পুলিশের টিয়ার শেলে আবু বকরের মৃত্যু হয়নি ডিমএপি কমিশনার

 পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবুবকর সিদ্দিকের মৃত্যু হয়নি। শুক্রবার নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইট অথবা ভারি লোহার আঘাতে আবু বকরের মৃত্যু হতে পারে। আবু বকর সিদ্দিক পরিস্থিতির শিকার। আব ুবকরের মৃত্যুর কারণ নানাভাবেই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবু বকর হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে বাদীর অভিযোগ, গুলির আঘাতে আবু বকর নিহত হয়েছে। গুলিটি ছাত্রদের ছোড়া না তৃতীয় কোন সন্ত্রাসী গ্রম্নপের ছোড়া সে বিষয়ে তদনত্ম হচ্ছে। ডিএমপি কমিশনারের দাবি, ওই দিন পুলিশ কোন গুলি ছোড়েনি। বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অন্য কোন গ্রম্নপ সুযোগ বুঝে আবু বকরকে হত্যা করতে পারে বলে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, টিয়ার শেলের আঘাতে এতবড় ৰত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেৰেত্রে মারা যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আবু বকরের মাথার পেছনের অংশ সম্পূর্ণ থেঁতলে গেছে।
পুলিশের রাজারবাগ অস্ত্রাগারের সাবেক ওসি বর্তমানে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুর রহমান খান জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ পুলিশ সাধারণত আমেরিকা, ইতালি ও চীনের তৈরি টিয়ার শেল ব্যবহার করে। এসব টিয়ার শেলের ভেতরের যে অংশ গ্যাস ছড়ায় তা নরম। গ্যাসগান থেকে টিয়ার শেল নিৰেপের সঙ্গে সঙ্গে শেলের ভেতরে থাকা রাসায়নিক পদার্থ তাপে ধোঁয়ার সৃষ্টি করে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক টিয়ার শেল মানুষের চোখ বা মাথার মতো স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করলেও মৃতু্য হওয়া অসম্ভব। কারণ গ্যাসের তাপে চোখের চামড়া পুড়ে যেতে পারে বা ৰতের সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে ধাতব পর্দাথের তৈরি ভারি টিয়ার শেলের ব্যবহার অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্যাসগান থেকে টিয়ার শেল ছোড়ার পর ধাতব পদার্থের তৈরি টিয়ার শেলের খোলস গ্যাসগানের ভেতরেই থেকে যায়। টিয়ার শেলের যে অংশ গ্যাস ছড়ায় তা হাল্কা ও নরম। এ জন্য টিয়ার শেলের আঘাতে কারও মৃতু্য হওয়া অনেকটাই অসম্ভব।
এ ছাড়া হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। যুদ্ধ ময়দান বা অনত্মিম মুহূর্ত ব্যতীত হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করার কোন রেকর্ড নেই পুলিশের। পুলিশ এইচই-৩৬ মডেলের হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে থাকে। ওইদিনের সংঘর্ষে হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করার মতো কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের এডিসি সৈয়দ নুরম্নল ইসলাম। শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, শরীরের যে অংশে টিয়ার শেল লাগে সে অংশ সামান্য পুড়ে যেতে পারে। পুড়ে যাওয়া অংশে দীর্ঘ সময় গ্যাস বা বিস্ফোরকের গন্ধ থাকে। সে ধরনের কোন আলামত আবু বকরের দেহে পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (সদর দফতর) হাবিবুর রহমান-পিপিএম-সেবা, এডিসি ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালিদ হোসেন ও এসি শ্যামল কুমার মুখার্জীসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এএফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দু'গ্রম্নপের সংঘর্ষে আহত হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। পরদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়।

No comments

Powered by Blogger.