স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে অনিয়ম খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর by নিখিল মানখিন

 স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নিয়োগের চূড়ানত্ম ফল প্রকাশে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। অতিরিক্ত তিন মাসের সময় চেয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার পর্যনত্ম তাদের আবেদনের কোন জবাব দেয়নি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। অনিয়ম ও তদ্বিরবাজদের সামাল দিতে গিয়েই নির্ধারিত সময়ে চূড়ানত্ম ফল প্রকাশিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বাণিজ্যের ভিড়ে বঞ্চিত হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও জেলা কোটার লোকজন। শুধু তাই নয়, চাকরি পাওয়ার আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে ঘুষ দিতে গিয়ে পথে বসছে অনেক দরিদ্র পরিবার। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, মৌখিক পরীা স্থগিত তিন জেলার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সময় চাওয়া হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৬১টি জেলার চূড়ানত্ম ফল প্রকাশ করা হবে। আর স্থগিত তিন জেলার চূড়ানত্ম ফল আলাদাভাবে দেড় মাস পর প্রকাশ করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, নিয়োগ কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলো নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম ধরা পড়লে সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অতিরিক্ত সময় চাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা ও রংপুর জেলার লিখিত পরীায় উত্তীর্ণদের মৌখিত পরীা স্থগিত রয়েছে। এ জন্য তিন মাসের অতিরিক্ত সময় চেয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আমাদের আবেদনের প্রেেিত সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের প থেকে এখনও কোন জবাব আসেনি। সব জেলার জন্য নয়, শুধুমাত্র স্থগিত তিন জেলার কথা বিবেচনা করেই অতিরিক্ত সময় চাওয়া হয়েছে। তিন মাসের সময় চাওয়া হলেও আগামী এক মাসের মধ্যেই তিন জেলার চূড়ানত্ম ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ওই তিন জেলার জন্য ইতোমধ্যে মৌখিক পরীা সম্পন্ন হওয়া ৬১টি জেলার ফল প্রকাশ পিছিয়ে যাবে না। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই ৬১টি জেলার চূড়ানত্ম ফল প্রকাশ করা হবে। আর মৌখিক পরীা স্থগিত হওয়া তিনটি জেলার চূড়ানত্ম ফল আলাদাভাবে দেড় মাস পর প্রকাশ করা হবে।
দেশে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর রয়েছে তীব্র সঙ্কট। স্বাস্থ্য সেক্টরকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসাবে ৬ হাজার ৩৯১টি পদে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে হাত দেয় বর্তমান সরকার। লিখিত পরীার ফল ১৫ জানুয়ারির পরিবর্তে তিন দিন পিছিয়ে ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়। ৮০ নম্বরের লিখিত পরীায় ৫ লাধিক পরীার্থী অংশ নেন। মৌখিক পরীার জন্য শূন্যপদের মাত্র তিন গুণ অর্থাৎ ১৯ হাজার ১৭৩ জন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। লিখিত পরীার ৮০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ও মৌখিক পরীার বিশ নম্বর মোট ১শ' নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরধারীরাই চাকরি পাবেন। ৬৪ জেলায় সুষ্ঠুভাবে মৌখিক পরীা গ্রহণের ল্যে ১৭টি কমিটি গঠিত হয়। সারাদেশে মৌখিক পরীা ৫ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিনত্মু নির্ধারিত সময়ে লিখিত ও মৌখিক পরীায় উত্তীর্ণদের চূড়ানত্ম ফল প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে অতিরিক্ত তিন মাস সময় চেয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অনিয়ম ও তদ্বিরবাজদের সামাল দিতে গিয়েই নির্ধারত সময়ে চূড়ানত্ম ফল প্রকাশিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কয়েকদিন আগে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারাদেশে। অভিযোগ উঠেছে, স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ নিয়ে চলছে প্রায় দেড় শ' কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকা পাঠানোর েেত্র আওয়ামী রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও পিছিয়ে নেই। লিখিত পরীার আগেই সম্পন্ন হয়ে আছে আর্থিক চুক্তি। সিন্ডিকেট সদস্যদের তালিকানুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে নম্বর বণ্টন করে মৌখিক পরীার জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। আর্থিক লেনদেন না করাতে লিখিত পরীায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি হাজার হাজার মেধাবী মুখ। টাকার জোরে টিকে গেছে অনেক ছাত্রদল ও শিবিরকর্মী। উচ্চ মহলের ভরসায় টাকা গ্রহণ করে বিপাকে পড়েছে মধ্যস্থতাকারী অনেক দালাল। মৌখিক পরীার পর লেনদেন নিয়ে টাকা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের মধ্যে অনাকাঙ্ৰিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লিখিত পরীার নম্বর পরিবর্তনের সব খেলাই হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সব পরীার্থীকে নম্বর জানার সুযোগ দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র লিখিত পরীায় উত্তীর্ণদের তালিকা পাঠানো হয়েছে জেলা সিভিল সার্জনদের হাতে। আর চলছে লোক দেখানো মৌখিক পরীা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রার্থীদের কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। কেউ ইতোমধ্যে দাবিকৃত টাকার অর্ধেকটা, কেউ দিয়েছে পুরো অংশ। ভাল পরীা দিয়েও টাকার কারণে উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে অভিযোগ তুলেছে অনেক পরীার্থী। টাকা প্রদানকারী প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর দিয়ে লিখিত পরীার ফল প্রকাশ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.