দেখা মিলেছে ঈশ্বর কণার! by সজীব সরকার

হাজগৎ সৃষ্টির মূলে রয়েছে একেবারে সূক্ষ্ম কিন্তু শক্তিশালী এক অস্তিত্ব। এর কারণেই পদার্থে ভর (মাস) যুক্ত হয়। আর পদার্থের ভরযুক্ত হওয়াটাই মহাজগৎ সৃষ্টির মৌলিক ও অন্যতম প্রধান শর্ত_এখন পর্যন্ত এ তত্ত্বই শাসন করছে পুরো বিশ্ব। বিজ্ঞানীরা এ 'অস্তিত্বটির' নাম দিয়েছেন হিগস বোসন বা গড পারটিক্ল। বাংলায় বলা হচ্ছে ঈশ্বর কণা। তত্ত্বে এ 'অস্তিত্বের' অস্তিত্ব থাকলেও অতি গুরুত্বপূর্ণ এ 'জিনিসটির' সন্ধান এত দিন পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল


মঙ্গলবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ঈশ্বর কণাকে প্রায় গ্রেপ্তার করেই ফেলেছেন। এর অস্তিত্বের চিহ্ন তাঁরা দেখতে পেয়েছেন। কোথায় লুকিয়ে আছে এ কণা, তাঁরা সে জায়গাটিও চিহ্নিত করে ফেলেছেন। তবে পুরোপুরি গ্রেপ্তারের আগে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন না। এ জন্য হয়তো আরো কয়েক মাস সময় লাগবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় লার্জ হাইড্রন কলাইডারে (এলএইচসি) বিজ্ঞানীরা ঈশ্বর কণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। গবেষণাটি করছে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সিইআরএন বা সার্ন)। সেখানকার বিজ্ঞানীরাই গতকাল এসব কথা জানান।
ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব মেনে নিলে গোটা মহাজগতের সৃষ্টি ও বিকাশসহ পদার্থবিদ্যার তাবৎ তত্ত্ব ও সমস্যার সহজ সমাধান সম্ভব। কিন্তু ঈশ্বর কণা বলতে যা বোঝানো হচ্ছে, এমন কিছুর অস্তিত্ব সত্যিই আছে কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই মহাজগৎ সৃষ্টি ও পদার্থবিদ্যার অনেক সমস্যাই এত দিন রয়ে গেছে অবিসংবাদিত কোনো ব্যাখ্যার অতীত হয়েই। তবে সে সমাধান এত দিনে হয়তো হতে চলল।
বেশ কিছুদিন ধরেই ঈশ্বর কণার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, গবেষকরা এবার এর অস্তিত্ব আছে কি নেই_এ বিষয়ে চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত জানাবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গতকাল জেনেভায় সার্নের গবেষকরা এ কণার অস্তিত্বের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত পাওয়া ফল প্রকাশ করেন। তবে তাঁরা এ-ও বলছেন, বিষয়টি সম্পর্কে চূড়ান্ত একটি সিদ্ধান্ত টানার আগে আরো নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
লার্জ হাইড্রন কলাইডারের স্থাপনার অভ্যন্তরে ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের তলদেশে ১৭ মাইল দীর্ঘ একটি চক্রের (রিং) ভেতর প্রোটনের দুটি রশ্মিকে নিক্ষেপ করেন। প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে সেগুলো একটি আরেকটির ওপর আছড়ে পড়ে। তত্ত্ব ও প্রত্যাশা অনুযায়ী ওই সংঘর্ষের ফলে রহস্যময় সেই ঈশ্বর কণার উদ্ভব ঘটার কথা। গবেষকরা জানিয়েছেন, সেখানে তাঁরা ওই কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য পেয়েছেন। তাঁদের তথ্য সঠিক হলে, মহাবিস্ফোরণের (বিগ ব্যাং) সময় ঈশ্বর কণার জন্ম হয় এবং এই কণাই অন্য সব পদার্থের মধ্যে ভরযুক্ত হওয়ার গুণটি আরোপ করে। পরে ওইসব পদার্থের সনি্নবেশেই একে একে মহাজগৎ ও এর উপাদানগুলো সৃষ্টি হয়েছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, বিশ্বজগৎ সৃষ্টির জন্য যে উপাদান দরকার ছিল ওইসব উপাদানের পেছনে মূল অবদান রেখেছে এই ঈশ্বর কণা। কিন্তু বিজ্ঞানের যাবতীয় আবিষ্কার থেকে এ কণার অস্তিত্বের প্রমাণ ছিল লুক্কায়িত। তাই পদার্থবিদ্যার বড় সমস্যাগুলোর ব্যাখ্যা দিতে হতো এ কণার অস্তিত্ব অনুমান করেই।
এ কণার অস্তিত্ব ভুল প্রমাণিত হলে আধুনিক পদার্থবিদ্যার পুরো কাঠামোই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। এমন অবস্থায় গড পারটিক্ল বা ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের প্রশ্নে একটি সমাধানে আসা যারপরনাই জরুরি। এ জন্য এ পরীক্ষায় ঈশ্বর কণার একটি অনুমিত আকার শনাক্তের চেষ্টা করা হয়েছে। গবেষণার পর বলা যাচ্ছে, গবেষকদের এত দিনের অনুমান এখন একটি বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সূত্র : দ্য ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর, বিবিসি, দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.