পাকিস্তানিদের ছাড়াই বিপিএল?

দিনভর অপেক্ষা। বিভ্রান্তি। অবশেষে সিদ্ধান্ত। আজ সকাল ১০টার মধ্যে পিসিবি ইতিবাচক সাড়া না দিলে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ছাড়াই শুরু হয়ে যাবে বিপিএল। সেটি পূর্বনির্ধারিত ১৮ ডিসেম্বরেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আগামীকাল। গতকাল সন্ধ্যায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এক সভা শেষে হওয়া সংবাদ ব্রিফিংয়ে সিদ্ধান্তটা জানালেন কাউন্সিলের প্রধান আফজালুর রহমান সিনহা। ‘পিসিবির কাছ থেকে আমরা এখনো কিছু পাইনি। ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও বলেছে, পাকিস্তান থেকে খেলোয়াড়েরা জানিয়েছে, তারা বোর্ডের এনওসি পায়নি। আমরা আজ (গতকাল) পিসিবিকে আরেকটা চিঠি (ই-মেইল) দিয়েছি। আগামীকাল (আজ) সকাল ১০টার মধ্যে পিসিবি কিছু না জানালে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছাড়াই বিপিএল হবে’—বলেছেন বিপিএলের প্রধান। চিঠিতে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে বিপিএলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন পুরোনো কথাটাই, ‘বোর্ড সভাপতি আগেই বলেছেন, পাকিস্তানে আমরা নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠাব। তারা ইতিবাচক রিপোর্ট দিলে আমরা অবশ্যই সেখানে দল পাঠাব।’
এর আগে দিনভর বিপিএলে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের আসা নিয়ে নানা গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবির কার্যালয়ে। দুপুরে মল্লিকই আশার কথা শুনিয়েছিলেন, ‘কাল (পরশু) আমাদের বোর্ড সভাপতি পিসিবির সভাপতির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এরপর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আজ (গতকাল) পাকিস্তানের ছয়জন খেলোয়াড় চলে আসছে। কাল (আজ) আটজন আসবে। অন্যরাও চলে আসবে।’ বিকেল নাগাদ তিনিই দিয়েছেন ভিন্ন বক্তব্য, ‘এখনো কিছু নিশ্চিত হয়নি। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বলেছি প্ল্যান বি ভাবতে।’
পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা না এলে প্ল্যান ‘বি’ কী হবে, সন্ধ্যায় সেটা জানিয়েছেন আফজালুর, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বলা হয়েছে, তারা স্ট্যান্ড বাই তালিকা থেকে খেলোয়াড় নিতে পারবে। প্রয়োজনে নিলাম তালিকার বাইরে থেকেও খেলোয়াড় নিতে পারবে।’ পিসিবির সঙ্গে এখনো ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ আলোচনা হচ্ছে দাবি করলেও বিপিএলে খেলোয়াড় দেওয়া নিয়ে পিসিবির আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি, ‘তারা একটা অবস্থান নিয়েছে, আমরাও একটা অবস্থান নিয়েছি। আমরা মনে করেছিলাম, পিসিবি এটা করবে না। পেশাদার হলে আচরণেও পেশাদার হতে হবে। পাকিস্তান আমাদের কখনোই বলেনি, তারা খেলোয়াড় দেবে না। এটা অপেশাদার আচরণ। আর পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা না এলে আমরা খেলব না, এটা হবে লজ্জাজনক।’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো দেশের সঙ্গে কোনো শর্ত দিয়ে খেলব না। মাঝখানে যদি কেউ কোনো বিবৃতি দিয়ে থাকে, সেটার জন্য বিসিবি দায়ী নয়।’ আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও একটি সূত্রে জানা গেছে, পিসিবি বিপিএলের জন্য খেলোয়াড় না দিলে বিসিবি পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে আর আলোচনাই করবে না।
বিসিবি সিদ্ধান্তটা সন্ধ্যায় জানালেও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি সূত্রে বিকেলের মধ্যেই সবার জানা হয়ে যায়, পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছাড়বে না পিসিবি। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে সরাসরি পিসিবির প্রধান জাকা আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, যতক্ষণ না বিসিবি পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়, তাঁরা পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছাড়পত্র দেবেন না। পাকিস্তানে যার যার খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেও একই তথ্য পেয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। ‘খেলোয়াড়েরা ব্যাগ গুছিয়ে বাংলাদেশে আসার জন্য তৈরি। কিন্তু পিসিবি নাকি তাদের এনওসি দিচ্ছে না’—হতাশা নিয়ে বলেছেন একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অবশ্য কালই বিকল্প খেলোয়াড়ের সন্ধানে নেমে গেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। দুরন্ত রাজশাহীর মালিক মুশফিকুর রহমান যেমন জানালেন, পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের জায়গায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকে খেলোয়াড় আনার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এদিকে শুধু পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিপিএলের বাকি সব কার্যক্রমই স্থবির হয়ে পড়েছে। কাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, অথচ প্রস্তুতির বেশির ভাগটাই বাকি বলে উদ্বিগ্ন বিপিএলের সদস্যসচিব, ‘আমরা এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নই। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের নিয়ে অনিশ্চয়তায় সবই আটকে গেছে।’
হাতে আছে আজকের দিনটাই। এই এক দিনে সব গুছিয়ে বিপিএল শুরু করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বিসিবির।

No comments

Powered by Blogger.