স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা সংকুচিত করা হচ্ছে-মতবিনিময় সভায় বক্তারা

ন্নত বিশ্বে শক্তিশালী ও কার্যকর স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হয়। অথচ বাংলাদেশে উল্টো_ সংবিধান, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও জনমতকে উপেক্ষা করে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা সংকুচিত করা হচ্ছে। নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে অনির্বাচিত সরকারি আমলাকে এবং সাংসদদের করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা ও সাধারণ


মানুষকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা থেকে সাংসদদের সরিয়ে নিয়ে ও নির্বাহী ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার 'বিকেন্দ্রীকরণ ও বর্তমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম এ সভার আয়োজন করে। ফোরামের চেয়ারপারসন ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংসদ ড. মোঃ আকরাম হোসেন চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট
হারুণ-অর-রশিদ হাওলাদারসহ স্থানীয় সরকারের অনেক প্রতিনিধি। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়ক মহসিন আলী। সভায় বক্তারা সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন সংশোধনী আইন বাতিলের আহ্বান জানান।
মূল প্রবন্ধে উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন সংশোধনী আইনের সীমাবদ্ধতা উল্লেখের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান অকার্যকারিতার চিত্রও তুলে ধরা হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফোরামের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু সুপারিশ হলো_ উপজেলা পরিষদ আইনে উপদেষ্টার ভূমিকার পরিবর্তে স্থানীয় উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সাংসদদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করা। নির্বাচিত প্রতিনিধির কর্তৃত্বের বিধান রেখে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা। আইন অনুযায়ী সরকারি সেবাগুলো উপজেলা পরিষদ বরাবর প্রকৃত অর্থে ন্যস্ত ও কার্যকর করা। উপজেলা পরিষদের স্থানীয় সম্পদ আহরণে এখতিয়ার বৃদ্ধি এবং যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রেখে সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রদান করা। সিটি করপোরেশনগুলোকে নগর সরকার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইনের যথার্থতা নিশ্চিত করা ও করপোরেশনের কাছে নাগরিক সেবাগুলো ন্যস্ত করা। সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে আইনের অসংগতিগুলো দূর করার লক্ষ্যে সংবিধানের আলোকে প্রশাসনিক, আর্থিক ও রাজনৈতিকসহ সমন্বিত 'গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালা' প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করা। বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালা প্রণয়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ ও জনচাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি বিকেন্দ্রীকরণ কমিশন গঠন করা। সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

No comments

Powered by Blogger.