শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটারদের ছাড়লই না পিসিবি- চ্যালেঞ্জের নাম বিপিএল

সময়সীমা ছিল সকাল ১০টা, কিন্তু কিছুই জানায়নি পিসিবি। কাল দুপুর ১২টার দিকে পিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আহমেদ সুবহানের ফোন এল বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে।
কী বলবেন, অনুমেয়ই ছিল। সুবহান জানালেন, যতক্ষণ না বিসিবি সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখসহ পাকিস্তান সফরের প্রতিশ্রুতি দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের জন্য পিসিবির পক্ষে খেলোয়াড় ছাড়া সম্ভব নয়। এর আগে পরশু রাতে পিসিবিতে দীর্ঘ সভা হয়েছে বিষয়টা নিয়ে। সভা শেষে বিসিবিকে এমন একটা সিদ্ধান্তেরই আভাস দেওয়া হয়েছিল। বিসিবি পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত না নিলে বিপিএলে খেলোয়াড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন হবে পিসিবির জন্য। বিসিবি যে আরেকবার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটাতেও নাকি বিস্ময় প্রকাশ করেছে পিসিবি। তারা মনে করে, বাংলাদেশ থেকে এর আগে ঘুরে আসা নিরাপত্তা দলের প্রতিবেদনই যথেষ্ট সফরের জন্য।
কাল দুপুরে বিসিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাই আগের দিনের সিদ্ধান্তই আবার জানালেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের ছাড়াই আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে যাবে বিপিএলের খেলা। তার আগে আজ বিকেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
পিসিবি যদি পরে সিদ্ধান্ত বদলায়ও, এবারের বিপিএলে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের আর খেলার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, ‘এটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা এখন বিপিএল নিয়ে চিন্তিত। আর কিছু নিয়ে ভাবছি না।’
বাংলাদেশ পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত দিলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের বিপিএলে আসতে দেওয়া হবে—আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দেওয়া-নেওয়া’র কথা বলা না হলেও দুই বোর্ডের মধ্যে ব্যাপারটা এ রকমই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কাজেই পিসিবি শেষ পর্যন্ত বিপিএলে খেলোয়াড় না দেওয়ায় নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলেরও পাকিস্তান সফরের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমনকি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দলও এখন আর পাঠানোর সম্ভাবনা নেই। বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের কথায়ও সেই আভাস, ‘ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের এখন দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।’ পিসিবি যতই আপত্তি করুক, এই ভাবনায় বিসিবি সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর ওপরই। ‘আমরা যদি মনে করি, যে দেশে যাব ওই দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা জানতে আরেকটি নিরাপত্তা দল যাওয়া দরকার, তাহলে অবশ্যই যাবে’—বলেছেন বিসিবি সভাপতি। জানিয়েছেন পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর তাঁর অনাস্থার কথাও, ‘পাকিস্তানের পারিস্থিতির কোনো উন্নতি তো হয়ইনি, বরং অনেকে মনে করছেন সেটা আরও খারাপের দিকে গেছে।’
পিসিবির সিদ্ধান্ত এক দিকে স্বস্তিরও কারণ বিসিবির জন্য। কাল সংবাদ সম্মেলনের আবহেও মিশে ছিল সে স্বস্তিটা। আর যা-ই হোক, এখন তো আর পাকিস্তানে দল পাঠানো নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না! নাজমুল হাসানও বললেন, ‘এখন অত তাড়াহুড়ো নেই। মাথার মধ্যে যে একটা চিন্তা ছিল, ওই জিনিসটা নেই। প্রচণ্ড চাপে ছিলাম। এই সিদ্ধান্তে বিপিএল নষ্ট হয়ে যেতে পারে জেনেও তারা এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন আমরাও বসে সিদ্ধান্ত নেব, বাংলাদেশ দলের ওখানে খেলতে যাওয়ার ব্যাপারে কী ধরনের সাড়া দেওয়া উচিত।’
পিসিবির ‘দেওয়া-নেওয়া’র খেলাটাকে সরাসরি ‘ব্ল্যাকমেলিং’ না বললেও তাদের আচরণে যে বেশ মর্মাহত, সেটি ঠিকই প্রকাশ পেল বিসিবি সভাপতির হাবভাবে। তবে তিনি আশাবাদী, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ছাড়াই বিপিএলের দ্বিতীয় আসর সফল হবে। এটাকে এখন আর শুধু বিসিবির চ্যালেঞ্জ ভাবছেন না নাজমুল, ‘বিপিএল এখন আমাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য, দেশি-বিদেশি সব খেলোয়াড়ের জন্যই বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রথম আসরের মতো বা তার চেয়েও কীভাবে ভালো করা যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ছাড়াই আমরা সেটা করতে পারব ইনশাল্লাহ।’

No comments

Powered by Blogger.