সাধারণ বীমায়ও কেঁচো খুঁড়তে সাপ-এ প্রবণতা রুখতে হবে

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতো জালিয়াতির খবর বেরিয়ে আসছে। কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না আর্থিক খাত। এবার বীমা খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমায় জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে।


কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অডিট থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারাই এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্তে নেমেছে দুদক। বীমা খাতের বেসরকারি কয়েকটি কম্পানিও এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এমনিতেই আমাদের দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে একের পর এক জালিয়াতির ঘটনা এই খাতটিকে যেন ডুবিয়ে দিতে চলেছে। সরকারের প্রথম দিকে শেয়ারবাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ আশার সঞ্চার করলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে ধস নামে। অনেককেই সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসতে হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো কবে বাস্তবায়িত হবে, তা কারো জানা নেই। শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অনেকের নামই শোনা গেছে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শেয়ার কেলেঙ্কারি দেশে এটাই প্রথম নয়। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আগের আমলেও একবার শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি নিয়েও কম পানি ঘোলা করা হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানটি জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে, এমন খবর প্রচার হওয়ার পর প্রাথমিক তদন্তে ওই খবরের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি বা হয়নি। হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোর জালিয়াতির নানা তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষ এক ধরনের আস্থাহীনতায় থেকে ভাবছে, শেষ পর্যন্ত কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে?
দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরাও বলতে চাই। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা উচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো অনিয়ম দেখা গেলে শুরুতেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের ফাঁক দিয়ে কেউ যেন বেরিয়ে যেতে না পারে সেদিকেও নজরদারি দরকার। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলার বিষয়টিও জড়িত। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত। আমরা আশা করব, দেশের আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে সব অনিয়ম দূর করা হবে। নিশ্চিত করা হবে আর্থিক অগ্রগতি ও দেশের মানুষের কল্যাণ। সাধারণ বীমায় যে অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে জড়িতদের যথোপযুক্ত শাস্তি হোক- এটাই আমাদের চাওয়া। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এ ব্যাপারে দ্রুত ও কার্যকর তদন্ত হবে। সে তদন্ত 'বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো' হলে চলবে না।

No comments

Powered by Blogger.