বিয়েতে আপত্তির জের- কাজি অফিসে ইডেন কলেজের ছাত্রী অ্যাসিডদগ্ধ

রাজধানীতে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে অ্যাসিডদগ্ধ ও ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার চানখাঁরপুলে কাজি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। মাথা, মুখমণ্ডলসহ প্রায় পুরো শরীরে অ্যাসিডদগ্ধ ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বংশাল থানার পুলিশ বলছে, ছাত্রীটি বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মনির নামের এক যুবক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চানখাঁরপুল মোড়ের একটি ভবনের দোতলার কাজি অফিস থেকে আর্তনাদ করে নিচে নামেন মেয়েটি। তিনি সবার সাহায্য চেয়ে জানান, তাঁকে অ্যাসিড মারা হয়েছে। এতে আশপাশের লোকজন তাঁর শরীরে পানি ঢালেন। খবর পেয়ে কায়েতটুলী ফাঁড়ির পুলিশ সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই কাজি অফিসের সহকারী হাবিবুল্লাহ খান রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে এক মেয়েকে নিয়ে দুই যুবক অফিসে আসেন। দুই যুবকের একজন মেয়েটিকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। মেয়েটি রাজি হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে ওই যুবক সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে মেয়েটিকে আঘাত করেন। পরে তিনি ব্যাগ থেকে অ্যাসিড বের করে মেয়েটির গায়ে ঢেলে দেন। এরপর ওই দুই যুবক দ্রুত বের হয়ে যান।
হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ছুরিকাঘাতের পর মেয়েটিকে আমি রক্ষা করতে গেলে দুই যুবকের সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি হয়। তাঁরা আমাকেও কিল-ঘুষি মারেন। ঘটনার পর ভয়ে আমি মানিকগঞ্জে চলে যাই। পরে রাতে ঢাকায় আসি।’
কাজি অফিস যে ভবনে ওই ভবনের নিচতলায় একটি ওষুধের দোকানের মালিকের ছেলে মো. রিমন প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক যুবক দ্রুত কাজি অফিস থেকে নেমে দৌড়ে বঙ্গবাজারের দিকে চলে যান।
কায়েতটুলী ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) সাহাবুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার সময় মেয়েটি জানান, তিনি ইডেন কলেজের বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। মাথায় অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ায় তা তাঁর শরীরে ছড়িয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন হরিদাস সাহা সাংবাদিকদের বলেন, অ্যাসিডে মাথা, মুখসহ ওই ছাত্রীর শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে। তাঁর পিঠে তিনটি ও ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কম্বল গায়ে কাত হয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছেন ওই ছাত্রী। চোখসহ মুখের ডান পাশের বেশির ভাগ অংশই ঝলসানো। পুড়ে গেছে মাথার চুল। পাশে আছেন কয়েকজন স্বজন।
এক স্বজন জানান, ছাত্রীটি তাঁকে জানিয়েছেন, মনির ছুরি ও অ্যাসিডের ভয় দেখিয়ে তাঁকে কাজি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন। মনির ফোন করে মাসুম নামের এক যুবককেও ডেকে আনেন।
হাসপাতালে ওই ছাত্রীর ভাই সরকারি কর্মকর্তা জানান, তাঁর বোন রমনার সার্কিট হাউস রোডের অফিসার্স কোয়ার্টারে তাঁর (ভাই) বাসায় থাকেন। সকাল নয়টার দিকে তাঁর বোন কলেজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ফোন করে তাঁকে ঘটনা জানায়। তিনি বলেন, মনির তাঁর বোনকে উত্ত্যক্ত করতেন।
জানা যায়, মনির একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। থাকেন মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
ওই কাজি অফিসটি মাহবুবুল আলমের। যোগাযোগ করা হলে রাত আটটার দিকে তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি অফিসে ছিলেন না। ভয়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া হাবিবুল্লাহ খানকে ঢাকায় আসতে বলেছেন।
রাত ১০টার দিকে মাহবুবুলের মুঠোফোনে হাবিবুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়।
পুলিশের লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার হারুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর ভাই বংশাল থানায় মনির ও মাসুমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আজ মানববন্ধন: ওই ছাত্রীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপকারীর দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার বিকেল চারটায় ইডেন কলেজের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের উদ্যোগে প্রথম আলো বন্ধুসভা এর আয়োজন করেছে। উদ্যোক্তারা এই মানববন্ধনে সবাইকে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.