বিপিএলের নতুন আকর্ষণ by মোঃ মামুন রশীদ

এবার বিপিএলে সত্যিই এমন কিছু বাংলাদেশী ক্রিকেটার আছেন যাঁরা সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেই বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়ার মতো নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন।
এর মধ্যে আছেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়, ডানহাতি অফস্পিনার সোহাগ গাজী, পেসার আবুল হাসান রাজু, মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মমিনুল হক সৌরভ। এছাড়া বিপিএলের প্রথম আসরে মাঠ মাতানো তরুণদের মধ্যে আছেন পেস অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মার্শাল আইয়ুবদের মতো ক্রিকেটাররা। আর এবারের আসরের নিলামে দল না পাওয়া অলরাউন্ডার মেহরাব হোসেন জুনিয়রের দিকেও বিশেষ নজর থাকছে সবার। মেহরাব শেষ মুহূর্তে চিটাগাং কিংসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাই বিদেশী তারকাদের অভাবে প্রায় আধমরা এক আসরে পরিণত হতে চলা বিপিএলে দ্বিতীয় আসরও জমজমাট হয়ে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে এ নবীনদের দুর্দান্ত আগমনধ্বনিতে।
এনামুল হক বিজয় ॥ প্রথম আসরে এনামুল খেলেছিলেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সে। তবে তখন ছিলেন উঠতি তারকা হিসেবে। কয়েকটি সিরিজে জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ঠাঁই পেলেও শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি। ঢোকার জায়গা পাচ্ছিলেন না। তবে গ্ল্যাডিয়েটর্সের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে ২৫.১৪ গড় আর ১০৭.৩১ স্ট্রাইকরেটে রান করেছিলেন ১৭৬। দলটি প্রথম আসরে শিরোপা জয় করেছিল। এনামুল গড়পড়তা ভাল খেলে উপযুক্ত ওপেনারের অভাবটাও বুঝতে দেননি। এবার এনামুলের প্রতি নজরটা সবারই অন্যরকম। কারণ গত বছরের নবেম্বর-ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নেমেছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে। আর সেখানেই ক্যারিবীয় বোলারদের শাসন করে ১২০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে জয়ী করে হন ম্যাচসেরা। এ কারণেই এবার নিলামে চড়া মূল্যই পেয়েছেন তিনি। তবে প্রথম আসরে তাঁর দুর্দান্ত নৈপুণ্যের কথা ভোলেনি গ্ল্যাডিয়েটর্স। শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার মার্কিন ডলারে তাঁকে নিজেদের দলেই রেখে দিয়েছে গ্ল্যাডিয়েটর্স।
সোহাগ গাজী ॥ প্রথম বিপিএল পর্যন্ত এ তরুণের নামটিও ঠিকমতো জানতেন না কেউ। বরিশাল বার্নার্সে ছিলেন নিভৃতেই। মাত্র এক ম্যাচ খেলে পটুয়াখালীর এ অলরাউন্ডার ২ ওভার বোলিং করে ৩২ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি। তবে এবার বিপিএল শুরুর আগে থেকেই তাঁকে শুধু দেশের সব ক্রিকেটামোদী চেনেন বিষয়টি এমন নয়, বরং ক্রিকেটবিশ্বেও পরিচিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন গত বছরের নবেম্বর-ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হোমসিরিজে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর। মূলত ১৪তম জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) এক ম্যাচে শতরান এবং হ্যাটট্রিকসহ ৯ উইকেট নেয়ার পরই তাঁকে জাতীয় দলে ভেড়ান নির্বাচকরা। আর অভিষেক টেস্টেই এক ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে তাক লাগানো এবং অভিষেক ওয়ানডেতে দেশসেরা বোলিং করে ২৯ রানে ৪ উইকেট শিকারের পর ম্যাচসেরা হয়ে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেন। সে কারণেই বিপিএল দ্বিতীয় সংস্করণের ক্রিকেটার নিলামে সবচেয়ে আদর-সোহাগ পেয়েছেন। এবার তাঁকে ১ লাখ ৫৬ হাজার মার্কিন ডলারে কিনেছে সিলেট রয়্যালস। আরও ঝলসানো নৈপুণ্য হবে তাঁর সেটা সদ্যসমাপ্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক প্রথমশ্রেণীর ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) শুধু বোলিং নয়, বিধ্বংসী ব্যাটিং থেকেও আভাস পাওয়া গেছে। ডানহাতি অফস্পিনার হিসেবে আগের ম্যাচে পূর্বাঞ্চলকে ধসিয়ে দেয়ার পর তৃতীয় রাউন্ডে তিনি উত্তরাঞ্চলের হয়ে ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ২৪ বলে ৩৫ (৪টি চার, ৪টি ছক্কা) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫০ বলে ১৩টি চার ও চার ছক্কায় ৮৫ রানের দুটি বিস্ফোরক ইনিংসও খেলেছেন।
মমিনুল হক ॥ বিপিএলের প্রথম আসরে খুব আহামরি কিছু করেছেন মমিনুল বিষয়টি এমন নয়। তবে অপরাজিত ৫৩ রানের একটি বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন বরিশাল বার্নার্সের হয়ে। আর সে ইনিংসটি দেখে প্রশংসা করেছিলেন ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ফিল মাস্টার্ড। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অভিভূত। এ ছেলেটির ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল। অনেকদূর যাবে সে।’ মাস্টার্ডের কথা ফলে গেছে বছরের শেষদিকে। গত বছরের নবেম্বর-ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে অভিষেক হয়েছে তাঁর। খুব আহামরী এখানেও কিছু করে দেখাতে পারেননি। তবে সবাইকে আশ্চর্য করে ভয়ঙ্কর স্পিন বোলিং করে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন মূলত ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে পারঙ্গম এ অলরাউন্ডার। প্রথম আসরে বরিশালের হয়ে ২০.৩৩ গড় ও ১৩৫.৫৬ স্ট্রাইকরেটে ৭ ম্যাচ খেলে করেছিলেন ১২২ রান। এবার ১ লাখ ২৭ হাজার মার্কিন ডলারে তাঁর ঠিকানা হয়েছে সিলেট রয়্যালসে।
আবুল হাসান ॥ গত বছর জুন থেকেই এ পেসার আলোচনায় আসেন জিম্বাবুইয়ে সফরে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজের জন্য ঘোষিত জাতীয় দলে ঢোকার পর। এরপর টানা চারটি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলেছেন ২০ বছর বয়েসী এ ডানহাতি পেসার। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে গতিময় বোলার বিবেচিত হলেও বল হাতে নয়, বরং ব্যাট হাতেই চমক দেখিয়েছেন তিনি। গত বছরের নবেম্বর-ডিসেম্বরে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক ম্যাচেই এক অভূতপূর্ব ঘটনার জন্ম দেন ১০ নম্বরে নেমে শতরান হাঁকিয়ে। ছুঁয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়ার রেগি ডাফের ১৯০২ সালে গড়া একমাত্র রেকর্ডকে। তাই প্রথম বিপিএলে পেসার রুবেলের ইনজুরির কারণে পরিবর্তিত বোলার হিসেবে সিলেট রয়্যালসে যোগ দেয়ার সুযোগ পেলেও এবার তাঁকে নিলামে ১ লাখ ২১ হাজার মার্কিন ডলারে কিনে নিয়েছে দুরন্ত রাজশাহী।

No comments

Powered by Blogger.