ঘুরে আসুন- অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি

যেন পর্যটনের এক নতুন দিগনত্ম। আর প্রকৃতি সেখানে সুন্দরের পসরা সাজিয়ে বসেছে। চারদিকে অথৈ সাগর। মাঝখানে বিশাল সংরতি বনাঞ্চল। সবুজের সমারোহ বনাঞ্চলের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা বেলাভূমে লাল কাঁকড়াদের বিরামহীন বিচরণ।
প্রকৃতির এই অপরূপ লীলাভূমে পা না ফেললে বোঝার উপায় নেই যে কতটা সুন্দর এই প্রকৃতি। কলাপাড়ার সৌন্দর্যম-িত গঙ্গামতি পর্যটন পলস্নীর সৈকতের উল্টোদিকে আনুমানিক ১২/১৩ কিলোমিটার পূর্বে এই সৈকতটির অবস্থান। প্রকৃতিপ্রেমিরা ঠিকই খুঁজে নিয়েছেন মনোরম এই সৈকতকে। কুয়াকাটা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা, আর গঙ্গামতি থেকে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগে ট্রলারযোগে যেতে। কী যে অপরূপ সৌন্দর্য। এক সময়, প্রায় ৬০ বছর আগে চরটি বিশাল আয়তনজুড়ে জেগে ওঠে, প্রবীণ জেলেদের দাবি এটি। তাদের দেয়া নাম অনুসারে তুফাইন্যার চর। সাগরের উত্তাল ঢেউ (তুফান) এই চরটিতে ভয়াল আকৃতি নিয়ে সব সময় আঘাত হানত। এখনও বর্ষায় আঘাত হানে ভয়াল ঢেউ। সে কারণেই এমন নামে পরিচিতি বাড়তে থাকে সৈকতটির_এমন সব যুক্তি বোঝালেন সেখানকার জেলে ইব্রাহিম। কিন্তু বিগত পাঁচ/সাত বছর আগে থেকে ওখানে যাওয়া পর্যটকেরা লাল কাঁকড়ার দ্রম্নত নিরাপদ গর্তে কৌশলী শেল্টার নেয়ার কারণে নাম দেয় ক্রাফটল্যান্ড_এমন দাবি এক পর্যটপ্রেমিক হাসানুল ইকবালের। আর এখন শীত মৌসুমে প্রতিদিন পর্যটকের বহর যায় ক্র্যাফটল্যান্ডে। চারদিকে সাগরে ঘেরা। মাঝখানে বিশাল সংরতি ছইলা কেওড়ার বাগান। বাগানের মধ্যে বুনো কলমী লতা। আর লতার মাথায় কলিতে ফুটে থাকে হাজারও ফুল। এখানে বিকেল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আগমনে বিরাজ করে এক ভিন্ন আমেজ। চরের এই বেলাভূমে এখন প্রতিদিন আগমন ঘটে শত শত পর্যটকের। এরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় চরাঞ্চলের এই সৈকতে। তবে প্রকৃতির এই মনোরম সৈকতে এখনও গড়ে ওঠেনি কোন ধরনের স্থাপনা। ভৌগলিকভাবে রাঙ্গাবালী থানার অধীন হলেও যোগাযোগের েেত্র কলাপাড়ার কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি থেকে খুব সহজ থাকায় এই সৈকতের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছে পর্যটকের। এই সৈকতে কেউ একবার গেলে দ্বিতীয়বারও যাওয়ার আকাঙ্ৰা থাকবে। বনবিভাগের কাছে এই মনোরম বনাঞ্চল ও সৈকতের কোন সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে এখানে আসা মৌসুমি জেলেদের ধারণা কয়েক হাজার একরজুড়ে রয়েছে এখানে সংরতি বনাঞ্চল আর প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটির আয়তন। সরকারী উদ্যোগে এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং পর্যটকের জন্য একটি সাইকোন শেল্টার টাইপের বাংলো করা যেতে পারে বলে আসা পর্যটকদের দাবি। এ থেকে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব আয় হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকলে নির্বিঘ্নে এই সৈকতের বেলাভূমে দাঁড়িয়ে সকালের সূর্যোদয় এবং সন্ধ্যায় মনোরম সূর্যাসত্ম দেখতে পাবেন পর্যটকরা। সাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা এই সৈকতসহ বনাঞ্চলটি হতে পারে পর্যটনের নতুন দিগনত্ম। তবে প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।
_মেজবাহ উদ্দিন মাননু, কলাপাড়া


তীরে ছায়াঘেরা অপরূপা নদীর ঢেউ

দুই ধারে সেতু মাঝ খানে নদীর জল, তীরে সবুজের মেলা। নদীর মাঝে অপরূপা চর, সেই সঙ্গে নদীর ঢেউ করেছে সুন্দর লীলাভূমি। নদীর ওপর দিয়ে এপার ওপারকে বন্ধন করেছে দুটি সেতু। জোড়া সেতুর তীরে হাজার হাজার দর্শক-পর্যটক ভিড় করে।
ভৈরব বাজার মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত শহীদ আব্দুল হালিম সেতু ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু। এ জোড়া সেতুর চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দিন দিন দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনার্থীদের। বছরের উৎসবের দিনগুলোতে এই তীরে হাজার হাজার মানুষ মিলিত হয়। এছাড়া প্রতিদিন শ' শ' মানুষের কোলাহলে মুখরিত এলাকাটিতে সরকারী ও ব্যক্তি মালিকানার যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। সবুজে ছায়াঘেরা এলাকাটিতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুললে সরকার যেমন লাভবান হবে, তেমনি চিত্রবিনোদনের জন্য মানুষের একটি ভাল পরিবেশ পাওয়া যাবে।
নদীর সীমাহীন জলরাশি বুকে নিয়ে উচ্ছল মেঘনার বিরামহীন ছুটে চলা। কৃষ্ণজলের তরঙ্গরাজি সাঁতরে সাঁতরে কোন দূর গনত্মব্যের উদ্দেশে যান্ত্রিক অযান্ত্রিক নৌযানের যাত্রা। কখনও কখনও নাম না জানা বিশাল প্রজাতির মাছের উঁকি দিয়ে নীলাকাশ দেখা_এসব দৃশ্য দৃষ্টি কাড়ছে ভৈরবের মেঘনা নদীর তীরে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেঘনার চরাঞ্চল হৃদয় চিরে নির্মিত বাংলাদেশ রেলওয়ের শহীদ আব্দুল হালিম রেলসেতু এবং সড়ক ও জনপথের সড়ক সেতু। দুই সেতুর এপ্রোচ রোডের দু'পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি বৃরাজি। নানা জাতের দেশী-বিদেশী ফুলের মৌ মৌ সুভাষ। সৌন্দর্য পিপাসুদের প্রতিদিন টেনে আনছে এখানে। বছরের উৎসবগুলো তো বটেই_সকাল, বিকেল, সন্ধ্যাবেলায় সব বয়সের নারী-পুরম্নষ, যুবক-শিশুদের কোলাহলে মুখরিত থাকে এলাকাটি। প্রতিদিনকার বিরামহীন কর্মমুখর জীবনে এতটুকু কানত্মি নিরসনে এখানে ছুটে আসে মানুষ। মেঘনার ঊর্মিমালার গর্জন, হু হু করে বয়ে চলা মুক্ত বাতাস, সবুজ বৃরে ছায়া ভৈরবসহ আশপাশের লোকজনকে আকৃষ্ট করছে। অঘোষিত এক দর্শনীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাটি। স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য হয়ে উঠেছে উৎকৃষ্ট এক প্রাতঃভ্রমণের কেন্দ্র।
প্রতিদিন ভোরে শত শত নারী-পুরম্নষ সেতুর সবুজ গাছ ও মেঠপথে খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায়। সকালে মেঘনার পূর্ব কোণ থেকে সূর্যের উঁকি মারার দূশ্য যে না দেখবে সে বর্ণনা দিতে পারবে না। অনেক দূর থেকে মানুষ ছুটে আসে সেতুর পাড়ে মেঘনার জলরাশির আওয়াজ শুনতে। অনেকে আবার মনোরম দৃশ্য ফ্্েরম বন্দি করে রাখে প্রিয়জনকে দেখাতে।
নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকা, ডিঙি নৌকা অপো করে। যেন তার কাঁধে চড়ে মেঘনার বুকে ঘুরে চলার জন্য। এলাকাটি ভ্রমণপিয়াসীদের জন্য পছন্দের স্থান হওয়ায় নদীর তীরে হালকা খাবার ও কফি হাউজ তৈরি করা হয়েছে। সেতুর টোলপস্নাজা এলাকায় সুন্দর পরিবেশে নাটালের ডাকবাংলো। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কেউ এলে এখানে রাত যাপন করে। সব মিলে ভৈরব মেঘনা নদীর তীর এলাকা হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
_কাজী ইসফাক আহমেদ বাবু, ভৈরব

No comments

Powered by Blogger.