নূর চৌধুরীকে কানাডায় কারা কিভাবে 'সেই' পাসপোর্ট পাঠিয়েছে- তদন্ত শুরু by শংকর কুমার দে

বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যদ-প্রাপ্ত খুনী মেজর (অব) নূর চৌধুরীর সেই পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির রহস্যের জট খুলতে তদনত্ম করছে গোয়েন্দা সংস্থা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে সে এই পাসপোর্টটি ব্যবহার করেছিল কি করে,
তা তদনত্ম করে দেখা হচ্ছে। কানাডায় বাংলাদেশ থেকে তার কাছে এই পাসপোর্টটি পাঠিয়েছে জোট সরকারের একটি প্রভাবশালী মহল। পাসপোর্ট অফিস থেকে লুট হয়ে যাওয়া একটি সিরিজের পাসপোর্ট তার কাছে পাঠানো হয়। কারা, কিভাবে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীর কাছে পাসপোর্টটি পাঠিয়েছে, তা খুঁজে বের করা গেলে 'থলের বেড়াল' বের হয়ে আসতে পারে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার প্রায় ৩ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী কাছে ওই পাসপোর্ট পাঠানো হয়। গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই পাসপোর্টটি ব্যবহার করে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসে নূর চৌধুরী। হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) প্রধান মুফতি হান্নানের দেয়া জবানবন্দীতে উলেস্নখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নূর চৌধুরী বাংলাদেশে এসে হামলা চক্রানত্মে অংশ নেয়। নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে এসে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় অংশ নিতে কানাডায় তার কাছে পাসপোর্টটি কারা- কিভাবে পাঠিয়েছে, তা এখনও রহস্যাবৃত।
কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীর কাছে বাংলাদেশ থেকে যে সিরিজের পাসপোর্টটি পাঠানো হয়েছে সেই পাসপোর্ট সিরিজ নিয়েও যে কেলেঙ্কারি ঘটেছে তারও তদনত্ম করে দেখা হচ্ছে। নূর চৌধুরীর নামে ইসু্য করা হয়েছে 'ডবিস্নউ' সিরিজের একটি পাসপোর্ট। ডবিস্নউ সিরিজের পাসপোর্টটি ২০০৪ সালের বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ২৫০ আনত্মর্জাতিক পাসপোর্ট লুট হয়ে যায়। ২০০৪ সালের ১০ আগস্টে পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক ড. পারভীন বানু স্বাৰরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডবিস্নউ সিরিজের ২৫০ পাসপোর্ট বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিস থেকে লুট হয়ে গেছে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০০৪ সালে যেই ডবিস্নউ সিরিজের ২৫০ পাসপোর্ট লুট হয়ে গেছে সেই সিরিজের লুট হয়ে যাওয়া পাসপোর্টের একটি পাঠানো হয়েছে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীকে। শুধু তাই নয়, ২০০৪ সালে লুট হয়ে যাওয়া ডবিস্নউ সিরিজের ২৫০ পাসপোর্টেরই একটি তার নামে ইসু্য দেখানো হয়েছে ২০০২ সালে। ২০০৪ সালে যে পাসপোর্ট লুট হয়ে গেছে তার ২ বছর আগে ২০০২ সালে তার কাছে পাঠানো হলো কিভাবে ?
কানাডা সরকার তখন নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছে। কানাডায় নিযুক্ত ছিলেন তখন বাংলাদেশের হাইকমিশনার রফিক আহমেদ খান। কানাডার হাইকমিশনার তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তখন সচিব ছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা পদে থাকার পর শমসের মবিন চৌধুরীকে সর্বশেষ গঠিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেয়া হয়েছে। কানাডায় নিযুক্ত হাইকমিশনার রফিক আহমেদ খান নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে বহিষ্কার ও তার পাসপোর্ট সংক্রানত্ম ব্যাপারে পররাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের পরামর্শ চায়। এ ব্যাপারে একটি বার্তাও পাঠানো হয়েছে। তারপরই রহস্যজনকভাবে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরীর কাছে বাংলাদেশ থেকে লুট হয়ে যাওয়া সিরিজের একটি পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাসপোর্ট অফিস থেকে লুট হয়ে যাওয়া পাসপোর্টটি নূর চৌধুরীর নামে কারা-কিভাবে ইসু্য করে কানাডায় তার কাছে পাঠায় সেই রহস্যের জট খুলতে তদনত্ম করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট্ গ্রেনেড হামলার প্রায় ৩ মাস আগে কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধরীর কাছে পাসপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে তদনত্মে পাওয়া যাচ্ছে। হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানের দেয়া জবানবন্দীর সঙ্গে কানাডায় নূর চৌধুরীর কাছে তার নামে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট পাঠানোর দিনৰণের সঙ্গে সাদৃশ্য পাওয়া যাচ্ছে। তারপর পাসপোর্ট অফিস থেকে লুট হয়ে যাওয়া সিরিজের পাসপোর্ট নূর চৌধুরীর নামে কারা-কিভাবে ইসু্য করে পাঠিয়েছে তার সঠিক তদনত্ম করা গেলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.