ডা. মেসবাহুল হক বাচ্চু by ডা. মেসবাহুল হক বাচ্চু

আজ ১৬ জানুয়ারি ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হক বাচ্চুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গণতন্ত্রকামী সকল মানুষের হৃদয়ে অম্লান হয়ে আছেন মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক এই মানুষটি।
২০০৯ এই দিনে ৭৮ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণ ছিল নবাবগঞ্জবাসীর কাছে বেদনাবিধূর দিন। শৈশব থেকেই অনুসন্ধিৎসা তাঁর মনন বিকাশের পথ নির্মাণ করে চলে সত্যানুসন্ধান, উচ্চারণ আর প্রতিবাদী, কণ্ঠস্বর তাঁকে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করে।
তিনি ১৯৩০ সালের ৩ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ‘কিরমিয কুটিরে’ জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ মালদাহ জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন, ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৯৫২ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএফ ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৪৭ সালে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন এবং কেন্দ্রের নির্দেশে আসাম প্রদেশের সাথে সিলেট জেলাকে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান আন্দোলনে সিলেটে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এ.কে.খন্দকার (এম.পি)-কে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র থাকা অবস্থায় বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন এই মহান নেতা। ১৯৬৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সনে এন.এস.এফের গু-াবাহিনী তাকে আক্রমণ করে মারাত্মক আহত করে এবং মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করলে তিনি একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে ৬ দফার পক্ষে কাজ করেন।
১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে নবাবগঞ্জ সদর থানা হতে প্রাদেশিক সদস্য (এম.পি.এ) নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বাধীনতা যুদ্ধকে সংগঠিত করা এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালে মালদহে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত জোনাল অফিসের তিনি সহকারী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম হস্তলিখিত সংবিধানে স্বাক্ষরকারীদের একজন। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদে নবাবগঞ্জ-৩ আসন হতে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ১৯৭৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গবর্নর মনোনীত করেন। তিনি এরশাদবিরোধী আন্দোলনের জন্য কারাবরণ করেন। তিনি নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজ, নবাবগঞ্জ মহিলা সরকারী কলেজ, নবাবগঞ্জ শিশু শিক্ষা নিকেতন, জেলা স্কুল, বালিয়াডাঙ্গা সিনিয়র মাদ্রাসা, নবাবগঞ্জ কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর আন্তরিক ইচ্ছা প্রাণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ২০১১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নবনির্মিত স্টেডিয়ামটি ‘ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) স্টেডিয়াম’ নামে উদ্বোধন করেছেন।
তাঁর এই প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করি হৃদয়ের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে, অন্তহীন শ্রদ্ধায়।

লোকমান হোসেন

No comments

Powered by Blogger.