আমাদের প্রযুক্তি ও অনলাইনমুখী হতে হবে by মনোয়ারুল ইসলাম

বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের প্রযুক্তি ও অনলাইনমুখী হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি প্রকৌশলী রাফেজ আলম চৌধুরী।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং শিল্প শতভাগ রফতানীমুখী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি সময়ের সঙ্গে উন্নতি করে। আমাদের সেই উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নতি করতে হবে। প্রতিযোগিতা ও টিকে থাকার কোনো বিকল্প নেই। আমরাও ই- কমার্স, সফটওয়্যার ও আইটিতে অভ্যস্থ হচ্ছি।”

দেশের রফতানীমুখী খাতের ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, “আমরা বিজিএপিএমইএ’র পক্ষ থেকে গ্রুপ ইন্সুরেন্স, স্বাস্থসেবা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিতে কাজ করছি। আগামীতে শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারীদের কল্যাণে আরও কাজ করবো। আমরা প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট, হেলথ কমপ্লেক্স ও নিজস্ব ভবনের ব্যাপারে অগ্রসর হচ্ছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো বলে বিশ্বাস করি।”

দেশের রফতানী খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে উল্লেখ তিনি বলেন, ২০১১-১২ অর্থবছরে আমাদের এক্সেসরিজ ব্যবসায়ীরা ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রফতানী আয় করেছেন। আমরা প্রতিবছর রফতানীতে আরও ব্যবসাসফল হচ্ছি। আশা করছি, ২০১৮ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রফতানী করতে সক্ষম হবো।”

তিনি বলেন, “আশির দশকের শেষের দিকে প্রথম ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ফিল্ড হিসেবে মাত্র কয়েকজন ব্যবসায়ী শুরু করেছিলেন। এখন এটা অনেক বড় শিল্প। আমাদের সেক্টরের ১ হাজার ২০০ কোম্পানি সংগঠনের সদস্য হয়েছে। প্রতিবছর কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে।”

গাপেক্সপো-২০১৩ (গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং এক্সপোজিশন) মেলার ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমাদের মেলা প্রতিবছর সফল হয়। মেলায় কোম্পানির পরিচিতি বাড়ে, ব্রান্ডিং হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে আরও বড় আকারে মেলার আয়োজন করা হবে।”

রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, “আমাদের মেলায় দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি পোশাকের সহায়ক ও মোড়কীকরণের পণ্যসামগ্রী প্রদর্শন করে। এ ধরনের মেলার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি। আবার বিদেশিরাও আমাদের পণ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।”
rafez
তিনি বলেন, “আমাদের বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় নিজেদের বিভিন্ন পণ্য ও প্রযুক্তি তুলে ধরে। এছাড়া বোতাম, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ইলাস্টিক, বোতাম ট্যাগ, কলার স্ট্যান্ড, বাটারফ্লাই, লেবেল, করোগেটেড কার্টন, জিপার, হ্যাংটেগ, ব্যাক বোর্ড, নেক বোর্ড, সুইং থ্রেড, প্রাইস ট্যাগ, ফটোবোর্ড, গামটেপ, টিস্যু, এমব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন পণ্য মেলায় প্রদর্শন করে। মেলায় বিক্রির চেয়ে পরিচিতিটাই বড়। সে দিক দিয়ে মেলা সফল। তবে, রাজনৈতিক কর্মসূচি মেলায় প্রভাব ফেলেছিলো। তারপরও মেলা সফল হয়েছে।”

গার্মেন্ট এক্সেসরিজের চেয়ে বিশ্বে প্যাকেজিং শিল্পের বাজার অনেক বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা প্যাকেজিং সেক্টরে এগিয়ে গেলেও এখনো অনেক কিছু করতে হবে। ফুড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্ট,  এগ্রো, ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিকসহ সব রফতানীমুখী খাত প্যাকেজিং শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং, মেটাল প্যাকেজিংয়ে অনেক বড় বাজারের সুযোগ আছে।”

প্যাকেজিং ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে তিনি বলেন, “প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট  তৈরি করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে আমরা রাজধানীর বাংলামোটরের সোনারতরী টাওয়ারে টেস্টিং ল্যাবরেটরি করেছি। সোনারতরীর ফ্লোরটি আমাদের নিজস্ব অফিস হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক সুবিধা সমৃদ্ধ প্যাকেজিং ইনস্টিটিউট এ সেক্টরের সবার জন্য জরুরি।”

তিনি বলেন, “বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যাকেজিং ফ্যাকাল্টি খোলার প্রস্তাবকে আমি সাধুবাদ জানাই। এ সেক্টরে আরও দক্ষ জনবল দরকার।  জনবল তৈরিতে নিয়মিত ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা হবে। পূর্ণ ইনস্টিটিউট করার জন্য প্রাথমিকভাবে একটা জায়গার জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা করছি। আমরা জায়গা কিনে নেবো কিন্তু সরকারিভাবে সহযোগিতা দরকার।”

প্যাকেজিং যে কোনো পণ্যের জন্য জরুরি উল্লেখ করে রাফেজ আলম বলেন, “রফতানীর জন্য ভালো প্যাকেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। দেশেও দেখবেন, চিপস বা বিস্কুটের প্যাকেটেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আধুনিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে পণ্যকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়।”

তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে, লোকাল ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন এসেছে। প্রতিনিয়ত আমরা পরিবর্তিত হচ্ছি। আমাদের বাজার বাড়াতে পণ্যের আরও বেশি মার্কেটিং দরকার। সরকারকে প্যাকেজিং নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে। কারণ সব শিল্পের জন্য সবার প্যাকেজিং দরকার।”

বিজিএপিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমাদের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং সেক্টরে ১ হাজার ২০০ কোম্পানিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ লাখ লোক কাজ করে। এ খাতে দেশি  উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিও বিনিয়োগ করেছে। গার্মেন্ট সেক্টর এক্সেসরিজ ছাড়া উন্নতি করতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ থাকলে আরও বিনিয়োগ আসবে। তাই যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে সবার বিবেচনা করা উচিত। সব দলেরই শিল্প সহায়ক হওয়া উচিত। আগে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে।”
rafez
ইউপির ব্যাপারে তিনি বলেন, “বিজিএপিএমই’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যু করে শুল্ক কর্তৃপক্ষ। এ প্রক্রিয়া ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা ইস্যু করবো। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করেছি। কিন্তু বাস্তবায়নে এনবিআর থেকে বাঁধা আসছে।”

তিনি আরও বলেন, “শুল্ক কতৃপক্ষ ইউপি ইস্যু করাতে রফতানীকারকরা নানামুখী হয়রানির শিকার হন। কিন্তু বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখে সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে।” প্রসঙ্গত বিজিএমইএ এ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে।

রাফেজ আলম চৌধুরী বলেন, “আপনারা জানেন, বন্ড কমিশনারেট অফিস, বিজিএপিএমইএ ও বিপিজিএমইএ’র যৌথ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে। এভাবে ঝুলিয়ে রাখার মানে হয় না।”

ব্যাংকের ব্যাপারে তিনি বলেন, “ব্যাংকের সুদসহ বিভিন্ন সমস্যায় আমাদের সেক্টরসহ সব সেক্টর সমস্যায় পড়ছে। ব্যাংকগুলোকে সুদ কমাতে হবে। লোন সহজ করতে হবে। সব ব্যাংকের একই রকম নীতিমালা করতে হবে। ব্যাংকের অধিক সুদের কারণে আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ব্যবসা করতে হচ্ছে।”

নতুন বাংলাদেশের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি আশা করি, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রযুক্তি সব সেক্টরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আমরা মাথা উচুঁ করে বিশ্বে অবস্থান করে নেবো। আমি তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। আমাদের নতুন প্রজন্ম অনেক বেশি প্রযুক্তিবান্ধব ও সাহসী। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে পারবো।”

রাফেজ আলম চৌধুরী গুলশান ইয়ুথ ক্লাবেরও সভাপতি। তিনি ২০০৮ সালে বাংলাদেশ করোগেটেড কার্টন অ্যান্ড এক্সেসরিজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএএমইএ) সভাপতি ছিলেন।

ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি কনভিন্স জিপার অ্যান্ড এক্সেসরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গার্মেন্ট ও এক্সেসরিজ শিল্পে তার কয়েকটি রফতানীমুখী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে রাফেজ আলম চৌধুরী বিজিএপিএমইএ’র দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

No comments

Powered by Blogger.