেদনে দাম নিয়ে নয়-ছয় করার বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভ্যাকুয়াম ইভ্যাপোরেশন পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রতিকেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৪ টাকা, মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রতিকেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২১ টাকা, সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রতিকেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫ টাকা এবং পরিশোধিত খোলা লবণের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সাড়ে ৯ টাকা হওয়া উচিত।
বাজারে এসব লবণের কেজিপ্রতি দাম বেশি নেয়া হচ্ছে ৮-১০ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কেএম আব্দুল ওয়াদুদকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির মধ্যে অপর দু’জন ছিলেন আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের উপ-পরিচালক একেএম মাহমুদুল হাসান খান এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান। গত ২৯ আগস্ট প্রথম লবণ প্রতিবেদন বাণিজ্য সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
জানা গেছে আগামী কোরবানি ঈদ সামনে রেখে দেশে সাধারণ লবণের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ওই সময়ে লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা যাতে অধিক মুনাফা তুলে নিতে না পারে সেজন্য দ্রুত লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দেশে এখন লবণের মজুত সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। আমদানির অনুমতি মেলায় ব্যবসায়ীরা লবণের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির সাহস দেখানোর সুযোগ পাবে না বলে মনে করছেন লবণ ব্যবহারকারীরা। একই সঙ্গে আগামী কোরবানির সময় যেন লবণের দাম না বাড়ে সে ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে মনে করেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে চামড়া শিল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা রেজাউল করিম আনসারী জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতি বস্তা লবণ গত বছর সাড়ে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এক বস্তা লবণ পেতে গুণতে হচ্ছে ৯শ’ থেকে হাজার টাকা। একটি গরু’র চামড়ায় ৭ থেকে ১০ কেজি লবণের প্রয়োজন। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানে অর্ধেক লবণও ব্যবহার হচ্ছে না। এ বছর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কসাই ও মাঠ পর্যায়ের ছোট বেপারীরা লবণ ব্যবহার কমিয়ে দেবে। ফলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে লবণ কম ব্যবহার হওয়ার কারণে বহু চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোরবানিতে লবণের দাম না কমানো হলে চামড়া শিল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চামড়া রফতানি কমে যাওয়ার জন্য এটিও একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.