সংসদ গ্যালারি থেকে

উত্তম চক্রবতর্ী চারদিন বিরতির পর সংসদ ফের শুরম্ন হয়েছে। বিরোধী দল অধিবেশনে আসেনি। সবার আশা, শীঘ্রই সংসদে ফিরবে তারা। তবে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি মঙ্গলবার বুঝতে দেননি রসিক স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।
দিনের কার্যসূচীতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা প্রাধান্য পেলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা টিপ্পনীমূলক মনত্মব্য ছুড়ে সংসদকে প্রাণবনত্ম রাখেন তিনি।
পশু প্রাণী হতে সময় লাগে মঙ্গলবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে অধিকাংশ জুড়েই ছিলেন মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। কিন্তু শুরম্নতেই গ-গোল বাধে তাঁর মন্ত্রণালয়ের নাম নিয়ে। আগে তাঁর মন্ত্রণালয়ের নাম ছিল মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে নাম পাল্টিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। ফোর দিতে গিয়ে স্পীকার বলে ফেলেন মৎস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে বলেন, মাননীয় মন্ত্রী, নাম বদলে দেয়ায় ভেজাল হয়ে গেছে। পশু থেকে প্রাণী হতে সময় লাগবে। উত্তর দিতে উঠে মন্ত্রী বলেন, "মাননীয় স্পীকার, পানি নয়, প এর নিচে রফলা দিতে হবে। সংসদ সদস্য আবদুর রহমান প্রশ্ন করতে উঠে আবারও পশুমন্ত্রী বলেন। জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি মন্ত্রণালয় নিয়ে আমাদের একত্রে কাজ করতে হয়। তখন টিপ্পনী কেটে স্পীকার বলেন, "মাননীয় মন্ত্রী, ভূমি, জল ও মাস এই তিন নিয়ে একত্রে বসবাস।" এ সময় সবাই হেসে ওঠেন।

নূরম্নল ইসলামের প্রমোশন নেই
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল সরকারী দলের সংসদ সদস্য নূরম্নল ইসলাম বিএসসির। নামের শেষে শিৰাগত এই যোগ্যতা জুড়ে দেয়া নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তোলেন স্পীকার। বলেন, মাননীয় সদস্য, আপনার নামের পাশে বিএসসি লেখা রয়েছে, আপনি তো এমএসসি। অথচ বিএসসিই থেকে গেলেন ব্যাপার কী? পদবি বদলাবেন না? জবাবে নূরম্নল ইসলাম বিএসসি বলেন, আমি বিএসসি নামেই এলাকার মানুষের কাছে অধিক পরিচিত। তাই এই পদবি থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই না।

থ্যাঙ্ক ইউ মাননীয় আদালত!
সম্পূরক প্রশ্নের জন্য ফোর পান সংরৰিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য শওকত আরা বেগম। কিন্তু তিনি প্রশ্ন করতে উঠে বার বার মাননীয় স্পীকার সম্বোধনের বদলে আদালতের নিয়ম অনুযায়ী মাননীয় আদালত বলে সম্বোধন করলে সংসদে হাসির রোল পড়ে। প্রশ্ন করতে উঠে তিনি বলেন, আমি মন্ত্রীর কাছে একটি নিবেদন করতে চাই। রসিক স্পীকার বসে থাকতে পারলেন না। বলেন, মাননীয় সদস্য, সংসদে নিবেদনের কোন সুযোগ নেই। প্রশ্ন করম্নন। জবাবে ওই সংসদ সদস্য আবারও ভুল করে বলে ফেলেন, "থ্যাঙ্ক ইউ আদালত।" এ সময় পাশে বসা অন্যরা ভুলটি ধরিয়ে দিলে তিনি বলেন, আদালত নয়, থ্যাঙ্ক ইউ মাননীয় স্পীকার।" হাসতে হাসতে স্পীকার বলেন, 'মাননীয় সদস্য, আপনি কী এ্যাডভোকেট?

পুকুরে ইলিশ চাষ!
নোনা পানি ও স্রোতস্বিনী সাগর-নদীতে ইলিশের জন্ম। এটা সবাই জানে। কিন্তু মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে পুকুরে ইলিশ চাষের প্রশ্ন উত্থাপন করেন নওগাঁর সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার। তিনি মন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে দাঁড়িয়ে বলেন, "মাননীয় স্পীকার! আমার প্রশ্নটি একটু হাইপোথিটিক্যাল মনে হতে পারে। সাগর-নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। তাই পুকুরে ইলিশ চাষের কোন উদ্যোগ নেয়া যায় কি না? রসিক স্পীকার বলে ওঠেন, মাননীয় মন্ত্রী, সেরেছে_ পুকুরে এবার ইলিশ হবে কি না? হাসতে হাসতে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, প্রসত্মাবটা ভালই। পুকুরে ইলিশ চাষ করা যায় কি না, গবেষণা করা হবে। এ সময় অধিবেশনে হাসির রোল পড়ে যায়।

কালো কোট বলে কথা!
আইনজীবীদের প্রতি স্পীকারের একটু আলাদা দুর্বলতা নতুন নয়। কারণ স্পীকার নিজেও যুগের পর যুগ এই পেশার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে সরাসরি সংসদে আসেন এ্যাডভোকেট ফজলে রাবি্ব মিয়া। তাই গায়ের কালো কোট খোলার সময় পাননি। তিনি সম্পূরক প্রশ্নের জন্য ফোর চাইলে স্পীকার বলেন, "মাননীয় সদস্য, কালো কোট পরে এসেছেন, একজন আইনজীবীকে তো ফোর দিতেই হয়। নইলে যে আমি থাকি না। সানজিদা খাতুন কালো কোট আজ পরেননি। তাই তাঁকে ফোর দেব না।" জবাবে ফজলে রাবি্ব বলেন, "মাননীয় স্পীকার, বস্ন্যাক কোট আমার গর্ব। এ কোট আপনারও গর্ব। এই কোট আগে আপনারও ছিল, কিন্তু এখন নেই।"

বিভাগ ঘোষণায় সংসদে মিষ্টি
প্রশ্নোত্তর পর্বে বৃহত্তর রংপুর জেলা থেকে যে সংসদ সদস্যই ফোর পেয়েছেন, তিনিই ওই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের আকাঙ্ৰা পূরণে রংপুরকে বিভাগ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। কিন্তু স্পীকার এত ধন্যবাদের মধ্যে আরও একটি সুখবর জানান। বলেন, "মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাংবাদিকবৃন্দ, রংপুরকে বিভাগ ঘোষণার জন্য রংপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম ম-ল আপনাদের সবার জন্য ম-া-মিঠাই এনেছেন। বিরতির সময় সবাই মিষ্টিমুখ করবেন আশা করি। আছরের নামাজের বিরতির পর সকল সংসদ সদস্য ও সাংবাদিকদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.