'সামরিক শাসনের পথ রম্নদ্ধ হলো'

উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের ফলে ভবিষ্যতে দেশে সামরিক শাসনের পথ চিরতরে বন্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, রায়ের মাধ্যমে '৭২-এর সংবিধানের মূল চেতনায় ফেরার পথ উন্মুক্ত হলো।
যা গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ রায়ে সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ বহাল রাখে। জনাকীর্ণ আদালতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, "পিটিশন আর ডিসমিসড উইথ সাম মডিফিকেশন এ্যান্ড অবজারভেশন।" ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া রায়ে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যনত্ম খোন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনী ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগ পর্যনত্ম সরকার পরিবর্তন সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি বলেও হাইকোর্টের সেই রায়ে অভিমত দেয়া হয়। তবে আদালত সে সময় জনস্বার্থে করা সরকারের বেশকিছু বেআইনী কাজকে মওকুফ করে দেয়। সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়ে ১৯৭৭ সালে সালের ৭ নম্বর মাশর্াল ল রেগুলেশন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদনে হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছিল।
হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর তৎকালীন ৰমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রায় স্থগিতের আবেদন করলেও পরবতর্ীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়। তবে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন এবং জামায়াতের কয়েকজন আইনজীবী লিভ টু আপীল করেছিলেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে সামরিক শাসকদের ৰমতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। তিনি এই রায়কে দেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এক বিরাট বিজয় হিসেবে উলেস্নখ্য করে বলেন, রায়টি দেশের শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে এক বিরাট বিজয় হিসেবে গণ্য হলো। আমাদের সংবিধানে মাশার্ল ল বলে কিছু নেই। খন্দকার মোশতাক, সায়েম ও জিয়াউর রহমান সংবিধান বহিভর্ূতভাবে মাশর্াল ল দিয়ে ৰমতায় এসেছেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে তারা অবৈধ ৰমতা গ্রহণকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে অন্যায়ভাবে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কোন অবৈধ ৰমতাকে বৈধতা দেয়া যায় না। এর মাধ্যমে বিশ্বের যে সকল সভ্য দেশে সামরিক শাসন নেই, বাংলাদেশও সে সকল দেশের কাতারে উঠে এলো। রায়ের ফলে সংবিধানের মূল চারটি সত্মম্ভ ফিরে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপীল বিভাগের আদেশের বিসত্মারিত না পাওয়া গেলেও বলা যায়, সংবিধানে মূল যে চারটি সত্মম্ভ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেৰতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ পুনপর্্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি শাসনতান্ত্রিক বিষয়। অবৈধ শাসকরা মাশর্াল ল জারি করে সংবিধানের যে সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করেছে, এই রায়ের মাধ্যমে তা বাতিল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সামরিক আইন বা মাশর্াল ল সংবিধানের কোথাও নেই। কিছু উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকতর্া মাশর্াল ল দিয়ে ৰমতা দখল করতে চায়। এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে সামরিক শাসনের পথ বন্ধ হবে। সামরিক শাসকরা ৰমতা গ্রহণের আগে চিনত্মা করবে তারা অবৈধ কাজ করছে। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওয়ান ইলেভেনের পর পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের সুফল পাওয়া গেছে। রায়টি থাকার কারণে ওয়ান ইলেভেনের পর সামরিক বাহিনী সরাসরি রাজনীতিতে আসেনি।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে আমাদের মূল সংবিধানে রাষ্ট্রীয় যে চার মূলনীতি ছিল তা প্রতিষ্ঠা করার পথ উন্মুক্ত হলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে ওই চার মূলনীতির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। আইনমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে সামরিক শাসন, একদলীয় শাসনকে নাকচ করা হয়েছে এবং গনতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা আপীল খারিজের রায়ের সনত্মোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি। মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ৰেত্রে এই রায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। সকালে সচিবালয়ের মন্ত্রীর কার্যালয়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনের সংস্কার, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের রায় বহালসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে মরিয়ার্টি সাংবাদিকদের বলেন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠার ৰেত্রে বাংলাদেশ তার কাঙ্ৰিত লৰ্যে পেঁৗছবে।

No comments

Powered by Blogger.