আইন মন্ত্রণালয়ের বেআইনী কাজে ৰোভ, কর্মবিরতি

তপন বিশ্বাস আইন মন্ত্রণালয়ে চলছে বেআইনী কর্মকা-। এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে তারা আইন সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক ও আনোয়ারম্নল হককে।
এ ছাড়া সচিব পদে চলতি দায়িত্বে নিয়োগের কোন বিধান না থাকলেও খোদ আইন মন্ত্রণালয়ে বেআইনীভাবে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইন সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার মাত্র এক ঘণ্টা পর একটি আদেশ আবার সংশোধান করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশ না নিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। এতে আইন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকা-ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ৰোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন এবং বৈঠক করে ৰোভ প্রকাশ করেন। আজ বুধবার তাঁরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সাৰাত করবেন।
সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বাইপাস করে সোমবার আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হককে। এই নিয়োগে অনিয়মের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এই নিয়োগ অসংখ্য অনিয়মের সৃষ্টি করেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের পদ রয়েছে মাত্র একটি। এই পদের বিপরীতে ২০০৩ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান কাজী হাবিবুল আউয়াল। ২০০৮ সালে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার পর অতিরিক্ত সচিবের পদটি শূন্য হলে শহীদুল হককে ওই পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। কাজী হাবিবুল আউয়ালের সচিব পদে পদোন্নতিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। এই মামলার রায়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। পরে সরকার ও কাজী হাবিবুল আউয়াল পৃথকভাবে আপীল দায়ের করেন এই আদেশের বিরম্নদ্ধে। কিন্তু আপীলেও কাজী হাবিবুল আউয়ালের সচিব হিসেবে পদোন্নতিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এতে কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বয়ংক্রিয়ভাবে অতিরিক্ত সচিব বনে যান। একই সঙ্গে ড্রাফটিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিবের একটি পদের বিপরীতে দুই কর্মকর্তা বর্তমান থাকেন। এতে নতুন করে সৃষ্টি হয় জটিলতা। আইন মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন চলে সচিবের পদ শূন্য রেখে। এ অবস্থায় সোমবার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বাইপাস করে সচিব পদে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ পান শহীদুল হক।
এদিকে সচিব পদে আদেশ জারি করতে গিয়ে তুঘলকি কা- ঘটিয়ে বসে আইন মন্ত্রণালয়। একবারে অনভিজ্ঞতার পরিচয় দেয় সরকারের আইন মন্ত্রণালয়। বেআইনীভাবে আদেশ জারি করতে গিয়ে অফিস আদেশের পরিবর্তে তারা প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে অবশ্য তা সংশোধন করে অফিস আদেশ করা হয়। এর থেকে বড় ঘটনাটি ঘটান মন্ত্রণালয়ের অদৰ কর্মকর্তারা। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কারও অনুমোদন না নিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনটি জারি করেন। এই আদেশের মাধ্যমে তাঁরা নিজেরাই প্রমাণ করেছেন এই মন্ত্রণালয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতো দৰ কর্মকর্তার কত প্রয়োজন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই জাতীয় আদেশ জারি দেখে বলেছেন, এই জাতীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত আইন মন্ত্রণালয় কোনভাবেই সরকারকে রৰা করতে পারবে না। কর্মকর্তাদের এই জাতীয় কর্মকা-ে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ নিজেও ৰোভ প্রকাশ করেছেন জনকণ্ঠের কাছে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি শব্দ উলেস্নখ করেছেন 'হোফলেস'। আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির স্বাৰর না নিয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে কোন আদেশ জারি করা যায় না। যে কারণে আমি এই আদেশ সংশোধন করতে বলেছি। এ ছাড়া এটি প্রজ্ঞাপন নয়, এটি অফিস আদেশ।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন এক কর্মকর্তা এই প্রজ্ঞাপনটি দেখে জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে নিয়োগ, বদলি করার ৰমতা শুধু সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের। রম্নলস অব বিজনেস অনুযায়ী সরকারের উপসচিব থেকে সচিব পদে নিয়োগ দিতে গেলে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেৰে দিতে হবে। এ ছাড়া সচিব পদে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দেয়ার কোন বিধান নেই। এই পদে শুধু ভারপ্রাপ্ত সচিব অথবা সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, অতিউৎসাহী কিছু কর্মকর্তা অদৰতার পরিচয় দিয়ে এই আদেশ জারি করেছে। তিনি বলেন, রবিবার স্ট্যান্ডিং কমিটি আইন সচিব পদে এক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে বলেছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সচিবের পদটিও শূন্য রয়েছে। এতে আমরা অনত্মত এক কর্মকর্তার কাছ থেকে মন্ত্রণালয়ের কাজ বুঝে নিতে পারব।
সিনিয়র কর্মকর্তা কাজী হাবিবুল আউয়ালকে বাদ দিয়ে তাঁর জুনিয়র কর্মকর্তাকে কিভাবে নিয়োগ দিলেন_ এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল সচিবের দায়িত্ব পালন করে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগদান করতে আগ্রহী নয় বলে আমাদের জানিয়েছেন। তাই কাউকে না পেয়ে তাঁকে এই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল যোগদান করলে শহীদুল হকের সচিব পদের চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের, কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় কেমন করে এই নিয়োগ দিল_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এতদিন কি করেছে। তারা তো নিয়োগ দেয়নি। স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্দেশে এবং মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় এই আইনকে বেআইনী বলেছে_ এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আদেশ জারি করেছি। এখন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলে আমরা তা করব।

No comments

Powered by Blogger.