সাফল্যের সেরেনা_ সেরেনার সাফল্য

সমসত্ম বাধা-বিঘ্ন জয় করার ৰমতা যাঁরা রাখেন তাঁরাই জীবনে সাফল্য পান, এটাই তো নিয়ম, তাই না ? যদি এ নিয়ে কারও কোন দ্বিমত থাকে তাহলে তাদের জন্য উত্তর হতে পারেন সেরেনা উইলিয়ামস।
দিন তিনেক আগে যিনি জিতে নিলেন এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মহিলা এককে শিরোপা। জিতে নিলেন বললে বরং ভুল হবে, বলা উচিত শিরোপা অৰুণ্ন রাখলেন। কারণ ৩০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়ান মেলবোর্ন পার্কে সেরেনা যখন জাস্টিন হেনিনের মুখোমুখি হলেন তখন সেরেনা তো অসি ওপেনের শিরোপাধারীই ছিলেন। প্রায় দুই বছর পর অবসর ভেঙ্গে কোর্টে ফেরা হেনিনকে হারিয়ে কেবল সেই শিরোপা নিজের কাছেই রাখলেন বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর মহিলা টেনিস তারকা। তবে তা করতে গিয়ে কি কম বাধার বিঘ্ন পেরম্নতে হলো তাঁকে ? গত বছর ইউএস ওপেনে এক লাইন্স ওম্যান জাজের সঙ্গে অশোভন আচরণের পর থেকেই সময়টা খুব একটা ভাল কাটছিল না সেরেনার। ওই এক ঘটনায় ৮২ হাজার ৫০০ ডলার জরিমানা গুনতে হয়েছে সেরেনাকে। শুধু কি তাই, পরবর্তী দু'বছরের জন্য এটিপি কতর্ৃপৰের মাইক্রোস্কোপের নিচে নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে । পরবর্তী কোন আসরে সামান্যতম নিন্দনীয় আচরণ করলে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে তাঁকে। ওদিকে, রাশিয়ার দিনারা সাফিনার সঙ্গে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর জায়গা দখলের লড়াই তখনও অব্যাহত। কোন গ্র্যান্ড সস্ন্যাম আসরের শিরোপা না জিতেও সাফিনা কেন এক নম্বরে অবস্থান করবে এ নিয়ে আপত্তি ছিল সেরেনার। সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে নিজের বিৰুব্ধ মনোভাবও গোপন করেননি মার্কিন তারকা। টেনিস কোর্টের লড়াইয়ের পাশাপাশি কোর্টের বাইরেও তাই অনেক বিষয়ে লড়তে হচ্ছিল সেরেনাকে। এর মধ্যে এ বছর যখন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে কোর্টে নামলেন সেখানেও সেরেনাকে প্রতিপৰ খেলোয়াড়দের সঙ্গে লড়াই করার পাশাপাশি আরও অনেক বিষয়ে লড়াই করতে হলো। বিশেষ করে ফাইনালে হেনিনের বিরম্নদ্ধে এক অন্যরকম লড়াই করতে হলো সেরেনাকে। সেরেনার প্রতি সেদিন তেমনটা দর্শক সমর্থন ছিল না । বরং দুই বছর পর কোর্টে ফিরেই কোন গ্র্যান্ড সস্ন্যাম আসরের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় বিশ্বের সাবেক এক নম্বর কামব্যাক কুইন হেনিনের প্রতিই যেন সেদিন সব সমর্থন উছলে পড়ছিল দর্শকদের। সেরেনার জন্য সমর্থন নিয়ে গ্যালারিতে বসেছিলেন বড় বোন ভেনাস উইলয়ামসসহ গুটিকয়েক দর্শক। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতেও নিজ লৰ্যে অটল থেকে শিরোপা জিতলেন সেরেনা। সেটা কি কম বড় সাফল্য ?
মহিলাদের টেনিসে একক ইভেন্টে সবচাইতে বেশিবার গ্র্যান্ড সস্ন্যাম শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ার মারগারেট কোর্টের। মোট ২৪টি একক শিরোপা জিতেছেন কোর্ট। মার্কিন তারকাদের মধ্যে এ রেকর্ডটি এতোদিন ছিল বিলি জিন কিংয়ের দখলে। হেনিনকে হারিয়ে গত শনিবার কিংয়ের ওই ১২টি শিরোপা জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন সেরেনা। গ্যালারিতে বসে কাছ থেকেই সেরেনার এ সাফল্য দেখেছেন কিং। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেরেনাকে গ্রেট হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন বিলি কিং। যদিও মাস চারেক আগে লাইন জাজকে আক্রমণ করে যিনি নিন্দনীয় হয়েছিলেন সেই সেরেনাই কিংয়ের এই কথায় বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন 'নিজেকে আসলে গ্রেট ভাবি না আমি। গ্রেট হতে এখনও অনেক কিছুই করার বাকি রয়েছে আমার জন্য।' তবে সেরেনা যাই বলুন না কেন বর্তমানে মহিলা টেনিসে অবশ্যই সেরেনা সাফল্যের এক রোল মডেল। গত এক বছরে এ নিয়ে মোট তিনটি গ্র্যান্ড সস্ন্যাম আসরের একক শিরোপা জিতলেন সেরেনা।
গত বছরের শুরম্নতে জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। এবারে যা অৰুণ্ন রাখলেন। এর মাঝে গত বছর উইম্বলন্ডনের শিরোপাও জেতেন মার্কিন তারকা। শুধু যে, এই তিনটি শিরোপা জিতেছেন তাই নয়, গত এক বছরে বিভিন্ন মেজর ইভেন্টের একক শিরোপার পাশাপাশি বড় বোন ভেনাসের সঙ্গে জুটি বেঁধে বিভিন্ন গ্র্যান্ড সস্ন্যাম আসরসহ অসংখ্য মেজর ইভেন্টের শিরোপা দ্বৈত শিরোপা জিতেছেন। এবারেও অসি ওপেনে মহিলা দ্বৈত শিরোপা উইলিয়ামস বোনদের হাতেই উঠেছে। সেরেনার সাফল্য ইতিহাসটা মোটেও সংৰিপ্ত নয়। বর্তমানে পেশাদার মহিলা টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে অবস্থান করছেন , প্রাইজ মানির রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেছেন অতীত ও বর্তমানের সবাইকে। ১৯৯৫ সালে পেশাদার টেনিসে প্রবেশের পর থেকে এখন পর্যনত্ম মোট ৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার প্রাইজ মানি জিতে সেরেনা বর্তমানে সর্বকালের সেরা প্রাইজমানি অর্জন করা মহিলা এ্যাথলেট। সাফল্যের মানদ-ে অনেক সবাইকে ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়েছেন সেরেনা। সেরেনার সাফল্যের মূলমন্ত্র কি ? এর উত্তরে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কারও মতে, শারীরিক গঠনের কারণেই অন্যদের চেয়ে বেশি সাফল্য পান সেরেনা। চওড়া কাঁধ আর পেশীসমৃদ্ধ বাহুর কারণেই কোর্টে অনবদ্য সেরেনা। তবে এ মতের বিরম্নদ্ধে আবার অনেকেই। তাঁদের মতে, এটাই যদি কোর্টে সাফল্য পাওয়ার মূলমন্ত্র হতো তাহলে তো সামান্থা স্টসার, নাদিয়া পেত্রোভা, কিম কিস্টার্স কিংবা সেভেতলানা কুজনেতসোভাও তো একই রকম সাফল্য পেতেন। তাহলে সেরেনার সাফল্যের মূল শক্তি কি ?
তাঁদের মতে, ৬৮ কেজি ওজনের সেরেনার সাফল্যের নেপথ্যে আসলে তাঁর শক্তিশালী দু'টি পা। যে কারণেই শারীরিক ওজন অন্যদের চেয়ে বেশি হলেও ৰিপ্রতা রয়েছে সেরেনার খেলায়। পাওয়ার টেনিসে অভ্যস্থ সেরেনার জন্য তাই ঘণ্টায় ১২৯ মাইল বেগে সার্ভ করতে মোটেও কষ্ট হয় না। তবে যে যাই বলুক না কেন, অনেকেই মনে করেন সেরেনার সাফল্যের মূলমন্ত্র আসলে তাঁর দৃঢ় মানসিকতা আর সাফল্য লাভের অফুরনত্ম পিপাসা। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে হেনিনকে হারানোর পর যেন সে কথাই প্রমাণ হলো সেরেনার বক্তব্যে। পুরস্কার জেতার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সেরেনার বক্তব্য ছিল 'হেনিন সত্যিই ভাল খেলছিল। আজ দর্শক সমর্থক থেকে শুরম্ন করে সবকিছু্ই ছিল হেনিনের পৰে। তবে ওটাই আমাকে সাফল্যের প্রেরণা দিয়েছে। বিশেষ করে যখন দ্বিতীয় সেটের খেলা চলাকালে যখন এক ভক্ত হেনিনকে উৎসাহ দিয়ে বলল, তুমি ওকে হারাতে পারবে হেনিন। কারণ ও ( সেরেনা ) মোটেও তোমার সাথে ম্যাচ জেতার মতো খেলোয়াড় নয়। এ কথায় ওই ভক্তদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলেছিলাম, আমাকে চেন না তুমি, জানো না কতোটা ৰমতা রাখি আমি। মূলত এরপরই শিরোপা জেতার দৃঢ় সংকল্প পেয়ে বসে আমাকে।'
_জামান তৌহিদ

No comments

Powered by Blogger.