আফতাবের আক্ষেপ, আফতাবের উপলব্ধি

শপিং মলে বা বন্ধুদের আড্ডায় গেলে বুঝতে পারেন, এখনো হারিয়ে যাননি। অটোগ্রাফ শিকারিরা ঠিকই খুঁজে পায় তাঁকে। জাতীয় দলে ফেরার কল্পনাটা তবু পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে না ক্যানভাসে। দেখেন, সামনে অনেক ভিড়।
অনেককে ঠেলে সরাতে পারলে তার পরই দেখা যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত প্রবেশদ্বার। আফতাব আহমেদ বাংলাদেশের ক্রিকেটে হতে পারতেন কিংবদন্তি। অথচ এখন তার প্রতিটি বেলা কাটে আফসোসে। কী হতে পারত আর কী হলো! কাল মিরপুর একাডেমি মাঠে বিপিএলের দল চিটাগাং কিংসের অনুশীলন শেষে যখন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন, বারবার সেই আফসোসই ঝরল কণ্ঠে। তবে কাঠগড়ায় আর কাউকে নয়, দাঁড় করাচ্ছেন নিজেকেই, ‘অস্বীকার করে লাভ নেই, খারাপ তো লাগেই। মাঝেমধ্যে চিন্তা করি অলসতাই আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে। সমস্যাটা কাটানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। এটা অনেক খারাপ লাগে।’
আফতাবের সঙ্গে জাতীয় দলে এসেছিলেন বা পরে এসেছেন, তাদের অনেকেই এখন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটার। একই রকম কিংবা অনেকের চেয়ে বেশি সম্ভাবনা আর প্রতিভা নিয়ে এসেও আজ সেই সারিতে তিনি নেই। আফতাবের জ্বলুনি বাড়িয়ে দেয় চোখের সামনের এই দৃশ্য, ‘আমি যখন টপ ক্রিকেটার ছিলাম, তখন যাদের অভিষেক হয়েছে, তারা অনেক ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছে। আমি ওদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে গেছি। এখন অবশ্য চিন্তা করে লাভ নেই। যা হওয়ার হবে, এখন যেভাবে খেলতে পারি, সেভাবেই খেলব।’
আফতাব নিজেকে এখন এতটাই পেছনের সারিতে ভাবেন যে, জাতীয় দলে ফেরার চিন্তাও আপাতত নেই মাথায়। লক্ষ্য একটাই, আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে পুরোনো আফতাবকে ফিরিয়ে আনা, ‘জাতীয় দল নিয়ে চিন্তা করছি না। আমি চিন্তা করছি আর যত বছর ক্রিকেট খেলব, এখানে (ঘরোয়া ক্রিকেট) যেন কিছু একটা করতে পারি। এবার জাতীয় লিগে একটা ৯৭ ও দুটি ফিফটি করেছি। আমি ভুল খেলিনি, এটাতেই আমি খুশি। জাতীয় দলে ঢোকার কথা বললে, আমার চেয়ে অন্য অনেক ক্রিকেটারই বেশি এগিয়ে আছে। যদি বলি, এখনই জাতীয় দলে খেলতে চাই, তাহলে তো হবে না। এটা চিন্তা করাও ভুল হবে।’
বিপিএলে গতবার ছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসে, এবার চিটাগাং কিংসে। চট্টগ্রামের ছেলে চট্টগ্রামে খেলবেন, এবারের বিপিএলে এটাও একটা বাড়তি রোমাঞ্চ আফতাবের জন্য। তবে দলে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে চান না, বিপিএলে এবার ভিন্ন লক্ষ্য আফতাবের, ‘প্রথম কথা হচ্ছে আমাকে সেরা একাদশে জায়গা করে নিতে হবে। সেরা একাদশে খেলতে পারলে ভিন্ন কিছু করতে পারব। গত বছর বিপিএল নিয়ে একটু খামখেয়ালিপনাা ছিল। এবার চিন্তা করেছি খামখেয়ালিপনা নয়, ভিন্ন কিছু করতে হবে।’
নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে পুরোনো স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে কাঁটার মতো বেঁধে। আবার অনুপ্রেরণার আঁধারও তো সেসব দিনগুলোই। আফতাব যতদিন খেলবেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট বোধহয় ততদিনই অপেক্ষায় থাকবে তাঁর ফিরে আসার জন্য।

No comments

Powered by Blogger.