পরিচালকরা শেয়ার কিনবেন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ১ হাজার ৪৯১ পরিচালকের কাছে ২ শতাংশের কম শেয়ার রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৯২ জন পরিচালকের শেয়ার ১ শতাংশের কম। পরিচালকদের কাছে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের কম শেয়ার থাকা কোম্পানির সংখ্যা ৩৮টি। মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত তালিকা থেকে উপরোক্ত তথ্য পাওয়া গেছে।


তালিকায় থাকা এ ১ হাজার ৪৯১ পরিচালককে ছয় মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনে শেয়ারের হার ২ শতাংশ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে ৩৮টি কোম্পানির পরিচালকদের শেয়ার সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশে ওঠাতে শেয়ার কিনতে হবে। ইতিমধ্যে পরিচালকরা শেয়ার কেনা শুরু করেছেন। তার প্রভাবও বাজারে পড়েছে। গতকাল সূচক বেড়েছে ২১৩ পয়েন্ট।
ডিএসই সূত্র জানিয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৪টি কোম্পানি পরিচালকদের শেয়ার ধারণের তথ্য জমা দেয়নি এবং ১৯টি কোম্পানির জমা দেওয়া তথ্যে ভুল রয়েছে। তাই এ ৩৩টি কোম্পানিকে এ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড
এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়, কোম্পানির পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এ ছাড়া পরিচালকদের আলাদাভাবে নূ্যনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে তিনি পরিচালক পদ হারাবেন এবং যার কাছে ৫ শতাংশ শেয়ার আছে তিনি পরবর্তী বার্ষিক সভায় পরিচালক মনোনীত হবেন।
এসইসির নির্দেশনা মেনে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কিনতে শুরু করেছেন তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকরা।
মঙ্গলবার ৩টি ব্যাংকসহ ৬টি কোম্পানির পরিচালকরা পুঁজিবাজার থেকে তাদের কোম্পানির প্রায় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
ডিএসই ওয়েবসাইটে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেওয়া পরিচালকরা হলেন_ উত্তরা ব্যাংকের বদরুন্নেসা ইসলাম (৬৫ হাজার শেয়ার), সিটি ব্যাংকের ইভানা ফাহমিদা (৩ লাখ), আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়াজ আহমেদ (১৪ লাখ), পিপলস ইন্স্যুরেন্সের মোঃ আলী হোসেন (৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৪), তা'কাফুল ইন্স্যুরেন্সের মোঃ মহিউদ্দিন (৫০ হাজার) এবং অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের আবদুল কাদের খান (১৪ হাজার)। এসব পরিচালক আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে বাজারদরে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ার কিনবেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার দুটি কোম্পানির ৩ পরিচালক ৪ লাখ ৩৫ হাজার এবং রোববার দুটি কোম্পানির এক পরিচালক পুঁজিবাজার থেকে তাদের কোম্পানির ১০ লাখ শেয়ার বাজারমূল্যে কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।
যে সব পরিচালকের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ ২ শতাংশের কম রয়েছে তারা প্রত্যেককে পরিচালক পদ ধরে রাখতে হলে গতকালের বাজার মূল্যের হিসাবে অন্তত ২৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার কিনতে হবে। অন্যদিকে, যে ৩৮টি কোম্পানির পরিচালকের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের কম রয়েছে, সেসব কোম্পানির পরিচালককে এসইসির নির্দেশনা মানতে কমপক্ষে ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার কিনতে হবে।
এদিকে পরিচালকদের শেয়ার কেনার বিষয়কে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে গত রোববার পর্যন্ত টানা দরপতন হলেও গত সোমবার থেকে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের উভয় শেয়ারবাজারে প্রায় সব শেয়ারের দরবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে শেয়ারদর, মূল্যসূচক ও লেনদেন। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ২৫৯টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ২৪৯টিরই দর বেড়েছে। সাধারণ সূচক ২১৩ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়ে ক্লোজ হয় ৫০৬৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৩২৭ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের শেয়ার। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতেও লেনদেন ও শেয়ার দরবৃদ্ধিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
নূ্যনতম শেয়ার ধারণ সম্পর্কিত নির্দেশনা জারির পর তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে নূ্যনতম শেয়ার ধারণ করতে হবে। ব্যর্থতায় পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তারা পরিচালক পদ হারাবেন। কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার থাকলে কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যু বা পুনঃআইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ পাবেন না।
কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডারদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব এবং কোম্পানি পরিচালনায় আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এসইসি এ নির্দেশনা জারি করে। তবে বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা জানান, পতনোন্মুখ শেয়ারবাজার পরিস্থিতি সামাল দিতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এ নির্দেশনা জারি করে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে শেয়ার চাহিদা সৃষ্টির পাশাপাশি বাজারে লেনদেনযোগ্য শেয়ার কমবে। উভয় প্রভাব সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ার দর ও লেনদেন বাড়াতে সহায়তা করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও ডিএসইর সাবেক সিইও সালাউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, এ সিদ্ধান্ত কয়েক মাস ধরে বাজারের অস্বাভাবিক দরপতন রোধ ও লেনদেন বন্ধ করতে সহায়তা করবে। লেনদেন ও শেয়ার দরবৃদ্ধি পেতে থাকলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান আস্থার সংকট কমাতেও সহায়তা করবে।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শূন্য বা খুবই অল্প পরিমাণ শেয়ার ধারণকারী পরিচালকের সংখ্যা ১৬৬ জন। এর মধ্যে ১৩ জন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিতে মনোনীত পরিচালক। যাদের শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক নয়। দশমিক ১০ শতাংশ বা এর কম শেয়ার রয়েছে ৪১৪ জনের। দশমিক ৫০ শতাংশ বা এর কম শেয়ার রয়েছে ৭৭৩ জনের। ১ শতাংশ বা এর কম শেয়ার রয়েছে এক হাজার ৯৫ জনের। দেড় শতাংশ বা তার কম শেয়ার রয়েছে এক হাজার ২৮৪ জনের। পৌনে দুই শতাংশ বা এর কম শেয়ার রয়েছে এক হাজার ৩৮৯ জনের।
প্রাপ্ত শেয়ার ধারণ সম্পর্কিত তথ্য ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মূলধন বিবেচনা করে দেখা গেছে, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ কোম্পানির পরিচালকদের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ এতটাই কম যে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা শেয়ার কিনতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
যেসব কোম্পানির পরিচালকদের মোট শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের কম রয়েছে, সেগুলো হলো শাইনপুকুর সিরামিক্স (শূন্য শতাংশ), ইনটেক অনলাইন (২ দশমিক ৫৬ শতাংশ), বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস (২ দশমিক ৭০ শতাংশ), এপেক্স এডেলকি ফুটওয়্যার (৫ দশমিক ১৯ শতাংশ), ফু-ওয়াং ফুড (৬ দশমিক ১৫ শতাংশ), ইস্টার্ন ব্যাংক (৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ), উত্তরা ব্যাংক (৮ দশমিক ১৯ শতাংশ), ফাইন ফুডস (৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ), মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স (৯ দশমিক ২৬ শতাংশ), আজিজ পাইপস (১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ), পূবালী ব্যাংক (১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ), ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (১২ দশমিক ৪৪ শতাংশ), অগি্ন সিস্টেমস (১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ), রেনেটা (১৩ শতাংশ), বেক্সিমকো (১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ), মুন্নু সিরামিক্স (১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ), বিডি থাই (১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ), অ্যাকটিভ ফাইন (১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ), ফু-ওয়াং সিরামিক্স (১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ), ইনফরমেশন সার্ভিস নেটওয়ার্ক (১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ), কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স (১৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ), ফার্স্ট লিজ ইন্টারন্যাশনাল (১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ), সালভো কেমিক্যাল (২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ), স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক (২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ), কনফিডেন্স সিমেন্ট (২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ), আলহাজ টেক্সটাইল (২৪ দশমিক ০২ শতাংশ), বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স (২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ), দেশবন্ধু পলিমার (২৫ শতাংশ), ম্যাকসন্স (২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ), সিনোবাংলা (২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ), মেট্রো স্পিনিং (২৬ দশমিক ২১ শতাংশ), বারাকাতুল্লাহ ইলেক্ট্রড (২৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ), সিএমসি কামাল (২৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ), সাউথইস্ট ব্যাংক (২৭ দশমিক ২২ শতাংশ), সাফকো স্পিনিং (২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ), মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স (২৯.৪৮ শতাংশ)।

No comments

Powered by Blogger.