অস্ট্রেলিয়া দল এখন খারাপের খারাপ!

স্ট্রেলিয়া সফরে আসা নিউজিল্যান্ড দলের সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার হচ্ছেন ক্রিস মার্টিন। সাঁইত্রিশে পা রাখতে যাওয়া এ ক্রিকেটারের স্মৃতিতে হয়তো কোনো না কোনোভাবে সুযোগ হয়েছিল প্রায় ২৬ বছর আগের সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হওয়ার। হয়তো শুনেছেন বেতার ধারাভাষ্য, দেখেছেন খবরের কাগজে, বলাবলি করতে শুনেছেন লোকজনকে। তাসমান সাগর পারের প্রতিবেশীদের যে তাদের মাঠেও হারানো যায়, এ স্মৃতিটা অন্তত ছিল মার্টিনের।


ডগ ব্রেসওয়েলের তো সেটাও ছিল না। ক্রিকেটার চাচা জন ব্রেসওয়েলের কাছে পার্থ টেস্টের সেই গল্প শুনেছেন, মনে মনে কল্পনায় মাঠের সবুজে সাদা পোশাকের একদল ক্রিকেটারকে সিরিজ জয়ের উল্লাসে ভাসতে দেখেছেন। কিন্তু কদিন আগেই একুশে পা রাখা এ তরুণ কখনো চাক্ষুষ দেখতে পাননি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিউজিল্যান্ডের টেস্ট জয়। সেই আক্ষেপ থেকেই বোধহয় হোবার্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মানুষ থেকে বদলে 'কামান' হয়ে গিয়েছিলেন, হাত থেকে বলের বদলে ছুড়েছেন গোলা। যার আঘাতে হতশ্রী অস্ট্রেলিয়ার শেষ দর্পটাও চূর্ণ। ঘরের মাঠেই এখন তাদের হারিয়ে অ্যাশেজ নিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকাও কপালে এঁকে দেয় কলঙ্কতিলক। সবশেষ প্রতিবেশীদের কাছেও মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি।
অ্যাশেজ গিয়েছে, প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বানিয়ে ফেলা ওয়ানডে বিশ্বকাপ হয়েছে হাতছাড়া। তখনো সমালোচনায় ফেটে পড়েছিল গণমাধ্যম, কিন্তু বিস্ফোরণের তীব্রতাটা বোধহয় এত বড় মাত্রায় ছিল না। সিডনির ডেইলি টেলিগ্রাফ যেমন ছত্রখান হওয়া স্টাম্পের সামনে নাথান লিওনের ছবির নিচে লিখেছে, 'খারাপের খারাপ'। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের ভাষায় তো রীতিমতো কথার চাবুক, 'একসময় এরাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটের রাজা, কিন্তু এখন টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের আট নম্বরে থাকা নিউজিল্যান্ডকেও তারা হারাতে পারে না।' ধারাভাষ্যকাররাও রীতিমতো বাক্যবাণে জর্জরিত করেছেন শূন্য রানে আউট হওয়া মাইকেল ক্লার্ক ও মাইক হাসিকে। টেলিগ্রাফের সাংবাদিক রবার্ট ক্র্যাডক লিখেছেন, 'ব্যাপারটা দুঃখজনক যে হারটা ক্রমেই অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।' দ্য অস্ট্রেলিয়ানে লেখা হয়েছে, 'টপ অর্ডার আবারও সুইং বোলিং সামলাতে না পেরে ধসে গেল। বড়দিনের পরে ভারতের সঙ্গে চার টেস্টের সিরিজের জন্য ব্যাপারটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।' কথায় কুড়ালের মতো ধার ছিল সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের, 'এ গ্রীষ্মে আবার একটা টেস্ট সিরিজ খেলতে নামবে অস্ট্রেলিয়া, তাদের সব অকেজো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে, কিন্তু মনে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হারের পরেও ইনভেরারিটি তার খৰে শান দেবেন না।'
অন্যদিকে কদিন আগেই রাগবি বিশ্বকাপ জেতা নিউজিল্যান্ডে আরো একটি আনন্দের উপলক্ষ এনে দেওয়ায় 'কিউই'দের নিয়ে গণমাধ্যমে বইছে প্রশংসার স্রোত। বিশেষ করে বড়দিনের আগে এমন উপহার দেওয়ার জন্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড তো রূপকথার গল্প অবলম্বনে ডগ ব্রেসওয়েলের নামই দিয়ে দিয়েছে 'ওজ এর জাদুকর।' নিউজিল্যান্ডের সরকারি বেতারে বলা হচ্ছে, 'বড়দিনে এটা ছিল ব্ল্যাকক্যাপদের উপহার।' হোবার্টে অধিনায়ক থাকা রস টেলরের কথাটাই অবশ্য ধ্বনিত হচ্ছে ইথারে। নিউজিল্যান্ডের আদিবাসী বংশোদ্ভূত এ ক্রিকেটার তো বলেই দিয়েছেন, 'এ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডবাসীর জন্য বড়দিনের আগাম উপহার।' এএফপি

No comments

Powered by Blogger.