ওরা ‘গোল্ডেন বয়’ by শাকিব আল হাসান

 নিলামে দেশীয় চার গোল্ডেনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৬৫ হাজার ডলারে শকিবকে কিনে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। একজন ক্রিকেটারের জন্য কেন এত অর্থ খরচ শাকিবের বেলায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া বড় বোকামি! কেবল ক্রীড়াঙ্গন নয়, দেশের আপামর মানুষও জানেন বিশ্ব দরবারে শাকিব আজ ‘ব্র্যান্ড অব বাংলাদেশ ক্রিকেট’।
ক্রিকেটে আমাদের নিউক্লিয়াস। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান, মর্যাদার ইলিশ কাউন্টিতে খেলা, উন্মাদনার ইন্ডিয়ান আইপিএলে মাঠ মাতানো কোন্ বাংলাদেশী ক্রিকেটার এসব করছেন মাত্র কয়েক বছর আগেও দেশের মানুষের কাছে এটি ছিল কল্পনা। সেই কল্পনাই বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে শকিব নামের এক দুরন্ত টাইগারের সেনার উইলো-গোলকের ঝলকে! ‘ফ্রম দ্য ফ্রন্ট’ বলতে যা বোঝায়। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে আরও সমুন্নত করেছেন তিনি। ছড়িয়েছেন সাফল্য আর বিজয়ের গান। গতবার বিপিএলের প্রথম আসরে নিজ অঞ্চল খুলনাকে শিরোপা জেতাতে না পারলেও, ব্যাটে-বলে শাকিব ছিলেন নিজের মতোই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। ১১ ম্যাচে ৪০ গড়ে তাঁর মোট রান ছিল ২৮০। ২ হাফ সেঞ্চুরিসহ সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৬। বল হাতে ১৫ শিকার নিয়েছিলেন আসরের দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহক। জাতীয় দলের জার্সিতে ২৪ টি২০তে তাঁর মোট রান ৪২৩, উইকেট ২৭টি। ১২৬ ওয়ানডেতে রান ৩৬২৫, উইকেট ১৬০! ২০০৬-০৭ মৌসুমে অভিষেকের পর থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম রূপকার বিশ্বের দ্বিতীয়সেরা এই অলরাউন্ডার। সুতরাং যে কোন মূল্যে শাকিবকে পেয়ে লাভবান গ্ল্যাডিয়েটর্স।
মুশফিকুর রহীম ॥ জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিককে পেতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ২ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে সিলেট রয়্যালস। চমৎকার উইকেট কীপিং, ব্যাট হাতে নিয়মিত ধারাবাহিকতাই কেবল নয়, অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ডেও অসাধারণ মুন্সিয়ানায় শাকিবের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ক্রিকেটার মুশফিক। নির্ধারিত সীমার মূল্য অতিক্রমের পর একাধিক ফ্যাঞ্চাইজি তাঁকে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত গতবারের রাজশাহীর আইকনকে দলে ভেড়ায় সিলেট। কাগজে-কলমে এবারও সবচেয়ে তারকাবহুল দল গড়েছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। মুশফিক ছাড়া সিলেটে প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় তারকার সংখ্যা খুব বেশি নয়। সোহরাওয়ার্দী শুভ ছাড়া আছেন হালের চমক সেহাগ গাজী, মমিনুল হক। তবে জাতীয় দলের অধিনায়ককে কব্জা করে অনুপ্রেরণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই করেছে সিলেট। মুশফিকের মতো একজন মাথার ওপর থাকা মানে বাড়তি উদ্যম, বাড়তি অনুপ্রেরণা। কেবল অধিনায়কত্বের সাইনবোর্ডেই নয়, ব্যাট হাতে গত আসরের অন্যতম সফল পারফর্মার ছিলেন মুশফিক। প্রথম আসরে দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে ৯ ইনিংসে তাঁর মোট সংগ্রহ ছিল ২৩৪ রান, গড় ৩৯, হাফ সেঞ্চুরি ১টি। শাকিব, আশরাফুল ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর পর স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা ছিল চতুর্থ সর্বাধিক সংগ্রহ। জাতীয় দলের জার্সিতে ২৬ টি২০তে তাঁর মোট রান ২৫১। ১১৩ ওয়ানডেতে ২২৫১, সেঞ্চুরি ১ ও হাফ সেঞ্চুরি ১১টি। অর্থের হিসেবে শাকিবের চেয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ডলার পিছিয়ে থাকলেও সার্বিক বিচারে তাই সবাইকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় ‘গোল্ডেন বয়’ মুশফিকুর রহীম।
তামিম ইকবাল ॥ আধুনিক বাংলদেশ ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। ব্যাট হাতে ও ব্যক্তিজীবনে দু’ক্ষেত্রেই মেজাজের ঝাঁঝটা দারুণ। ভালবাসেন উইলোর দাপটে প্রতিপক্ষ বোলারকে খুন করতে! হোক সে বিশ্বসেরা পেসার ডেল স্টেইন কিংবা স্পিনার সাঈদ আজমল; তামিম তামিমের মতো। ধর পেরাক মার হাতুড় ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারের ওপর কেবল ‘চড়াও ধর্মে বিশ্বাসী।’ পৃথিবী সাহসীদের জন্য বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল তিনি। শাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার, যিনি আইপিএল ছাড়াও ডাক পেয়েছেন মর্যাদার ইংলিশ কাউন্টিতে। এই মুহূর্তে খেলছেন নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি২০ আসরে। ইমেজ-আবেদনে ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ তারকা তামিম। জাতীয় দলের হয়ে মাঝে কিছুটা এলোমেলো ছিলেন, কিন্তু গত এশিয়া কাপে টানা চার হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুলে নিয়ে ফিরেছেন ছন্দে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একমাত্র টি২০তে ৮৮ রান করে ছিলেন অপরাজিত। ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে চলেছেন নিউজিল্যান্ডের লীগেও। ওয়েলিংটনের হয়ে শেষ তিন ম্যাচে তার স্কোর দেখুন ৬৮, ৭৪ ও ৪১। তামিমকে চিটাগাং কিংস থেকে দলে টানতে তাই ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার খরচ করতেও পিছপা হয়নি দুরন্ত রাজশাহী। জাতীয় দলের জার্সিতে ২৪টি ম্যাচে তামিমের মোট রান ৫৩১। হাফ সেঞ্চুরি ৩টি। ১১৮ ওয়ানডেতে ৩ সেঞ্চুরি ও ২৪ হাফ সেঞ্চুরির সমন্বয়ে মোট সংগ্রহ ৩৪৬২ রান।
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ॥ গোল্ডেন শ্রেণীর চার স্থানীয়র চতুর্থ জন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাঁকে পেতে ১ লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করে চিটাগাং কিংস। কিছুদিন আগেও ফর্মহীনতায় জাতীয় দলের সেরা একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়েও বড় রকমের প্রশ্নের সম্মুখীন ছিলেন তিনি। সেই মাহমুদুল্লাহর জন্যই এত অর্থ! এটা হয়েছে মূলত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটে-বলে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয়। ২০১০-১১, প্রায় পুরো দুটি বছরই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। সহ-অধিনায়কত্ব তো দূরের কথা, অনেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই রিয়াদই পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে বল হাতে চতুর্থ সর্বাধিক শিকারি। ব্যাট হাতেও সিরিজে সেরা পাঁচের পঞ্চমস্থানে ছিলেন বাংলাদেশ সহ-অধিনায়ক। ২ হাফ সেঞ্চুরিতে তাঁর মোট রান ১৫৯- গড় ৭৯.৫০! সার্বিকভাবে ব্যক্তিগত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সতীর্থ যে কাউকে ছাড়িয়ে যান তিনি। একমাত্র টি২০ ম্যাচটিতেও ৪৮ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪ রান করে ছিলেন অপরাজিত! পারফর্মেন্সের বিচারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে সিরিজে পুনর্জন্ম হয় অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। ওয়ানডে সিরিজ জয়ে তাঁর ভূমিকাটা ছিল সবচেয়ে বেশি। সর্বাধিক রান সংগ্রহে সিরিজসেরার পুরস্কার পাওয়া অধিনায়ক মুশফিকও নিজেও তা স্বীকার করেছেন অকপটে।

No comments

Powered by Blogger.