পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষ জন্মগতভাবেই আল্লাহর আনুগত্যে অঙ্গীকারবদ্ধ

৭০. ওয়াল্লাযীনা ইউমাচ্ছিকূনা বিলকিতা-বি ওয়া আক্বা-মুস সালাতা; ইন্না লা-নুদ্বীউ' আজরাল মুছ্বলিহীন।
১৭১. ওয়া ইয নাতাক্বনা ল্জাবালা ফাওক্বাহুম কাআন্নাহূ যুল্লাতন ওয়া যুন্নূ আন্নাহূ ওয়া-কি্বউম্ বিহিম; খুযূ মা আ-তাইনা-কুম বিক্বুওয়্যাতিন ওয়ায্কুরূ মা- ফীহি লাআ'ল্লাকুম তাত্তাক্বূন। ১৭২. ওয়া ইয আখাযা রাব্বুকা মিম্ বানী আ-দামা মিন যুহূরিহিম্ যুর্রিইয়্যাতাহুম ওয়া আশ্হাদাহুম আ'লা আনফুছিহিম; আলাছ্তু বিরাবি্বকুম; ক্বা-লূ বালা;


শাহিদ্না আন তাক্কূলূ ইয়াওমাল কি্বয়া-মাতি ইন্না কুন্না আ'ন হা-যা গা-ফিলীন। ১৭৩. আও তাক্কূলূ ইন্নামা আশ্রাকা আ-বা-উনা মিন ক্বাবলু ওয়া কুন্না যুর্রিয়্যাতাম্ মিম্ বা'দিহিম; আফাতুহ্লিকুনা বিমা ফাআ'লাল মুব্তি্বলূন।
[সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৭০-১৭৩]

অনুবাদ : ১৭০. আর যারা কিতাবকে মজবুতভাবে ধরে রাখে এবং নামাজ কায়েম করে, আমি এ রকম সৎ লোকদের কর্মফল নষ্ট করি না।
১৭১. আর [মুসা (আ.)-এর সময়কার সে ঘটনার কথা মনে করে দেখো] যখন আমি পাহাড়কে তাদের ওপর এমনভাবে তুলে ধরেছিলাম যেন সেটি একটি শামিয়ানা; আর তারা মনে করেছিল সেটি তাদের ওপর ভেঙে পড়বে। আমি তাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, আমি তোমাদের যে কিতাব দান করেছি তা আঁকড়ে ধরো এবং তাতে বর্ণিত বিষয়গুলো স্মরণ রাখো, ফলে তোমরা দায়িত্বনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারবে।
১৭২. যখন তোমাদের প্রভু আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করে এনেছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ব্যাপারে সাক্ষী বানিয়েছিলেন। (আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম) আমি কি তোমাদের প্রভু নই? সবাই জবাব দিয়েছিল, অবশ্যই তুমি প্রভু, আমরা সবাই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি। এটা এ জন্য করেছিলাম, যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা বলতে না পারো যে আমরা তো এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না।
১৭৩. কিংবা এ রকম না বল যে শিরকের সূচনা তো আমাদের পূর্বপুরুষরা করেছিলেন। আমরা তো তাদের বংশধর ছিলাম মাত্র। আপনি কি বিপথগামী লোকদের পাপের জন্য আমাদের ধ্বংস করে ফেলবেন?

ব্যাখ্যা : ১৭১ নম্বর আয়াতে বর্ণিত পাহাড়কে বনি ইসরাইলের ওপর শামিয়ানার মতো তুলে ধরার ঘটনাটি সুরা বাকারার ৬৩ এবং সুরা নিসার ১৫৪ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, এ আয়াতের অর্থ এও হতে পারে যে আমি তাদের ওপর পাহাড়কে এমনভাবে দোলাতে থাকলাম, যাতে তাদের মনে হয়েছিল পাহাড় তাদের ওপর এসে ভেঙে পড়বে।
১৭২ নম্বর আয়াতে যে সাক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, হাদিসে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এ রকম_আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর পরবর্তী সময়ে মানুষ হিসেবে যাদের জন্ম দেবেন তাদের সব 'রুহ'-কে একত্র করে রুহানিভাবে তাদের আনুগত্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করেন। সব রুহ আল্লাহর একত্ব ও আনুগত্যের সাক্ষ্য দেয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছ থেকে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন। এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে মানুষ জন্মগতভাবে তার মানবিক দায়িত্বের কথা স্বীকার করে নিল। এর মাধ্যমে মানুষ স্বীকার করে নিল যে তারা আল্লাহর সব আদেশ-নিষেধ পালন করে চলবে। এভাবেই মানুষকে দুনিয়ায় পাঠানোর আগেই তাদের দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি এবং মানবিক দায়িত্বে অঙ্গীকার করিয়ে নিয়েছিলেন। দুনিয়ায় এমন মহাপুরুষও জন্ম নিয়েছেন, যারা সেই রুহানি প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখতে পেরেছেন। যেমন_জুননুনে মিসরির কথা বলা যায়। কিন্তু সে কথা সত্য যে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া হুবহু এ কথা অনেকেরই মনে নেই। এটা স্বাভাবিক। তবে এর চেয়েও বড় স্বাভাবিকতা হলো, মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যবোধ এবং মানবজীবনের দায়িত্ববোধ জন্মগতভাবে সংস্থাপিত হয়েছে। মানুষের মনোজগৎ একান্ত আদিতে সত্য ও ন্যায়ের ওপর সংস্থাপিত।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.