বদলে যাওয়া জি

শুধু ওপার বাংলাই নয়, এপার বাংলার দর্শকের কাছেও ভীষণ জনপ্রিয় নায়ক জিৎ। হরনাথ চক্রবর্তীর ‘সাথী’ ও ‘সঙ্গী’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে পুরো কলকাতার চলচ্চিত্রের পরিবেশই একদম পাল্টে দেন তিনি।
নির্মাতারা একের পর এক তাকে নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে শুরু করেন। যেখানে এক সময় কলকাতায় শুধু পারিবারিক গল্পের ওপর বেশি বেশি ছবি নির্মিত হতো সেখানে জিৎ-এর আগমনের পর রোমান্টিক ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। বদলে যেতে থাকে কলকাতার ছবির ভাষা। বলা যায় জিৎ এসেই পাল্টে দেন কলকাতার চলচ্চিত্রের পরিবেশ। গত ১০ জানুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন এই সময়ের জনপ্রিয় এই নায়ক। ১১ জানুয়ারি এফডিসিতে দুই বাংলার চলচ্চিত্রকে এক করার লক্ষ্য নিয়ে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে। সাথে ছিলেন গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎসহ অনেকে। কলকাতা ফিরে যাবার আগে নানা বিষয়ে কথা হলো তার সাথে। লিখেছেন
অভি মঈনুদ্দীন
বাংলাদেশে এই প্রথম এলেন, কেমন লাগছে?
এখানকার অনেক পরিচালক এবং প্রযোজকের সাথে এর আগেও আমার কলকাতায় বসে কথা হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে। যেমন নারগিস আক্তার, মঈন বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে ব্যাটে বলে আসলে হয়ে ওঠেনি বলে বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয়নি। তবে ইচ্ছে ছিল এদেশে আসার। কারণ আমি জানি যে এদেশে আমার অনেক ভক্ত আছেন। আর থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ কলকাতা আর বাংলাদেশের ভাষা তো এক। তো নিজের ভাষার প্রতি, নিজের ভাষার নায়কের প্রতি দর্শকের একটা আলাদা টান থাকবেই। কলকাতায় আমার জন্ম হলেও আমি কিন্তু মনেপ্রাণে বাঙালী। তাই যে দেশে এই বাংলার সৃষ্টি, যে দেশে এই বাংলাকে নিজের ভাষা করে রাখার যুদ্ধ হয়েছে সেই দেশটার মানুষকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। আমার সেই আশা পূরণ হয়েছে। খুব ভালো লেগেছে ঢাকা শহরকে দেখে, এখানকার মানুষকে দেখে। সবাই এত আন্তরিক, ভাবাই যায় না।
আপনি তো ঢাকায় এসেছেন একজন প্রযোজক হিসেবে?
হ্যাঁ, ঢাকায় এসেছি আমি মূলত একজন প্রযোজক হিসেবে। আমি কলকাতার চলচ্চিত্রে একজন নায়ক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি একজন প্রযোজকও বটে। সর্বশেষ আমি ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট লাভ’ ছবিটি প্রযোজনা করেছিলাম। তবে সেটা যৌথ প্রযোজনায় করেছি ভ্যাঙ্কটেশ ফিল্মসের সাথে। এককভাবে এখনও ছবি সেভাবে করিনি। ভবিষ্যতে করব।
এবার আপনারা ঢাকা এলেন মূলত কি কি বিষয়ে আলোচনা
করতে ?
আমরা কলকাতা থেকে এসেছি মূলত ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’-এর আওতাধীনে। এর চেয়ারম্যান আমাদের গৌতম দা (গৌতম ঘোষ), আহ্বায়ক হিসেবে আছেন প্রসেনজিৎ দা। সাথে আছেন অনেকেই। সবাই মূলত ছবি প্রযোজনার সাথেই জড়িত। তো এর কিছুদিন আগে এখানকার মাননীয় তথ্যমন্ত্রী কলকাতায় গিয়েছিলেন। তখন আমরা দুই বাংলা এক হয়ে ছবি প্রযোজনার কথা বলেছিলাম। সেটা নিয়েই মূলত আলাপ করতে এবার ঢাকায় আসা।
প্রাথমিক আলোচনায় কি মনে হলো?
প্রাথমিক আলোচনায় মনে হচ্ছে, উভয়পক্ষই ছবি প্রযোজনা করতে রাজি। অর্থাৎ একসাথে ছবি প্রযোজনা করব আমরা। একসাথে দুই বাংলাতেই ছবি মুক্তি পাবে।
কারণ এখন বিশ্বে প্রায় ত্রিশ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছেন। সে অর্থে আমাদের বিশাল একটা মার্কেট আছে। এই মার্কেট যদি আমরা ধরতে চাই এবং ভালো ব্যবসা করতে চাই তাহলে আমার মনে হয় একসাথে ছবি প্রযোজনা করেই নির্মাণ করা উচিত। তাতে যিনি প্রযোজনা করবেন তিনি বেশ লাভবান হবেন বলেই আমরা মনে করি। কারণ দুই বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছবিটি তখন চলবে।
এটার জন্য তো একটি কমিটি গঠন করাও জরুরী?
অবশ্যই। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। খুব শীঘ্রই কলকাতায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই যাবেন। সেখানে বসেই মূলত কমিটি গঠন করা হবে। আশা করা যায় ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদই কমিটি গঠিত হয়ে যাবে।
যদি তাই হয় তাহলে সব উদ্দেশ্য দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।
এবার আপনার চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে আসি, কোয়েল মল্লিক ও শ্রাবন্তীর সাথেই এখন আপনাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে?
এই দু’জনের সাথেই দেখতে দর্শক বেশি পছন্দ করেন বলেই প্রযোজকরা আমাকে তাদের বিপরীতেই বেশি কাস্ট করেন। তারপরও কিন্তু আমি নতুন অনেকের সাথেই ছবিতে অভিনয় করছি। তাছাড়া আমি যার বিপরীতেই অভিনয় করি না কেন প্রতিটি ছবিই কিন্তু দর্শকনন্দিত হয়। যেমন এর আগে হান্ড্রেড পারসেন্ট লাভ বা আওয়ারা বেশ ব্যবসা সফল হয়েছে। প্রথমটিতে কোয়েল মল্লিক থাকলেও দ্বিতীয়টিতে কিন্তু সায়ন্তিকা অভিনয় করেছিলেন। তাকেও দর্শক বেশ ভালভাবে গ্রহণ করেছেন।
নতুন কোন ছবি মুক্তি পাচ্ছে ?
রবি কিনাগী পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ ছবিটি ১৮ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। এই ছবিতে আমার বিপরীতে আছেন শ্রাবন্তী। এর আগে তার সাথে ‘জোশ’, ‘ওয়ান্টেড’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি। প্রতিটি ছবিই ব্যাপক দর্শকপ্রিয় হয়েছে। এই ছবিটিও দর্শকের কাছে ভালো লাগবে। গানগুলো এরই মধ্যে শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আসলে কি কলকাতার ছবির ভাষা এখন পাল্টে গেছে। কলকাতার মানুষ এখন হলে গিয়ে ছবি দেখছে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য অনেক পজিটিভ। আগে যেখানে পঞ্চাশ থেকে সত্তর লাখ টাকায় সিনেমা নির্মিত হতো এখন সেখানে ছবির বাজেট প্রায় সাত-আট কোটি টাকা। এটা কিন্তু দর্শকের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখেই পরিবর্তন হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.