দেয়াং পাহাড়ে হচ্ছে 'পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়' by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাচীন চৈত্যভূমি নামে খ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামে জ্ঞানতীর্থ পণ্ডিত বিহার (প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়) পীঠভূমিতে 'পণ্ডিত বিহার আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়' প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এই স্থানটি দশম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধশিক্ষার জ্ঞানপীঠ ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরী গ্রামের পাশে দেয়াং পাহাড় প্রাচীন জ্ঞানতীর্থ। এখানে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে


অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে। বহির্বিশ্বেও বাড়বে দেশের সুনাম। একই সঙ্গে নতুন করে বৌদ্ধ বিশ্বের দেশ চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সেতুবন্ধ আরো দৃঢ় হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য-ভাষা বিভাগের (সংস্কৃত ও পালি) অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু প্রাচীন চৈত্যভূমি নামে খ্যাত চট্টগ্রামে ওই নামে বৌদ্ধদের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) দায়িত্ব দেয়। এমন নির্দেশনার পর অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলীর নেতৃত্বে ইউজিসি দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন ইউজিসির উপসচিব ফেরদৌস জামান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানটি পরিদর্শনের পরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন প্রণয়ন করা হবে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আতফুল হাই শিবলী কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য মতামত দিতে ইউজিসি থেকে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি শিগগিরই কাজ শুরু করবে।
ড. জিনবোধি ভিক্ষু গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, অধুনা বৌদ্ধরা এ দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। নানামুখী সমস্যায় তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বৌদ্ধ পরিবারের অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ভিড় জমায়। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের উচ্চশিক্ষার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনের নথিতে বলা হয়, স্মরণাতীতকাল থেকেই বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতিচর্চার পীঠস্থান চট্টগ্রাম। বঙ্গদেশে পাল যুগকে বৌদ্ধধর্মের পরিব্যাপ্তিতে স্বর্ণযুগ বলা হয়েছে। সেই সময় থেকেই চট্টগ্রামের পণ্ডিত বিহার তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অন্যতম জ্ঞানতীর্থ হিসেবে পরিচিত লাভ করে।
আবেদনে আরো বলা হয়, বাংলা সাহিত্যে আদিগ্রন্থ চর্যাপদ বা চর্যাগীতি-চুরাশি সিদ্ধাচার্যদের অমূল্য সৃষ্টি। সেই চর্যাপদ থেকে বাংলা ভাষার গোড়াপত্তন। বাংলা আজ জাতীয় ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। আদিগ্রন্থ চর্যাগীতি তথা বাংলা ভাষার যেখানে গোড়াপত্তন হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক জ্ঞানতীর্থ পণ্ডিত বিহারে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, মহাপণ্ডিত শীলভদ্র, শাস্ত্রজ্ঞ, প্রজ্ঞাভদ্র, পণ্ডিত শান্তরক্ষিত প্রমুখ প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের স্মৃতি চিরঞ্জীব করা সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.