২২ জানুয়ারির মধ্যে এমপিওভুক্ত না হলে সব বন্ধ- সংবাদ সম্মেলনে হুমকি

আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে সকল স্কুল, কলেজ এমপিওভুক্ত করা না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতারা বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে নন-এমপিও প্রায় সাড়ে সাত হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে।
এমপিও’র সমাধান না হলে কোন শিক্ষকই ঢাকা ছেড়ে যাবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস পেলেই কর্মসূচী স্থগিত করব। এদিকে নানা জটিলতার পর অবশেষে সারাদেশে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত প্রায় ১৪ হাজার এ্যাসিট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সারাদেশে এ্যাসিট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেয়া হলেও অর্থ সঙ্কটে এমপিও সুবিধা দিতে পারছিল না সরকার।
বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যজোটের সভাপতি এশারত আলী বলেন, আমরা আগামী ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে এমপিও’র ঘোষণা না এলে প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে বলে আমরা জেনেছি। আমরা ওই বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। দাবি আদায়ে আজ সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে অনশন শেষে পদযাত্রা করে জাতীয় সংসদের স্পীকারকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচীও ঘোষণা করেন সভাপতি। শিক্ষক নেতারা জানান, সারাদেশে সাড়ে সাত হাজারের মতো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে এক লাখের মতো শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত। সভাপতি এশারত আলী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এমপিও’র সমাধান না হলে কোন শিক্ষকই ঢাকা ছেড়ে যাবেন না। তবে কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস পেলেই আমরা কর্মসূচী স্থগিত করব। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার কথা দিয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষক নেতা। গত ৭ জানুয়ারি থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনে পুলিশের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন এশারত। তাঁর দাবি, পুলিশের পিপার স্প্রেতে আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালীর শিক্ষক সেকেন্দার আলী মারা গেছেন। অভাব অনটনে গত ৪ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের শিক্ষক দিলীপ কুমার। এছাড়া আন্দোলনে অংশ নেয়া রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম স্ট্রোক করেছেন এবং রংপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মেজবাউল হোসেন আন্দোলনে অংশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন বলেও দাবি তাঁর। তিনি বলেন, শীঘ্রই এমপিওভুক্ত না হলে দুঃখ-কষ্টে দিশেহারা শিক্ষক-কর্মচারীদের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর ঘটনা বাড়তে থাকবে। এদিকে দীর্ঘ জটিলতার পর অবশেষে সারাদেশে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত প্রায় ১৪ হাজার এ্যাসিট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় নিযুক্ত এসব লাইব্রেরিয়ান চলতি জানুয়ারি মাস থেকেই এমপিও পাবেন। বর্ধিত বাড়িভাড়া ও চিকিৎসাভাতা যোগ করে মাসিক ৮ হাজার টাকার কিছু বেশি পাবেন তাঁরা। অধিকাংশ লাইব্রেরিয়ান ২০১০ সালে নিয়োগ পেলেও অর্থাভাবে ও সিদ্ধান্তহীনতায় এমপিওবিহীন আছেন। তবে তাঁরা দুটি পর্যায়ে এমপিও পাবেন।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের পর এখন আর বেশি সময় প্রয়োজন হবে না। শীঘ্রই জারি হবে। শিক্ষা অধিদফতর প্রয়োজনীয় কাজ করবে। চলতি জানুয়ারি থেকেই এমপিও সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা। জানা গেছে, সারাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী গ্রন্থাগারিকরা নিয়োগ পাওয়ার তিন মাস পর থেকে বেতন-ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছর বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাংলাদেশের অনেক বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিকদের হাজিরা নেয়া হয় কর্মচারীদের হাজিরা খাতায় যা একজন গ্রন্থাগারিকের জন্য খুবই অপমানজনক বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.