ছাত্রলীগের অনত্মর্কোন্দলে এফ রহমান হলে সংঘর্ষ আহত ২৫

। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সোমবার গভীর রাতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রুপের সংঘর্ষ এবং পুলিশের টিয়ারশেল, বেধড়ক লাঠিচার্জে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিকসহ অনত্মত ২৫ জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিকীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তার জ্ঞান ফেরে। তবে সন্ধ্যা পর্যনত্ম তাকে শঙ্কামুক্ত ঘোষণা করা হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম তাকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল তার মাথার পেছনের অংশে গুরম্নতর জখম করে।
এ ঘটনায় ভোরেই হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নকসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে শাহবাগ থানায় ফারম্নকসহ ১৪ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করেছে প্রতিপৰ গ্রম্নপের আহত এক কর্মী।
উভয় গ্রম্নপের সংঘর্ষ ছাড়াও পুলিশের লাঠিচার্জ ও হলের ভেতরে বেপরোয়াভাবে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ায় ভীত হয়ে অনেক সাধারণ ছাত্র তিন চার তলার উপর থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়। সাধারণ শিৰার্থীরা অভিযোগ করেন পুলিশ ভোরে হলে এক ধরনের তা-ব চালায়। রম্নমের ভেতরে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েনের জের ধরে সিটে ছাত্র উঠানোকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যৰদর্শীরা জানায়, হলের একটি কৰে ছাত্র উঠানোকে কেন্দ্র করে হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোলস্না গ্রম্নপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মধ্যরাত থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। রাত দেড়টার দিকে উভয়পৰের মধ্যে সংঘর্ষ শুরম্ন হয়। এ সময় হলের সব লাইট বন্ধ করে দিয়ে রামদা, চাপাতি, রড, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে দুই গ্রম্নপ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সূত্র জানায়, হলের ৩১১ নম্বর কৰে সাধারণ সম্পাদক গ্রম্নপের নেতাকর্মীরা থাকত। ওই কৰসহ আরও বেশ কয়েকটি কৰে সভাপতি গ্রম্নপের নেতাকর্মীরা জোর করে ছাত্র উঠাতে গেলে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রশাসন, পুলিশ এসেও প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ হলের ভেতর ঢুকে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিৰেপ শুরম্ন করে। পুলিশের মারমুখী অবস্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় পুলিশ হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামন ফারম্নকসহ ৯ জনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এতে পরিস্থিতি শানত্ম হয়ে আসে।
অনেক রম্নমের ভেতরও পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে সাধারণ শিৰার্থীরা আরও ভীত হয়ে পড়ে। তাদের অনেককে নিজেকে বাঁচাতে তিন চার তলার উপর থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়। হলের আবাসিক ছাত্র হাসনাত বলেন, 'পুলিশ হলের ভেতর ঢুকে এক প্রকার তা-ব চালিয়েছে। রম্নমের ভেতরে টিয়ারশেল ছুড়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা বর্বরতা। সংঘর্ষে যত না আহত হয়েছে, তার চেয়ে ছাত্ররা বেশি আহত হয়েছে পুলিশের কারণে।' এদিকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হুজায়ফা মোহাম্মদকে লাঠিপেটা করে পুলিশ। পরে অবশ্য পুলিশ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে।
সংঘর্ষে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ ছাত্রসহ অনত্মত ২৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী, মাস্টার্সের ছাত্র উজ্জল, আইন বিভাগের ছাত্র শুভ, সমাজবিজ্ঞানের শাওন, আনত্মর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শাকিল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের হাফিজ, আইনের ছাত্র ফারম্নক, রম্নহুল, তপু, আমিরম্নল, জাহিদ, আবু বকর, ওমর ফারম্নক, সালেহীনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৯ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নক, তার অনুসারী ম্যানেজমেন্টের ছাত্র জসীম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাজীব, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র কায়েস ও রফিক, সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র আলাল ও জুয়েল এবং হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র রকিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে সংঘর্ষের বিষয়ে বলেন, ছাত্র উঠানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রম্নপ ছাত্রের মধ্যে রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটা হয়েছে তাদের অভ্যনত্মরীণ কোন্দল থেকে। কিন্তু যে অসহনীয় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল তা দুঃখজনক। হলে ছাত্র উঠানোসহ সব বিষয় হল প্রশাসনের মনিটরিং করা উচিত বলেও তিনি মনত্মব্য করেন।
মামলা এ ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকালে হল শাখার সভাপতি ফারম্নকসহ ১৪ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪০-৫০ জনের বিরম্নদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে প্রতিপৰ গ্রম্নপের কর্মী ওমর ফারম্নক। মামলায় এনামুল, জনি, জুয়েল, তুষার, আলমগীর, আলমগীর (বাংলা), রকিব, জসিম, ফয়সাল, কায়েস, রাজীব, রকি ও আলমের নাম উলেস্নখ করা হয়।
সংঘর্ষের নেপথ্যে হলের সিটে ছাত্র উঠানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সংঘর্ষের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের টানাপোড়েন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশকিছু শূন্যপদ পূরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানা টেপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে এ কাজ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের ওপর ৰুব্ধ হয় কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। এ ঘটনার পর থেকেই ছাত্রলীগ প্রকাশ্য দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ৰুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের বক্তব্য রাখতে দেননি, এমনকি তাদের নামও ঘোষণা করেননি। গত ৩১ জানুয়ারির ওই সমাবেশেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের অনুসারী হল নেতাকর্মীদের দিয়ে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছিল।
পরে রোটন কিছুটা মেনে নিলেও রিপন কোনভাবেই এটি মেনে নিতে পারেননি। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, তিনি ক্যাম্পাসে তার অনুসারী হল শাখার নেতাদের বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের বিপৰে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। সেই টানাপোড়েনের জের ধরে কেন্দ্রীয় সভাপতির ইন্ধনে তার অনুসারী স্যার এফ রহমান হল সভাপতি ফারম্নক এ ঘটনা ঘটায়। সংশিস্নষ্টরা জানায়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের হুঁশিয়ারী এবং শক্তির জানান দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.