একক বিশ্ব গড়ছে ফেসবুক, টুইটার, মাইস্পেস by ফিরোজ মান্না

ইন্টারনেটে এখন হাজারও ওয়েবসাইট গোটা দুনিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রয়োজন এবং সময় বাঁচানোর জন্য এসব ওয়েবসাইটের ব্যবহার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। নানা ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে ব্যবহারকারীরা পরিচিত হচ্ছে নিত্যনতুন ওয়েব দুনিয়ার সাঙ্গে।
এ কারণেই মানুষ পুরনো ডাক ব্যবস্থা থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছে। একবিংশ শতব্দীর শুরুতে এই নির্ভরতা চলে যায় মোবাইল ফোনের ওপর। আর তথ্য আদান প্রদানের জন্য মানুষ এখন নির্ভর করছে ওয়েবসাইটগুলোর ওপর। দিন যতই যাচ্ছে মানুষ আরও বেশি যান্ত্রিক হচ্ছে। তথ্যের আদান প্রদানের জন্য মানুষ বেছে নিচ্ছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং কম ব্যয়সাপে মাধ্যম। ক্রমাগত ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে। ইন্টারনেটকে এখন মানুষ জীবনের একটি অংশ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। 'আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই জ্যোতির আয়েশ।ম্ব
তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে মানুষ কেন বসে থাকবে? তাই তো ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এখন আর কোন সীমা নেই। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভৌগোলিক সীমান্ত ঘিরে দিলেও মানুষ ঘরে বসেই চলে যাচ্ছে তার-ঘেরা দেশে দেশের অলি-গলি সবখানে। 'কেন এই পাসপোর্ট পাসপোর্ট কাঁটা তার কাঁটার খেলা_ পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো।ম্ব কবিতার এ দুম্বটি লাইনের মতো গোটা পৃথিবীর অধিকার এখন প্রতিটি মানুষ ইন্টারনেটের কল্যাণে ভোগ করতে পারছেন। সীমানা পেরিয়ে মুহূর্তেই চলে যাচ্ছে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে। বন্ধুকে জানা, জানানো, নিজের ভাচর্ুয়াল জগত তৈরি করে ইন্টারনেট মানুষের জন্য আলাদা একটি জগত তৈরি করেছে। মানুষের এই কাজের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান এবং তাদের ওয়েবসাইট। প্রতিদিনের ব্যবহার্য এসব সাইট বা সেবা মাধ্যমগুলোর মধ্যে গুগল, জি-মেইল, ইয়াহু, ইয়াহু-মেইল, হটমেইল ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া মনের ভাবনাগুলো খুব সহজে প্রকাশের জন্য ব্লগ-সাইটগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর ভিতর ফেসবুক, মাইস্পেস, টুইটার উল্লেখযোগ্য। অবশ্য ব্লগের মাধ্যমে অনেকে নিজের মতামত দিতে গিয়ে অনেক সময় অরুচির পরিচয়ও দিচ্ছে। আবার ফেসবুকের মাধ্যমে এখন পাত্রপাত্রী পর্যন্ত পচ্ছন্দ করা হচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে অনেকে বিয়ে করছেন। সামাজিক এসব সাইটের কল্যাণে মানুষের জীবনধারার এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেক দিন দেখা নেই, অনেকটা হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পেতে ফেসবুক এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ওয়াল, সুপার ওয়াল, পোস্ট, স্ট্যাটাস, ফ্রেন্ড লিস্ট, ইউটপ ইত্যাদি খুব জনপ্রিয় শব্দ। এ শব্দগুলোর প্রতিটির সঙ্গে যোগ রয়েছে স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটের। স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো বন্ধুদের মধ্যে আলাদা ভাচর্ুয়াল জগত তৈরি করে দিয়েছে। তথ্যের আদান প্রদান তো আছেই, সাথে সাথে বিনোদনের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই সাইটগুলো। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, অফিস-আদালতের কর্মচারী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মানুষদের আকৃষ্ট করছে এই সাইটগুলো। অবসর সময় কাটানো, সরাসরি প্রয়োজনীয় তথ্যের আদান প্রদানে এখন এইসব সাইটকেই বেছে নিচ্ছে সবাই। গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সাথে একটি সাইটের সাথে পরিচিতির মাত্রাটা অনেকটাই উপচেপড়া। ফেসবুক নামের স্যোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটটি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। আমেরিকা, কানাডা, সমগ্র ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, চায়না, জাপান, সিঙ্গাপুর পেরিয়ে আমাদের দণি এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাতে প্রতিদিনই জনপ্রিয় থেকে জনপ্রিয়তর হচ্ছে এ ফেসবুক। এছাড়াও এই ধরনের আরও কিছু সাইট আছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে মাইস্পেস, টুইটার উল্লেখযোগ্য।
ব্যক্তিমালিকানাধীন ফেসবুক সাইটটির জন্ম ২০০৩ সালে। মার্ক জুকারবার্গ, তাঁর কয়েকজন রুমমেট এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের কয়েকজন ছাত্র মিলে এই সাইটটি গড়ে তোলেন। হাভর্ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের মাঝে যোগাযোগ করার জন্য মার্ক তাঁর রুমে বসে সাইটটি বন্ধুদের মাধ্যমে গড়ে তোলেন। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগে এটি নতুন মাত্রা যোগ করে। আস্তে আস্তে এটি জনপ্রিয় হয়। হার্ভার্ড থেকে স্ট্যানফোর্ড, ক্রমান্বয়ে পুরো যুক্তরাস্ট্রে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ফেসবুকের ৩৫০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী আছে। সাইটটি ৬০টিরও বেশি ভাষায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮-এর এক হিসেবে সাইটটি ৩০০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। কাজের সুবিধার জন্য ফেসবুকের যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যন্ড ও সাউথ কোরিয়ায় তিনটি প্রধান কাযর্ালয় আছে। অন্য সাইট থেকে যেমন আপনি শুধু তথ্য পেয়ে থাকেন, সামজিক নেটওয়ার্ক সাইট ঠিক তেমনটি নয়। এটিকে বলা যায় একটি অনলাইন কমিউনিটি তথা ভাচর্ুয়াল সামাজিকতা পালনের উপায়। সরাসরি বন্ধু কিংবা পরিচিত, অপরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় বিধায় বিশ্বব্যাপী এই সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একসাথে ই-মেইল এবং মোবাইল ফোনের মতো কাজ করছে সাইটগুলো।
ফেসবুকের পথচলা শুরুর অনেক আগেই 'মাই স্পেসম্ব নামে আরেকটি ওয়েব ইউটিলিটির হাত ধরে। মাই স্পেসও ভাল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল আমেরিকা ও কানাডার ব্যবহারকারীদের মাঝে। আমেরিকা মহাদেশের বাইরেও ছিল মাই স্পেসের প্রভাব। পরবতর্ীতে 'জরপিয়াম্ব, 'নেট লগম্ব ও এমন আরও অনেক ওয়েব আসলেও আমাদের দেশে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পায় 'হাই ফাইভম্ব নামে অন্য একটি সাইট। তবে ২০০৬- এর শেষদিক থেকেই ঢাকার ব্যবহারকারীদের মাঝে নতুর চমক সৃষ্টি করে ফেসবুক।
ফেসবুকের মতো টুইটার একটি মুক্ত সামাজিক নেটওয়ার্ক। ব্যবহারকরীরা এর মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে, যাকে টুইটার বলে। টুইটার-এ একজন ব্যবহারকারী ১৪০ শব্দ পর্যন্ত লিখতে পারেন। এই লেখা ব্যবহারকারী এবং তার বন্ধুরা দেখতে পারেন। এই সাইটিতে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা রযেছে। ব্যবহারকারী চাইলে নির্দিষ্ট বন্ধুদের জন্য তার টুইটার দেখার ব্যবস্থা করতে পারেন। একজন ব্যবহারকারী তার লেখা টুইটারের ওয়েবসাইট, সংপ্তি বাতর্া অথবা বাহ্যিক এ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে আদান প্রদান করতে পারেন। এজন্য ব্যবহারকারীকে পয়সা খরচ করতে হয় না।
টুইটারের সৃষ্টি ২০০৬ সালে। আমেরিকান নাগরিক জ্যাক ড্রসি একটি কৌতুহল থেকে এটি তৈরি করেন। বন্ধুরা কে কি করছে তার খবর খুব সহজে কিভাবে পাওয়া যায়? এমন চিন্তা থেকে তিনি একটি সাধারণ মাধ্যম খুঁজতে থাকেন। এমন একটা ব্যবস্থা বের করতে হবে যেখানে কেউ কিছু লিখলে অন্যরা জানতে-দেখতে পারবে। ড্রসি তাঁর এই চিন্তা তাঁর সহকমর্ীদের সাথে আলোচনা করলে তাঁরা একটি প্রটোটাইপ নিমর্াণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ড্রসির উদ্যোগে ২০০৬ সালের মার্চে দুই সপ্তাহের মধ্যে এসএমএসভিত্তিক সাইট গড়ে তোলেন। পরে আগস্টেই এটি প্রকাশ্যে চালু হয়ে যায়। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সানফ্রানিসকোর ুদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে চাকরির তথ্য আদান প্রদানের জন্য সহজ একটি মাধ্যম তৈরি করা। চাকরির তথ্য আদান প্রদানের েেত্র কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর এসএমএসভিত্তিক প্রটোটাইপটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০০৭ সালে এসে টুইটারকে নানা প্রক্রিয়ায় একত্রিত করে একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট হিসেবে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যেই এই সাইটটির জনপ্রিয়তা বহুগুণে বেড়ে যায়। এরপর বিশ্বব্যপী টুইটারের জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকে। এখন এই সাইটটি ব্যাপক জনপ্রিয়।
ব্যক্তিমালাকানাধীন এই সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইটের প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোতে। বর্তমানে টুইটারের চেয়ারম্যান জ্যাক ড্রসি, সিইও ইভান ইউলিয়ামসবং ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর বিজস্টোন। প্রধান কার্যালয়ে বর্তমানে কাজ করছেন ১৫৬ কর্মকর্তা। টুইটার তাদের আয় ৫৭ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। দিন দিন যে হারে গ্রাহক বাড়ছে তাতে আয়ের পরিমাণ অল্পদিনের মধ্যে দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়েব বিশ্বে আরেকটি সামাজিক নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটের নাম মাইস্পেস । এর মালিক বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ প্রতিষ্ঠান নিউজ কপের্ারেশন। ২০০৬ সালে মাইস্পেস যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাপো জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক সাইট হয়েছিল। এমনকি ২০০৮ সালের এপ্রিলে এর ভিজিটর প্রধান প্রতিযোগী ফেসবুককেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মাইস্পেসের যাত্রা শুরু হয় "বন্ধুদের একটি জায়গাঃ এই স্লোগান নিয়ে ২০০৩ সালে। মাইস্পেসের হেডকোয়াটর্ার ক্যালিফোর্নিয়ার বেভার হর্াউস। ১৫টি ভাষায় পরিচালিত এই সাইটির পেছনে প্রতিদিন কাজ করেন এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান টম এন্ডারসন।
২০০২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় সোসাল নেটওয়ার্ক সাইট ফ্রেন্ডস্টার চালু হবার পর সেখানের কিছু কর্মচারী সোসাল নেটওয়ার্ক সাইটের জনিপ্রিয় ভবিষ্যতের বিষয় বুঝতে পারেন। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে মাত্র ১০ দিনে মাইস্পেস ওয়েব বিশ্বে ঢোকার জন্য প্রস্তুত হয়। যারা মাইস্পেস টিমে কাজ করছিল তাদের পযর্াপ্ত অবকাঠামো, অর্থ, জনশক্তি, কলাকুশলী, ব্যান্ডউইথ ছিল। এই প্রজেক্টের পুরো দায়িত্বে ছিলেন ই-ইউনিভার্সের প্রতিষ্ঠাতা ব্রাড গ্রিনিজপ্যান। তাঁর মাধ্যমেই সেখানে সিইও হিসেবে যোগ দেন ক্রিস ডিওলফ এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে টম এন্ডারসন। মাইস্পেস তৈরির ওই টিমে ই-ইউনিভার্সের প্রোগ্রামার ও প্রয়োজনীয় কলাকুশলী কাজ করে এবং প্রথমদিকে মাইস্পেসের অধিকাংশ কর্মচারীই ছিল ই-ইউনিভার্সের। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে নিউজ কপের্ারেশনের মালিক রূপার্ট মার্ডক ৫৮০ মিলিয়ন ডলারে মাইস্পেস কিনে নেন। এরপর সেটি আরও বৃহৎ আকার ধারণ করে।
তথ্যের আদান প্রদানের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে ই-মেইল অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। তথ্য আদান প্রদানের েেত্র নিরাপদ এবং সহজ মাধ্যম হলো ই-মেইল। ৯০-এর দশকে যখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ই-মেইল সার্ভিস দেয়া শুরু করে তখন থেকেই ই-মেইল ব্যবহারের প্রতি মানুষের ঝোঁক তৈরি হয়। ইয়াহু, গুগল, মাইক্রোসফট্, এএলও প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষকে নিরাপদে তথ্যের আদান প্রদানের ব্যবস্থা করলে ইন্টারনেটে ই-মেইলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় হুহু করে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে ই-মেইল হয়ে ওঠে তথ্য আদান প্রদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বে জনপ্রিয় ই-মেইল সেবা দিচ্ছে জি-মেইল, ইয়াহু-মেইল, উইন্ডোজ লাইভ হট মেইল, এএলও-মেইলসহ কিছু আন্তজর্াতিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান। তবে সর্বাধিক জনপ্রিয় সেবা দিচ্ছে জি-মেইল এবং ইয়াহু মেইল।
ইয়াহু আমেরিকার একটি পাবলিক কপের্ারেশন। এটি সারাবিশ্বে ইন্টারনেট সেবা দেয়। এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ওয়েব পোটর্াল, সার্স ইঞ্জিন হিসেবে। এছাড়া ইয়াহু আরও অনেক সেবা দেয়। এর মধ্যে ইয়াহু ডিরেক্টরি, ইয়াহু মেইল, ইয়াহু ইয়াহু সংবাদ, বিজ্ঞাপন, ইয়াহু ম্যাপ, ইয়াহু ভিডিও। ইয়াহু জানুয়ারি, ২০১০ পর্যন্ত অনলাইন প্রদর্শন করা বিজ্ঞাপনে বিশ্বের বৃহত্তম বাজার শেয়ার ধরেছিল। ২০০৯ সালের মে মাসের হিসেব অনুযায়ী এটি বিশ্বের দ্বিতীয় পরিদর্শিত ওয়েবসাইট। অক্টোবর ২০০৭ পর্যন্ত ইয়াহুতে গড়পড়তা ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন পাতা প্রতিদিন দেয়া হয়েছে। এই জনপ্রিয় সাইটটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জেরি ইয়াং এবং ডেভিড ফিলো ইয়াহু প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এর সদর দপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভেইলে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়াম্যান রয় জে. বসটক। ২০০৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী ইয়াহুর ১৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি রয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি মোট আয় ছিল ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। ইয়াহুর মূল ব্যবসা ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সফটওয়্যার।
'উইন্ডোজ লাইভ হটমেইলম্ব মাইক্রোসফটের একটি ই-মেইল সার্ভিস সাইট। ১৯৯৬ সালে হটমেইল, ২০০৭ সালের আগে এটি এমএসএন হটমেইল হিসেবে পরিচিত ছিল। সাবের বাহথিন এবং জ্যাক স্মিথ এই ই-মেইল সার্ভিস তৈরি করেন। ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে তাদের তৈরিকৃত সাইট হটমেইল হিসেবে ওয়েব জগতে প্রবেশ করে। হটমেইল প্রথম দিকের যে কয়টি ই-মেইল সার্ভিস দিয়েছে তাদের একটি। এরা তখন থেকেই বিনা পয়সায় ই-মেইল সার্ভিস দিয়েছে। প্রথমদিকে যখন ১৯৯৫ এবং এর এর আগে এও পরে যখন ই-মেইল সেবা শুরু হয় তখন এর সংখ্যা ছিল গুটিকয়েক। যে কয়েকটিই প্রতিষ্ঠান হয়েছিল তা জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা খুব সহজে তথ্যের আদান প্রদান করতে পারত।
শুরুর পর থেকেই হটমেইলের জনপ্রিয়তা বাড় ছিল। জনপ্রিয়তার তীব্রতা অনুভব করে ১৯৯৭ সালে মাইক্রোসফট ৪০০ মিলিয়ন ডলারে হটমেইল কিনে নেয়। এরপর তার নামকরণ করা হয় এমএসএন হটমেইল। ২০০৫ সালে দাফতরিকভাবে এর নামকরণ উইন্ডোজ লাইভ হটমেইল করা হলেও বিশ্বব্যাপী এটি প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। বর্তমানে ৩৬টি ভাষায় হটমেইল সারাবিশ্বে সেবা দিচ্ছে।
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের জন্ম ১৯৯৮ সালে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র লেরি পেজ এবং সার্জি ব্রিন এই সাইট তৈরি করেন। ইয়াহুর মতো এরাও সংবাদ, ছবি, ম্যাপ, মেইলসহ নানা ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ব্যক্তিমালিকানাধীন থাকলেও ২০০৪ সালের ১৯ আগস্টে এটি পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির মূল ব্যবসা ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সফটওয়্যার। ২০০৮ সালে গুগলের আয় ছিল ২১ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাযর্ালয় ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে।
গুগলের উল্লেখযোগ্য সেবা জি-মেইল। গুগল ই-মেইল সার্ভিস শুরু করে ২০০৪ সালের ২১ মার্চে। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে এক হিসেবে জি-মেইল প্রতিমাসে ১৪৬ মিলয়ন মানুষ ব্যবহার করেছে। প্রতিজন ব্যবহারকারীর জন্য জি-মেইল ১ গিগাবাইট জায়গা দিয়েছে। যা কিনা ওই ব্যক্তির জন্য অনেক বড় জায়গা। সামাজিক ওয়েবসাইটগুলো ইতিবাচকভাবেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে কেউ কেউ নেতিবাচকভাবেও সাইটগুলোকে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি চীনে গুগলের সার্ভিসের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সেখানে গুগলের সার্ভিসকে হুমকি হিসাবে দেখা হচ্ছে। তারা গুগল নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছে। এ নিয়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। আমেরিকা গুগলের ব্যবসায়ী স্বার্থ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু চীন তার দেশের নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.