ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা-পুতিন বৈঠক- ১২ হাজার কোটি টাকার দুই ঋণচুক্তি সই

সমরাস্ত্র কেনা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা (১৫০ কোটি মার্কিন ডলার) পেতে দুটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে সমরাস্ত্র কেনার জন্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আরও চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে দেশটি। গতকাল মঙ্গলবার মস্কোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ ঘোষণা দেন। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি রাশিয়া থেকে কিনবে বাংলাদেশ।
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শেষে ক্রেমলিন থেকে হোটেল লবিতে এসে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। এ সফরের ফলে আমাদের বন্ধুত্ব নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে সম্ভাবনার এক নতুন দরজা খুলে গেছে।’
পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এতে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে পুতিন অস্ত্র বিক্রি ও পরবর্তী সেবা প্রদানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমরা দুই দেশই অস্ত্র-প্রযুক্তি সহায়তা বাড়াতে আগ্রহী।’ তবে বাংলাদেশ কোন ধরনের অস্ত্র কিনছে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি।
পুতিন বলেন, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের রূপপুরে দেশটির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল সর্বাধুনিক প্রযুক্তিই সরবরাহ করছি না...পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক পর্যায়ে আর্থিকভাবে সহযোগিতাও দিচ্ছি।’
রাশিয়ার পারমাণবিক গবেষণা করপোরেশন রোসাটমের প্রধান সার্গেই কিরিয়ানকো বলেন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রযুক্তি ও পরিবেশগত নিরীক্ষা চলতি বছরের মধ্যে শেষ করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার মেগাওয়াট করে দুটি চুল্লি থাকবে। ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। তবে তিনি বলেন, পরে বাংলাদেশের আরও ঋণের প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হাউসে হাসিনা-পুতিন বৈঠক শেষে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুটিসহ তিনটি চুক্তি ও ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। এ ছাড়া, সন্ত্রাস দমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি বিনিময়ের ওপর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বিবিসি রেডিওকে বলেন, বাংলাদেশের রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের চুক্তিসহ নয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। রাশিয়া থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণে এই সমরাস্ত্র কেনা হচ্ছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে এই অস্ত্র কেনা হচ্ছে।
রাশিয়ার ঋণে কী ধরনের সমরাস্ত্র কেনা হচ্ছে এবং এর সুদের হার কেমন—প্রধানমন্ত্রীর মস্কো সফরের আগে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছিলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করছে ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ)। এ চুক্তিতে যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা হয়, খুব স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
সহজ শর্তে, নাকি কঠিন শর্তে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, এর কোনোটাই না।
মুঠোফোনে ইআরডি সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
গত চার দশকে শেখ হাসিনাই প্রথম কোনো শীর্ষনেতা, যিনি রাশিয়া সফরে গেছেন। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে যান।
আইসিটি খাতে রাশিয়ার বিনিয়োগ কামনা: রাশিয়ার যোগাযোগ ও গণমাধ্যমবিষয়ক মন্ত্রী নিকোলাই নিকিফোরভ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেল কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পল্লি এলাকায় ইন্টারনেটের অধিক গতি ও ব্যান্ডউইডথ সুবিধাসহ আইসিটি সম্প্রসারণে আরও বেশি রুশ বিনিয়োগ কামনা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা: পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত অজানা রুশ সেনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ হয়।
এ সময় শেখ রেহানা, তাঁর দুই মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও আমরিনা সিদ্দিক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। রয়টার্স ও বাসস।

No comments

Powered by Blogger.