পুলিশ সপ্তাহের নামে পুলিশের দাবী সপ্তাহ আসছে

সুমন রহমান: ইংরেজী নতুন বছর এলেই পুলিশের বিভিন্ন ক্ষমতায়তনের দাবী মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।
আর তা পুলিশ সপ্তাহ আয়োজন করে সরকার প্রধানগণের নিকট দাবী আকারে উপস্থাপন করাই এখন পুলিশের আনুষ্ঠানিকতা ও রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অন্য সবাই যখন নতুন বছরে দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, আশা-প্রত্যাশার বাণী নিয়ে হাজির হন, পরিবর্তে নববর্ষে পুলিশ হাজির হন শুধুই দাবী নিয়ে। আর তাতে পুলিশ যত তেল ঢালেন সরকার প্রধানগণকে, কতিপয় ক্ষেত্রে সরকার প্রধান ও সংগীয় মন্ত্রী মিনিস্টারগণ তার চেয়ে বেশি তেল দেন পুলিশকে। পুলিশ বলে কথা। যদি বিপদের দিন একটু হেলপ পাওয়া যায়, পুলিশের লাঠি-পেটা থেকে পরিত্রাণ কিংবা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়, পয়সার বিনিময়ে অবৈধ জমি-জমা উদ্ধার কম কি! তাই অনেক ক্ষমতাধর মন্ত্রী/সচিবগণসহ স্বয়ং সরকার প্রধানও পুলিশের কল্যাণে ব্যস্ত। কিন্তু পুলিশ কিন্তু জনগণের কল্যাণের কথা বলেন না।
এই সব বাণী নিয়ে আসছে আগামী ২২ থেকে ২৫শে জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে পুলিশ সপ্তাহের নামে পুলিশের দাবী সপ্তাহ। এ পুলিশ সপ্তাহে আশা করা হবে আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপের কথা, জনগণের সামাজিক নিরাপত্তার কথা, ছিনতাইকারী মলমপার্টি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজীর বিরুদ্ধে পুলিশের নতুন পদক্ষেপের কথা, থানায় জিডি এজাহার করতে গেলে আর কোন হয়রানী না হবার কথা, নিরপেক্ষ তদন্তের আশার বাণী, ধনী-গরিগ সবার জন্য সমান সেবার কথা, যানজট নিরসনে নতুন পদক্ষেপের কথা। কিন্তু কেউ তা বলে না। এবার বলবে কিনা জানা নেই।
তবে গত ২০১২ এর ৩-৬ জানুয়ারিতে আয়োজিত পুলিশ সপ্তাহের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, কোন কথাই আলোচনা হবে না এবারেও পুলিশ সপ্তাহে কোথাও। পূর্বে পুলিশ সপ্তাহে কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়নিÑ এখন থেকে পুলিশ নিরপেক্ষ, রাজনৈতিক তল্পিবাহক হবে না, থানায় পোস্টিং নিলামমূল্যে অর্থ দিতে হবে না, থানা থেকেও কোন পারসেনটেজ যাবে না পুলিশ কর্মকর্তাগণের কাছে। পুলিশ এখন থেকে আর কোন দোকানপাট, হাটবাজার, ফুটপাত, ব্যবসায়ী, শিল্পকারখানা, সন্ত্রাসী, পতিতা কারও কাছ থেকেই চাঁদা নিবে না। কিন্তু না এ ধরনের কোন কথা শোনা যায় না পুলিশ সপ্তাহে। পুলিশ কর্তৃক লিমন, কাদের ও মিলনসহ অনেক যুবকের নির্মম নির্যাতনের কথাও আলোচিত হয় না, হবেও না। বরং এবারের পুলিশ সপ্তাহের শুরুতেই পুলিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে দাওয়াত দিয়ে এনে অনেকগুলো দাবী পেশ করবেনÑ পুলিশকে নিয়ে পৃথক বিভাগ, সেখানে আইজিপি বিভাগ চালাবেন, অর্থাৎ পুলিশ স্বাধীন হতে চাইবেন, আরও দাবী উত্থাপিত হবে পুলিশ কারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে না, সচিবের পদমর্যাদার আরও (গেড-১) ৩টি পদ চাই, আইজিপি হবেন ফোর-স্টার জেনারেল। র‌্যাবের ব্যাটালিয়ন ও সকল কার্যক্রম জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আনা, সকল নিয়োগের ক্ষমতা থাকতে হবে পুলিশের এককে নিয়ন্ত্রণে। সর্বত্র শুধু ক্ষমতার দাবী। আর তাতেই সন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণা দিবেন-পুলিশের সব দাবী পুরণ করার। তা-না হলে পুলিশ সপ্তাহ কেন! কিন্তু অবাক হবেন এবং দেখবেন পুলিশ সপ্তাহের কর্মসূচীতে কোথায় পুলিশের আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা, কিংবা জনগণের কল্যাণকর/সেবাধর্মী কোন কথা বলা হবে না।
গত বছর ২০১২-এর পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী সভায় প্রদত্ত পুলিশের সমন্বয়ক আইজিপি ফনীভূষণ চৌধুরীর বক্তব্যেই পুলিশের বেপরোয়া দুর্নীতি ও সেবার মান সম্পর্কে একটা চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর বক্তব্যের কিংদাংশ এরূপ: “পুলিশে দুর্নীতি বেড়েছে, সেবারমান কমেছে, চেইন অব কমান্ডা ভেঙ্গে পড়েছে, থানায় গিয়ে মানুষ ভাল ব্যবহার পাচ্ছে না, প্রতিকার পাচ্ছে না, পুলিশের সেবার মান কমে গেছে, থানায় মামলা বা জিডি নিতে অনীহা প্রকাশ করে, চেকপোষ্টের নামে পুলিশ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষকে হয়রানী করে, এ সরকার পুলিশের জন্য অনেক কিছু করলেও পুলিশের কাছ থেকে জনগণ সেবাদানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না, পুলিশের প্রশিক্ষণ, মোটিভেশন ঠিকমত হচ্ছে না, জবাবদিহি নিশ্চিত হচ্ছে না”। তিনি আরও রাজারবাগের উক্ত সভায় বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। কথা বলতে দেয়া হয়নি। কিন্তু তার বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেনÑ “থানায় পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার কিছু হলেও সঠিক”। আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছিলেন “পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের অস্তিত্ব আছে। পুলিশকে আরও সুশৃংখল হওয়া দরকার”। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক দেশী-বিদেশী কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনেও পুলিশকে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ ও মানবাধিকার লংঘনের কথা বলা হয়েছে। প্রকারান্তরে দেশ এখন পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহের এখানেই শেষ নয়। ২২শে জানুয়ারি (২০১৩) তারিখ রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিরাট নৈশভোজের আয়োজন করা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ বড় বড় মন্ত্রী, সচিব, শিল্পপতিরা আসবেন। পুনরায় পুলিশের ক্ষমতায়নের দাবী তোলা হবে। পরদিন ২৩শে জানুয়ারি পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সব বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তখন আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী তোলা হবে, “আইজিপিকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে”। চাই আরও মর্যাদা-থ্রি স্টার জেনারেলের মত। এ মর্যাদার মানে কি সাধারণ জনগণ জানে না। এ ক্ষমতার দাবী না হয়ে যদি সেবার মান উন্নয়নের কথা বলা হতো- তাতে জনগণ আশ্বস্থ হতেন। সকল থানাগুলোকে সেবার মানভিত্তিক টু-স্টার, থ্রি-স্টার, ফোর স্টার, ফাইভ স্টার হলে জনগণ উপকৃত হতো। কিন্তু পুলিশ চায় ক্ষমতার থ্রি-স্টার। গত ২০১২ এর পুলিশ সপ্তাহে পুলিশের দুর্নীতির কথা ফাঁস করে দেয়ায় পুলিশের আইজিপি ফনী ভূষণকে পুলিশ সপ্তাহের (আদলে দাবী সপ্তাহের) অন্যান্য আর কোন অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া হয়নি। গত পুলিশ সপ্তাহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশের দাবী শুনে গণতন্ত্র রক্ষায় তার অব্যাহত সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ পুলিশ ব্যতীত এদেশ রক্ষা ও উন্নয়নে আর কেউ হতে পারে না।
কিন্তু এ বছরে পুলিশ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী হয়তোবা একই ঘোষণা দিবেন এবং দাবীসমূহ পূরণ করবেন। পুলিশের জন্য গত ৪ বছরে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। সকল কর্মকর্তাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার দামের পাজেরো গাড়ী, সাভার-আমিন বাজার-টঙ্গী-গুলশান-বসুন্ধরাতে ফ্লাট/প্লট বরাদ্দ, ২ বার/৩ বার জাতিসংঘ মিশনে প্রেরণ, স্ত্রী-কন্যার জন্য গাড়ি, জুতা/জামাকাপড় পরিস্কারের জন্য রানার, বাজার ঘাট করার জন্য কনস্টেবল এবং কর্মকর্তাগণের মোবাইল, কলম, ডাইরি, ব্যাগ ইত্যাদি রাখার জন্য দেয়া হয়েছে পৃথক রানার। আর সকল কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেয়া হয়েছে বডিগার্ড। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তায় তাদের সময় কোথায়!
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পুলিশের জন্য রেশন ভাতা ১০০% করা হয়েছে, মাসিক ভাতা দেয়া হয়েছে, শিল্প পুলিশ মহিলা পুলিশ গঠন করা হয়েছে, সাহসিকতার কাজের জন্য রাষ্ট্রপতিপদক প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতি থানার জন্য পিকআপ, মোটরসাইকেল দেয়া হয়েছে, জ্বালানি ও তদন্ত খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশের জন্য নতুন ৩২,০০০ জনবলের অনুমোদন ও নতুন ২৮,০০০ জনবলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে মহিলা পুলিশসহ নিয়মিত পুলিশ ইউনিট প্রেরণ করা হচ্ছে। নতুন থানা ভবন ও পুলিশ ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০টি জেলায় জেলায় পুলিশের হাসপাতাল করা হয়েছে। এত প্রাপ্তির পরও গরিব এদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা জনগণের কথা বলতে ভুলে যান। সেবা দানের কথা বলতে চান না।
গত বছর পুলিশ সপ্তাহের ৩য় দিনে (০৫ জানুয়ারী ২০১২) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আয়োজন করা হয়েছিল মধ্যাহ্ন ভোজের। এ ভোজে পুনরায় দাবি তোলা হয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইজিপি দিয়ে পৃথক পুলিশ বিভাগ গঠন, পুলিশকে রক্ষার জন্য আইনজীবী দল গঠন, পুলিশের জন্য ৭০% ভাতা দাবি, সম্মানী বেতন পুলিশের সন্তানদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্কুল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রদান ইত্যাদি।
পুলিশের এ সকল দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় মন ক্ষুণœ হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নিজেই! শোনা যায় তিনি পুলিশের মুখপাত্র। পুলিশের দাবি শুনলেই তিনি কাতর হয়ে পড়েন। এ কাতর এমনিই হননি। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনুরূক্ত হয়েছেন। তাই তিনি আকাশে মাঝে মাঝে কালো মেঘ দেখতে পান! তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি আকাশের মুক্ত মেঘের মতো পরিস্কার দেখতে চান। শোনা যায়, তিনি পুলিশের ক্ষমতায়নের জন্য গোপনে পত্র দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এই উপদেষ্টার কল্যাণে ৪০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম পিএসসি-এর চেয়ারম্যান হয়েছেন পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি। উক্ত উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের কল্যাণে পুলিশের আইজিপিকে সচিব পদ থেকে টেনে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে। ডিএমপি হতে গত ২০১২ সালের একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছিল, তাতে আইজি ও পুলিশ কমিশনারে কৃতিত্ব ছবি ব্যতীত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পেশাগত দায়িত্ব পালনের কোন ছবি ছিল না।
মনে আছে, গত ২০১২ পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিনে ৬ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশ কর্মকর্তাগণ আরও ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দাবি তোলেন। পুলিশ সংস্কার অধ্যাদেশ করতে বলেন। এ অধ্যাদেশ শুধুই ক্ষমতায়ন। তবে পুলিশ কখনও রেগুলেশন সংশোধনের কথা বল না। পুলিশ সংস্কারের ধুয়া তলে আইজিপি মহোদয় সেনাবাহিনীর মতো পুলিশ প্রধান হতে চান। পুলিশ সংস্কারের দাবি অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী কোন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। এমন কি পুলিশ কর্মকর্তা (ক্যাডার সার্ভিসে) নিয়োগ, বদলি সবই করবে পুলিশ প্রধান। সব পুলিশ কমর্তকর্তার থাকবে অফুরন্ত ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ। রাস্তায় বের হলেই তার থাকতে হবে বাধাহীন ক্ষমতা। আনসার ও কারা বাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণে নিতে চান পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তার আর সিভিল সার্ভিস থাকতেন চান না, তারা প্যারা মিলিটারি বাহিনী হতে চান। এমন সব কথা বলা আছে পুলিশ সংস্কার অধ্যাদেশে।
জনগণের কল্যাণ, কিংবা পুলিশ সদস্যর কল্যাণকর কোন কথা নেই সংস্কার খসড়ায়। শুধুই ক্ষমতা বৃদ্ধি, নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা আর স্বাধীনতা। এ সংস্কার বাস্তবায়িত না হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারের উপর নাখোশ। জানা গেছে, ইউএনডিপি থেকে পাওয়া শত শত কোটি টাকার প্রকল্প থেকে পুলিশ সংস্কারের নামে কোটি কোটি টাকা পুলিশ কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে লুটে নিচ্ছেন। কিছু ভাগ দেন তালিকাভুক্ত মুখপাত্রগণকে নিয়মিত চাঁদা হিসেবে। ওই টাকা হালাল করতেই যতসব এই দাবি দাওয়া। আর এভাবে পুলিশ সাধারণ জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পুলিশ এখন আর সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা ভাবতে রাজি নন। চাঁদা পাওয়া বড় বড় মুখপাত্ররাও পুলিশের জন্য কথা বলেন।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই জেলায় ডিসি কর্তৃক পুলিশের সকল নিয়ন্ত্রণকে মুক্ত করে দেন। পুলিশের আইজিপি পদটি তখন ছিল যুগ্ম সচিবের পদ মর্যাদার। এখন টু-স্টার/ত্রি-স্টার জেনারেল ভাবনায় আইজিপি। তাই পুলিশ এখন নিয়ন্ত্রণহীন। কোথায় কোন চেইন-অব কমান্ড কিংবা নিয়ন্ত্রণ নেই। আইন-শৃঙ্খলায় অবনতি ও পুলিশের বেপরোয়া হয়ে উঠার এটি একটি অন্যতম কারণ। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নিজেই যখন পুলিশের মুখপাত্র হয়ে যান, তখন দেশে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন কিংবা জনগণকে উন্নত সেবাদানের কথা আর ভাবা যায় না।
পুলিশের এখন অনেক দাবি, অনেক চাওয়া। কল্যাণ ও সেবাদানের পরিবর্তে পুলিশের শুধু চাই-চাই, খাই-খাই ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ দাবি নামা দিন দিন বাড়ছে। গণতন্ত্র রক্ষার নামে এ ধরনের ক্ষমতা বৃদ্ধির অযৌক্তিক দাবি কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, মন্ত্রী-মিনিস্টার, সচেতন নাগরিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তথা সরকার প্রধানগণ অনুধাবন না করলে দেশ উন্নয়নের পরিবর্তে গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। পুলিশে অযৌক্তিক দাবিগুলো পরিহার করা প্রয়োজন। গণতন্ত্র রক্ষা মানে পুলিশের ক্ষমতা বৃদ্ধি নয় এটা বুঝতে হবে। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার বিদেশী চক্রান্ত থেকে রেহাই পেতে সিভিল সোসাইটিকেই এগিয়ে আসতে হবে। পুলিশ সপ্তাহ যেন দাবি সপ্তাহে পরিণত না হয়, বরং সেবা সপ্তাহে পরিণত হবে এটাই জনগণের দাবি।
লেখক: মানবাধিকার কর্মী

No comments

Powered by Blogger.