রত্নার নেতৃত্বে দুই স্বর্ণ এলো শূটিংয়ে

মনিজা রহমান শারমিন আক্তার রত্না, সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা, তৃপ্তি দত্তরা এখন জাতীয় বীর। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গুলশান শূটিং রেঞ্জে তাঁদের অসামান্য সাফল্যে ১১তম এসএ গেমসের পঞ্চম দিনে আবার জাতীয় সঙ্গীত বাজল বাংলাদেশের।
বিশ্বসেরা ভারতীয়দের শূটিংয়ে পরাসত্ম করে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের ব্যক্তিগত ও দলগত উভয় বিভাগে স্বর্ণ জিতে নিলেন লাল-সবুজ দেশের দামাল মেয়েরা। কেউ ভাবেননি। তাঁরা নিজেরাও কি ভেবেছিলেন। রত্না-সাদিয়া-তৃপ্তির স্কোর তাঁদের অতীত সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেল। কত বিধিনিষেধের ঘেরাটোপ পার হয়ে তাঁরা তৈরি হয়েছিলেন এই দিনটার জন্য। অবশেষে সেই সাফল্য মিলল। রত্না ব্যক্তিগত ইভেন্টে ৪৯৯.৪ স্কোর করে জিতলেন স্বর্ণ। সাদিয়া ৪৯৮.৩ স্কোর করে পেলেন রৌপ্য। ১১৯১ স্কোর করে পেলেন দলগত ইভেন্টে স্বর্ণালী সাফল্য। ভারোত্তোলনে আগের দিন হামিদুল ইসলামের ৭৭ কেজিতে স্বর্ণপ্রাপ্তির পর পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের অর্জন আরও দুই স্বর্ণ। তবে এইদিন দলগত ইভেন্টে প্রত্যাশিত সাফল্য পাননি স্বাগতিকরা।
পুরম্নষ কাবাডিতে পাকিসত্মানের কাছে হেরে ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেছে বাংলাদেশের। দীর্ঘদেহী পাকরা ১৭-১১ পয়েন্টে বিধ্বসত্ম করেছেন বাংলাদেশীদের। কোচ আবদুল জলিল আগের দিন জানিয়েছিলেন, পাকিসত্মানের বিরম্নদ্ধে জানবাজি করে লড়বে ছেলেরা। কারণ, এই ম্যাচে জিততে না পারলে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে যাওয়া সম্ভব নয়। নেপাল-শ্রীলঙ্কাকে সহজে হারানোর কারণে রেইডার জিয়াউর রহমানের আহতজনিত উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি। গতকাল কাবাডি কোর্টে পাকিসত্মান দল নিজেদের সেরা প্রমাণ করে জিতে যায়। এখন ফাইনালে যেতে হলে একটি অলৌকিক ঘটনার জন্য অপেৰা করতে হবে বাংলাদেশকে। সেটা হলো ভারতকে হারানো। তার পরও হয়ত গোল ব্যবধানের বিষয় থাকবে।
কাবাডি মাঠের পাশে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের চিত্রটাও অনুরূপ। বিশ্ব হকির শ্রেষ্ঠ দল পাকিসত্মানের বিরম্নদ্ধে বাংলাদেশের পরাজয় অঘটন নয়। গেমস শুরম্নর আগে অনুশীলন ম্যাচে পাকিসত্মান ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। গতকাল আসল ম্যাচে তারা ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকদের। বাংলাদেশ তাদের সেরা হকি খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঠে নামলেও পাকিসত্মান জিশান আশরাফ-সোহেল আব্বাস-মোহাম্মদ সাকলাইনের মতো সেরাদের দেশে রেখে অনেকটা 'এ' দল নিয়ে ঢাকায় এসেছে। কিন্তু তাদের কাছেই পরাজয়ের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। এখন ফাইনালে যেতে হলে কাবাডির মতোই ভারতকে হারানোর অলৌকিক স্বপ্নে বিভোর থাকতে হবে লাল-সবুজদের, যা অনেকটা অসম্ভবই বটে। নয়ত কাবাডি ও হকিতে ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে হবে বাংলাদেশ দলকে।
ক্রিকেটে দিনটা খারাপ ছিল বাংলাদেশের। এসএ গেমসে প্রথমবারের মতো অনত্মভর্ুক্ত টোয়েন্টি২০ ক্রিকেটে ভারত না আসায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু গতকাল শ্রীলঙ্কার কাছে ১৮ রানে হেরে সেই আনন্দ উবে গেছে স্বাগতিকদের। এখন অনুর্ধ-২১ দলকে ফাইনালে খেলতে হলে হারাতে হবে পাকিসত্মানকে।
কাবাডি-হকিতে না পারলেও মহিলা ফুটবলে ঠিকই পাকিসত্মানকে হারিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে এই জয় প্রত্যাশিত ছিল। পাকিসত্মানে মহিলা ফুটবলের চর্চা খুব বেশি নেই। কিছুটা রৰণশীল এই দেশটি শুরম্নতে ১১তম এসএ গেমসে মহিলা ফুটবলে নিজেদের নাম এন্ট্রি করেনি। পরে পাকিসত্মানের নাম যুক্ত হওয়ায় এসএ গেমসের ফিঙ্চারে পরিবর্তন আসে। দুইটি খেলা চলে যায় কমলাপুরের শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোসত্মফা কামাল স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ পাকিসত্মানকে হারালেও মহিলা ফুটবলে অন্য ম্যাচের সমীকরণ স্বাগতিকদের কপালে এঁকে দিয়েছে দুশ্চিনত্মার রেখা। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল প্রথম ম্যাচে নেপালের কাছে ০-১ গোলে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে পরাজিত করে। ফাইনালে যেতে হলে গতকালের ম্যাচে পাকিসত্মানকে হারানোই যথেষ্ট ছিল না। শ্রীলঙ্কাকে জিততে হতো নেপালের বিরম্নদ্ধে। কিন্তু উল্টো নেপাল ৮ গোলের বন্যায় লঙ্কানদের হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে। এখন বাংলাদেশ মহিলা দল গ্রম্নপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারলে ফাইনালে যাবার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।
কি হলে কি হবে, সেটা না ভেবে অনত্মত এইটুকু সানত্ম্বনা যে, গতকাল বাংলাদেশের মেয়েদের সাফল্য একটি প্রগতিশীল-উদার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। প্রত্যাশার চাপে নত না হয়ে বরং বাংলাদেশের মেয়েরা দেশের সম্মানকেই তুলে দিলেন অনেক ওপরে। ব্যক্তিগত ইভেন্টে রত্না স্বর্ণ আর সাদিয়ার রৌপ্য জয়ের ঔজ্জ্বল্যের কাছে ভারতের পাম্পি দাসের ব্রোঞ্জপ্রাপ্তিকে খুব মস্নান মনে হচ্ছিল। দলীয় ইভেন্টে শারমিন আক্তার রত্না, সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা ও তৃপ্তি দত্তের সমন্বয়ে গড়া বাংলাদেশ দল ৩৯৭ পয়েন্ট গড়ে স্বর্ণপদক জিতে নেয়। অপরদিকে পাম্পি দাস, শ্রম্নতি তুষার ভাতেপাতিল ও তেজস্বিনী মনোজ রাওয়ের সমন্বয়ে গড়া ভারতীয় দল গড়ে ৩৯১.৬৬ পয়েন্ট পেয়ে রৌপ্যপদক লাভ করে। এ ছাড়া ৩৮২.৩৩ পয়েন্ট গড়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছে পাকিসত্মান। পাকিসত্মানী মহিলা শূটাররা হচ্ছেন নাজিস খান, নোশীন মাকসুদ আলী ও নাহিদা নাকভী। অলিম্পিক-বিশ্বকাপ শূটিংয়ে পদক জেতা ভারত বাংলাদেশকে অবমূল্যায়ন করেছিল তাদের সেরা দলটি না পাঠিয়ে। তার জবাব কঠিনভাবে দিয়েছেন এদেশের সোনার মেয়েরা। এখন অপেৰা একটাই, তাঁদের সাফল্যে ভবিষ্যতে কোন একদিন হয়ত অলিম্পিক গেমস কিংবা বিশ্বকাপের আসরে উড়বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

No comments

Powered by Blogger.