পঞ্চম সংশোধনী বাতিল বহাল থাকায় সংসদে সনত্মোষ


সংসদ রিপোর্টার সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরম্নদ্ধে করা লিভ টু আপীল খারিজ হওয়ায় মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে গভীর সনত্মোষ প্রকাশ করেছে সরকারী দল।
মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এ সংসদের পৰ থেকে সর্বোচ্চ আদালতকে মাথানত করে অভিবাদন জানানো উচিত মনত্মব্য করে বিরোধী দলকে এ রায় মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে সরকারী দল। সরকারী দলের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সুপ্রীমকোর্টের প্রদত্ত রায়কে 'ঐতিহাসিক' উলেস্নখ করে বলেন, পরপর দু'টি ঐতিহাসিক রায় দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত কালিমামুক্ত করে জাতিকে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি দিয়েছে। এ ঐতিহাসিক রায়ের পর মুক্তিযুদ্ধের অবদান '৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে আর কোন বাধা নেই। সাধারণ মানুষ থেকে শুরম্ন করে রাষ্ট্র, সরকারী দল ও বিরোধী দল সবাই এ রায় মানতে এখন বাধ্য। এ থেকে পাশ কাটানোর আর কোন সুযোগ নেই।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এমন প্রসত্মাবের জবাবে স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, আইনমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদৰেপ নেবেন।
স্পীকারের সভাপতিত্বে শুরম্ন হওয়া সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর ও জনগুরম্নত্বসম্পন্ন নোটিসের নিষ্পত্তির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এ রায়ের পর আশা করব এ সংসদেই '৭২-এর সংবিধান পুনপর্্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
পয়েন্ট অব অডর্ারে দাঁড়িয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বাঙালী জাতির জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক ও গৌরবের দিন। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টে দেয়া রায়ের বিরম্নদ্ধে লিভ টু আপীল খারিজ করে দিয়েছে। তাই হাইকোর্টের রায় আজ চূড়ানত্মভাবে গণ্য হলো। তিনি বলেন, হাইকোর্ট তার ঐতিহাসিক রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রীমকোর্টও তা বহাল রেখেছে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এ রায় এখন থেকে সকলের ওপর কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, দেশ, জনগণ, রাষ্ট্র, সরকার ও বিরোধী দল এ রায় সবার মেনে নেয়া এখন বাধ্যবাধকতা আছে। এখন থেকে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে আর কোন আইনগত বাধা নেই। আর বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেলে গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাঙ্ৰা পূরণ হবে। তিনি বলেন, মার্শাল ল ঘোষণা দিয়ে এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিকে ক্ষুণ্ন্ন করা হয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, '৭৫-পরবতর্ী সামরিক সরকারগুলো ধর্মনিরপেৰতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতি কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। সামরিক ফরমানবলে তাও করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৩৪ বছর পর তা থেকে জাতি আজ মুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যে বাহাত্তরের সংবিধান রচনা করেছিলাম, সে সংবিধান নিয়ে আমাদের বিশাল গর্ববোধ রয়েছে। ওই সংবিধানে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের ওপর গভীর আস্থা ও ৰমতা দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, এটাও সত্য যে, এ সংবিধানকে পদদলিত করার জন্য এ সর্বোচ্চ আদালতই কালিমালেপন করেছিল। দায়িত্বরত বিচারপতিরা সামরিক শাসকের দোসর হয়ে ৰমতার ভাগীদার হয়েছিলেন। এতে শ্বেতশুভ্র এ সর্বোচ্চ আদালতের ওপর কিছুটা হলেও কালিমালেপন হয়েছিল। কিন্তু সর্বশেষ দু'টি ঐতিহাসিক রায় দিয়ে সেই কালিমাকে দূর করা হয়েছে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রসত্মাব দেন, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য এ সংসদের পৰ থেকে সর্বোচ্চ আদালতকে মাথানত করে অভিবাদন জানানো উচিত। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, মানুষের অধিকার সার্বভৌম। কিছু সময়ের জন্য কেড়ে নেয়া গেলেও তা চিরস্থায়ী নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের পর সুপ্রীমকোর্টের এ ঐতিহাসিক রায় হওয়ার অংশীদারিত্ব দাবি করতে পারে জাতীয় সংসদ। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে এ রায় মেনে নিয়ে পথচলার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.