সীমান্ত হাট সপ্তাহে তিন দিন বসবে, উপকৃত হবেন স্থানীয়রা- পহেলা বৈশাখ নয়, প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলে হাট বসবে যে কোন সময় by মিজান চৌধুরী

'৭২-এর আলোকে পরিচালনা হবে সীমানত্ম হাট। কোন যানবাহন পণ্য নিয়ে ঢুকতে পারবে না সীমানত্ম হাটে। বিক্রেতাদের মাথায় করে পণ্য আনা-নেয়া করতে হবে। সপ্তাহে তিনদিন হাট খোলা থাকবে।
সীমানত্মবর্তী এলাকার লোকজনের হাটে প্রবেশ করতে পাসপোর্ট লাগবে না। শুধু ইসু্য করা হবে পাস। সীমানত্ম হাটের চারদিকে থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা। রাতে হাট বন্ধ থাকবে। হাটে পণ্য বেচাকেনার ব্যাপারে দুই দেশের মুদ্রা বিনিময় বিষয়টি আলোচনারভিত্তিতে ঠিক করা হবে। হাটে বিক্রির জন্য পণ্যের তালিকা তৈরি করবে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের কাস্টমস বিভাগ। তবে পহেলা বৈশাখ নয়, প্রস্তুতি চূড়ানত্ম হলেই যেকোন সময় সীমানত্ম হাট শুরম্ন হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিআই শাখা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন। ওই সফরকালে দুই দেশের ভাল কাজের জন্য যৌথ ইশতেহার তৈরি করা হয়। ওই ইশতেহারের ৩২ থেকে ৩৮ নম্বর ধারাতে উভয় দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে বিশদ উলেস্নখ করা হয়েছে। ইশতেহার বাসত্মবায়নের প্রক্রিয়া হিসেবে সীমানত্ম হাট বসানো হচ্ছে। এতে উভয় দেশের লোক এই হাট থেকে উপকৃত হবেন। বিনা শুল্কে পণ্য বেচাকেনা করতে পারবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক অবস্থায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সোনারহাট ও ভারতের লিংখাট সীমানত্মে একটি, দ্বিতীয়টি সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার লাউয়ারগর সীমানত্ম এলাকায় এবং ভারতের কালিয়ারচর এলাকায় এবং তৃতীয় সীমানত্ম হাট হবে কুড়িগ্রামের বাজিতপুর উপজেলার বালিয়াবাড়িতে এবং ভারতের নলিয়াকাটা নামক স্থানে। প্রথম অবস্থায় পাঁচটি সীমানত্ম হাট শুরম্নর কথা ছিল। পরবর্তীতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে তিনটির কার্যক্রম শুরম্ন করা হবে। এই কার্যক্রমের সঙ্গে সম্মতি জানিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার রজিত মিত্র।
এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারম্নক খান জনকণ্ঠকে জানান, সীমানত্ম হাট মানে এই নয় সীমানত্মজুড়ে হাটবাজার বসবে। প্রাথমিকভাবে তিনটি পয়েন্টে দুই দেশের লোকজন পণ্য বিক্রি করবেন। পণ্য বিক্রির ব্যাপারে মুদ্রা বিনিময় হার কিভাবে হবে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কারেন্সি বিনিময় একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়। কিভাবে হাটে মুদ্রা বিনিময় হবে তা উভয় দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে। এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যৌথ ইশতেহারের বর্ণিত উভয় দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য বৃদ্ধির পদপে বাসত্মবায়নের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব পদপে বাসত্মবায়ন করা হবে। ১৯৭২ সালে এই দেশে সীমানত্ম হাট পরিচালনা হয়েছে। ওই আলোকে আমরা নতুন করে এই হাট পরিচালনা করব। সীমানত্ম হাটে নির্দিষ্ট এলাকার লোকজন উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারবেন। সিলেটের গোয়াইনহাট উপজেলার লোকজনের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য দেশের অভ্যনত্মরের অনেক ভেতরে আসতে হয়। পাশাপাশি ভারতে সীমানত্ম এলাকায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য তাদের অনেক দূর যেতে হয়। এই হাট হলে উভয় দেশের লোকজনের একটি বাজার সৃষ্টি হবে। দূরে বিক্রির জন্য যেতে হবে না। উভয় দেশের লোকজন উপকৃত হবেন।
সূত্রমতে, সীমানত্ম হাট এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্তিরা এই হাটে পণ্য নিয়ে এসে বিক্রি করতে পারবেন। এই হাটে কোন স্থায়ী অবকাঠামো, দোকানপাট থাকবে না। সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হাট চালু থাকবে। হাটে কোন্ কোন্ পণ্য বিক্রি করা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে কাস্টমস বিভাগ পণ্যের তালিকা তৈরি করবে। এই হাটে পণ্য বিক্রি করতে কোন শুল্ক দিতে হবে না। হাটের বাইরে বিডিআর ও বিএসএফ পাহারা দেবে। পণ্য আনা-নেয়া করতে হবে বিক্রেতাদের মাথায় করে।
এফটিআই বিভাগের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, সীমানত্ম হাট শুরম্ন হলে লাভবান বেশি হবে বাংলাদেশ। কারণ দেশ থেকে পণ্য কম যায়। কিনত্মু আসে বেশি। এ ছাড়া সীমানত্ম এলাকা দিয়ে প্রতিদিন সীমানত্মবাসী উভয় দেশে যাতায়াত করছেন। কেনাকাটা করছেন বেআইনীভাবে। এটা বৈধতা পেলে উভয় দেশের জন্য ভাল হবে।
উলেস্নখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশ থেকে ২৭ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। ভারত থেকে বাংলাদেশ পণ্য আমদানি করেছে ২৮৪ কোটি ডলারের।

No comments

Powered by Blogger.