স্মরণীয় ম্যাচ-প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জয় এবং অসাধারণ প্রত্যাবর্তন

বাবা লেই ক্লাইস্টার্স বেলজিয়াম জাতীয় ফুটবল দলে খেলেছেন ৪০ ম্যাচ। মা এলস ভানদেকায়েটসব্যাক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জাতীয় জিমন্যাস্টিকসে। তাই মেয়েদের টেনিসের সাবেক বিশ্বসেরা কিম ক্লাইস্টার্স প্রায়ই বলেন, 'আমার পা ফুটবলার বাবার মতো আর ছন্দ জিমন্যাস্ট মায়ের মতো।' শক্তি আর সৌন্দর্যের মিশেলে কোনো গ্র্যান্ড স্লাম না জিতেই ২০০৩ সালে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে পেঁৗছেছিলেন এ বেলজিয়ান।


সে বছরই এককের পর নাম্বার ওয়ান র‌্যাংকিংয়ে পৌঁছান দ্বৈতেও। তার আগে একক ও দ্বৈতের শীর্ষে নাম লেখানোর কীর্তিটা ছিল কেবল মর্টিনা নাভ্রাতিলোভা,আরাঙ্কা সানচেজ ভিকারিও,মার্টিনা হিঙ্গিস ও লিন্ডসে ড্যাভেনপোর্টের।
এমন সাফল্যের পরও গ্র্যান্ড স্লামের একক শিরোপা না জেতায় সমালোচিত হচ্ছিলেন ক্লাইস্টার্স। ২০০১ ও ২০০৩ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে পেঁৗছলেও ছেঁড়েনি শিরোপার শিকেটা। অবশেষে অতৃপ্তিটা দূর হয় ২০০৫-এর ইউএস ওপেনে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনাস উইলিয়ামসকে ৪-৬, ৭-৫, ৬-১ ও সেমিফাইনালে মারিয়া শারাপোভাকে হারান ৬-২, ৬-৭, ৬-৩ গেমে। ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পান মেরি পিয়ার্সকে। কোয়ার্টার ও সেমিফাইনালে ১টি করে সেট হারলেও ফাইনালে শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ক্লাইস্টার্স। ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১২০ মাইল বেগের সার্ভিস, অসাধারণ রিটার্ন আর কোর্ট কাভারিংয়ের মুখে দাঁড়াতেই দেননি পিয়ার্সকে। ৬-৩, ৬-১ গেমে ম্যাচটা জিতে প্রথমবারের মতো পান গ্র্যান্ড স্লাম একক শিরোপা জয়ের স্বাদ।
ম্যাচটা তাই স্মরণীয় হয়ে আছে ক্লাইস্টার্সের ক্যারিয়ারে। গ্র্যান্ড স্লামের গেরোটা কাটায় আরো অনেক শিরোপারই প্রত্যাশা করছিলেন ভক্তরা। কিন্তু ২০০৭ সালে সবাইকে অবাক করে টেনিস থেকে বিদায় নিয়ে নেন এ বেলজিয়ান সুন্দরী। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বিশ্বসেরা লেটন হিউইটের সঙ্গে আংটি বদল হওয়ার পর সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছিল। এরপর সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্রের বাস্কেটবল খেলোয়াড় ব্রায়ান লিনচকে বিয়ে করে পুরোপুরি সংসারি হওয়ার। কিন্তু ২০০৮ সালে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়ে সিদ্ধান্তটা বদলে আবার ফিরে আসেন টেনিসে।
মা হওয়ার পর মুটিয়ে যাওয়ায় র‌্যাকেটের ধারে মরিচা পড়ারই কথা। সেটা হয়নি। বরং প্রত্যাবর্তনের পরই বেশি সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালের মার্চে ফেরার ঘোষণা দিয়ে মাত্র দুটি টুর্নামেন্ট খেলে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে সুযোগ পান ইউএস ওপেনে। সুযোগটা পেয়েই করেন বাজিমাত। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা টেনিসটা খেলে প্রথম ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন ইউএস ওপেন। ১৯৮০ সালে ইভান গুলাগংয়ের পর মা হিসেবে সেটাই কারো প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা।
সেই টুর্নামেন্টের প্রতিটা ম্যাচই স্মরণীয় ক্লাইস্টার্সের জন্য। তবে হৃদয়ে গেঁথে আছে সেমিফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামস আর ফাইনালে ক্যারোলিন ওজনিয়াকির বিপক্ষের ম্যাচ দুটো। দিনারা সাফিনা সে সময়ের নাম্বার ওয়ান হলেও র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেরেনা দাবি করতেন, সত্যিকারের সেরা তিনিই। তারপর আবার ইউএস ওপেনটা হচ্ছিল সেরেনার চেনা আঙিনায়। অথচ সেরেনাকে পাত্তা না দিয়ে প্রথম সেটটা ৬-৪ গেমে জয়ের পর দ্বিতীয় সেটেও সমান তালে লড়ে স্কোরটা করেছিলেন ৫-৫। স্নায়ুর আসল পরীক্ষাটা তখনই। পরপর দুটো গেম জিতে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ক্লাইস্টার্স। ৬-৪, ৭-৫ গেমে জিতে ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পান ওজনিয়াকিকে।
ওজনিয়াকি তখনো র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে পেঁৗছাননি। তবে প্রথম ডেনিশ হিসেবে কোনো গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে ওঠায় অনেকেই ফেভারিট ভেবেছিলেন তাঁকে। বিপরীতে ক্লাইস্টার্সের জন্য ম্যাচটা ছিল আবেগ আর সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করার। সেটা তিনি ভালোভাবেই করেছেন ৭-৫, ৬-৩ গেমে ম্যাচ জিতে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১০ সালের ইউএস ওপেনের পর জিতেছেন এ বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনও। এমনকি পেঁৗছেছিলেন র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষেও। চোটের কারণে কিছুদিন বাইরে থাকার পর চলতি মাসে কোর্টে ফিরেছেন আবারও। ফিরেই একটি প্রদর্শনী ম্যাচে হারিয়েছেন র‌্যাংকিংয়ে মেয়েদের বিশ্বসেরা ওজনিয়াকিকে। ক্লাইস্টার্সের যে আরো চমক দেখানোর বাকি আছে বোঝা যায় এ থেকেই। ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.