মহাকালের স্মৃতি ঐশ্বর্যের দীপ- বাংলাদেশের মর্যাদা- মহাস্থানগড় ও কান্তজীর মন্দির হতে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট

 যার পরতে পরতে মিশে আছে মহাকালের স্মৃতি, গৌরবে যা ঐশ্বর্যের দীপ জ্বেলে রেখেছে ইতিহাসের পাতায়, সেই মহাস্থানগড় ও কানত্মজীর মন্দির ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে পরিণত হচ্ছে।
শীঘ্রই এই ঘোষণা আসছে ইউনেস্কো থেকে এমনটি জানালেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের এক সূত্র। বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে পর্যটনের অপার এক ত্রে। ইতোমধ্যেই সুন্দরবন পাহাড়পুর ও সাতগম্বুজ মসজিদ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে (বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকা) অনত্মর্ভুক্ত হয়েছে। মহাস্থানগড় ও কানত্মজীর মন্দির অনত্মর্ভুক্ত হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় বাংলাদেশে প্রাচীন ইতিহাসের এই ৫টি জায়গা আসন করে নেবে।
বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্যগুলোকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করতে এবং পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাবার উদ্যোগ জোরেশোরে শুরম্ন হয়েছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে পরিণত হওয়ার সঙ্গে দূর অতীতের সকল ইতিহাসের পাতা উন্মোচিত হওয়ার নতুন এক প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়ে যাবে। বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে জাতিগত ইতিহাস জানার অপার এক ভা-ার। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের মাটির নিচে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে কয়েক হাজার বছরের যে ইতিহাস লুকিয়ে আছে তা উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ফ্রান্স প্রত্নতাত্তি্বক দল। যৌথভাবে তারা খনন কাজ শুরম্ন করেছে ১৯৯৩ সালে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে নির্দিষ্ট সময়ে খনন কাজ চালিয়ে মিলেছে হাজার বছরের প্রত্ন নিদর্শন, যা সা্য দেয় অজানা সব ইতিহাসের। দিনাজপুরের কানত্মজীর মন্দির ঐশ্বর্যের আরেক নিদর্শন। এমন মন্দির বিশ্বে বিরল, এমনটি জানা যায় ইতিহাসের পাতায়। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে কিছুদিন আগেই অনত্মর্ভুক্ত হয়েছে সুন্দরবন, নওগাঁর চন্দ্রনগরী (সোমপুর মহাবিহার) খ্যাত পাহাড়পুর ও বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে মহাসড়কের ধারেই মহাস্থানগড়। গড় এলাকা অনেকটা জায়গাজুড়ে। দূর অতীতে তা যে একটা নগরী ছিল তা মাটির নিচ থেকে উঁকি দেয়া বিশাল প্রাচীর দেখেই বোঝা যায়। প্রাচীন পু-্রবর্ধনভুক্তির রাজধানী পু-্রনগর এই মহাস্থানগড়। ঠিক কতটি কাল লুকিয়ে আছে মাটির নিচে সেই ইতিহাস উদ্ঘাটিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। মৌর্য সুঙ্গ গুপ্ত পাল সেন শশাঙ্ক কালের প্রত্ন চিহ্ন মিলেছে। করতোয়া নদীর তীরের এই মাটি শুধু বগুড়ার কীর্তি নয়, পৌরাণিক বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস এই ভূগর্ভেই। গ্রীক ইতিহাসবিদ মেগাস্থিনিগের বর্ণনা থেকে জানা যায়- মেসিডোনের বীর যোদ্ধা আলেকজান্ডার দিগ্বিদিক জয়ের পর খ্রিস্টপূর্ব ৩শ' ২৭ অব্দে ভারতবর্ষ আক্রমণ করে এই অঞ্চলে রণসাজে সজ্জিত সেনাদের বীরত্বের কথা শুনে ফিরে যেতে বাধ্য হন। এই পু-্রনগরে বৌদ্ধদের নানা কীর্তি ছড়িয়ে আছে। মহাস্থানগড় থেকে কিছুটা উত্তরে ভাসু বিহারে মাটি খুঁড়ে মিলেছে এমন এক স্ট্রাকচার যা সা্য দেয় বৌদ্ধরা সেখানে উচ্চশিার বিদ্যাপীঠ (হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিল। গড় থেকে ৩ কিলোমিটার দেিণ ১৫ মিটার উঁচু ও ১শ' ৭২টি ত্রিকোণ করে যে স্থাপনা এতকাল বেহুলা লখিন্দরের বাসর হিসেবে লোক মুখে পরিচিতি পেয়ে আসছিল তা যে বৌদ্ধদের নির্মিত মঠ তা প্রমাণিত হয়েছে। ইতিহাসের এমনই হাজার কথার সা্য দিচ্ছে মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রত্ন নিদর্শনগুলো।
ওদিকে দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুরে ঢেপা নদীর তীরে টেরাকোটা স্থাপত্যকলায় এশিয়ার সেরা মন্দিরটির অবস্থান। বর্গাকারে নির্মিত এই মন্দিরের প্রতিটি বারান্দার সামনে আছে দু'টি করে সত্মম্ভ। তিন তলা এই মন্দিরের চূড়া ছিল নয়টি, যার উচ্চতা ৭০ ফুট। এ জন্য এই মন্দিরকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়। এক ভূকম্পনে এই চূড়ার তি হয়। পলিমাটির আদর্্রতায় পাথরের ভিত্তির ওপর এই মন্দির নির্মিত হয়েছে ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাষাণের বেদীর ওপর উপুড় করে বসানো হয়েছে একটি পদ্মফুল। কানত্মজীর এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে কিংবদনত্মি। পৌরাণিক ও নানা উপাখ্যান রয়েছে বগুড়ার মহাস্থানগড় ঘিরে। কিংবদনত্মি মিথ যাই থাক মহাস্থানগড় ও কানত্মজীর মন্দির এখন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অনত্মর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে এটাই বিশাল প্রাপ্তি। বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় বাংলাদেশের মর্যাদা।

No comments

Powered by Blogger.