ময়নামতির চর সাজছে অপরূপ সাজে, বসবে স্কাউটসের আসর- প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন জাতীয় রোভারমুট ও কমডোকা

শান্তি ও উন্নয়নে স্কাউটিং স্লোগানকে সামনে রেখে তেরোটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাঁবুবাস আর সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্পকে ঘিরে অপরূপ সাজে সাজতে শুরু করেছে ময়নামতির চর। ছায়াঘেরা আর মন ছুঁয়ে যায় এমন একটি স্থান ময়নামতির চর।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার মাঝামাঝি স্থানে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণে করতোয়া নদীর তীরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুসংলগ্ন ময়নামতির চরটির অবস্থান। এখানে এবার যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্কাউটিংয়ের সব থেকে বড় আসর ১০ম জাতীয় রোভারমুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকা (তাঁবুবাস ও সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প)। গত ৪ বছর আগে নবম জাতীয় রোভারমুট (তাঁবুবাস) অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুরের বাহাদুর পল্লীতে এবং ৪র্থ জাতীয় কমডেকা (সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প) অনুষ্ঠিত হয়েছিল কক্সবাজারে।
এবার চার বছর পর যৌথভাবে এই আসরটি করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে ময়নামতি চরে আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ একর জমিজুড়ে বিস্তৃত চরটি হয়ে উঠেছে আরও প্রাণবন্ত যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এই আসর ঘিরে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ময়নামতি চরে চলছে সার্বিক প্রস্তুতি।
গত দুই বছর আগে স্থানটি নির্ধারিত করার কারণে ময়নামতি চরে বন বিভাগ বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা রোপণ করেছিল। সেই গাছগুলো এখন বড় হয়ে স্থানটি অপরূপ শোভা ধারণ করেছে। পাশাপাশি চর ঘিরে যাতায়াতের জন্য পাকা সড়ক তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাখিদের কিচির মিচির ডাক নিঝুম এলাকাটিকে মুখরিত করে রেখেছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ১০ম জাতীয় রোভারমুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকার এই মহাসম্মেলনের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এটি চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
রোভারমুট ও কমডেকার স্কাউটদের সবচেয়ে বড় শিক্ষামূলক মহাসমাবেশ এটি। এই মহামিলন মেলায় স্কাউটরা বিশ্বভ্রাতৃত্বে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব সৃষ্টির সুযোগ পাবেন অন্যান্য আসরের মতোই। এখানে দেশের প্রত্যেক জেলা, ইউনিট ও বিদেশ থেকে আসা স্কাউটরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার মাধ্যমে স্কাউটিংয়ে অর্জিত তাঁদের সব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আর দক্ষতার নৈপুণ্য দেখানোর সুযোগ পাবেন। এতে ভাবনা বা বিষয় থাকে, এবারের রোভারমুট ও কমডেকার বিষয় রাখা হয়েছে শান্তি ও উন্নয়নে স্কাউটিং। প্রতি চার বছর পর পর রোভারমুট ও কমডেকার আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ স্কাউটিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
স্কাউটিংয়ের এই বৃহৎ আসর ঘিরে ইতোমধ্যে ময়নামতি চরটি কয়েক দফা পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার ও বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং জাতীয় রোভারমুটের সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় সচিব আবু আলম মোঃ শহিদ খান, জাতীয় স্কাউট কমিশনার মোজ্জাম্মেল হক খানসহ বিভিন্ন দফতরের উপ-সচিবগণ। সূত্র তাদের তদারকিতে আয়োজন চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০ম জাতীয় রোভারমুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকার ময়নামতি চরে প্রায় দেশ-বিদেশের ১৫ হাজার স্কাউট অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। যা দেশের ৬৪ জেলার স্কাউটসহ দেশের বাইরে ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশের স্কাউট দল অংশ নেবে।
দেবীগঞ্জ স্কাউটের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান জানান, স্কাউটিংয়ের রোভারমুটকে বাংলায় বলা হয় তাঁবুবাস আর কমডেকাকে বলা হয় সমাজ উন্নয়ন ক্যাম্প। ৭ দিনব্যাপী এই আসরটির জমায়েত শুরু হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ জানুয়ারি। আসর ঘিরে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পুরোদমে কাজ চলছে। ময়নামতির চরকে অপরূপ সাজে সাজানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ১০ম জাতীয় রোভারমুট ও পঞ্চম জাতীয় কমডেকা মিলন মেলায়সব স্কাউট দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে মিলিত হবেন। সবাইকে থাকতে হবে তাঁবু খাটিয়ে। বেশ একটা এ্যাডভেঞ্চার এ্যাডভেঞ্চার ভাব। এর একটা কারণ আছে। তাহলো যে কোন পরিস্থিতিতে যাতে স্কাউটরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে তারই একটা ব্যবস্থা করা। এবারের সেøাগান রাখা হয়েছে শান্তি ও উন্নয়নে স্কাউটিং।
ডোমারের এলটি স্কাউট মোহম্মদ ইউনুছ জানান, এখানে ১৩টি চ্যালেঞ্জিং অপশন রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সুস্থ দেহ সুস্থ মন, তাঁবু বাড়ি, অদম্য স্কাউটিং, গ্রাম সেবা, স্কুল প্রোগ্রামিং, নেচার এ্যান্ড লাইফ, গ্লোবাল ভিলেজ, হাইকিং, অসম্ভব, ইয়ুথ এ্যান্ড ইয়ুথ, ফান এ্যান্ড গেম, ক্যাম্প ফায়ার ও ক্যারিয়ার প্ল্যানিং।
তিনি বলেন, এই ১৩টি চ্যালেঞ্জিংয়ে প্রত্যেকদিন স্কাউটরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায় ও বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম করে সারাদিনের জন্য নিজেদের তৈরি করে নেবে। তারপর নাস্তা করার পর শুরু হবে বিভিন্ন ধরনের কাজ-কর্ম। এর মধ্যে থাকবে শারীরিক কসরৎ, বিভিন্ন বুদ্ধির খেলা, অনেক মজার মজার অভিযান। যেমন গুপ্তধন খোঁজা থেকে শুরু করে বন্ধু বানানোর খেলাও খেলবে। কোন্ দিক দিয়ে যে দিন কেটে যাবে অংশগ্রহণকারীরা টেরও পাবে না। এখানে নিজেদের তাঁবু নিজেদেরই খাটাবে। শুধু তাই নয়, সেই তাঁবু আবার নিজেদের সাজাতেও হয়। আর শুধু সাজালেই হবে না। সেটা হতে হবে সবার চেয়ে ভাল। এ এক প্রতিযোগিতা।
এছাড়া স্কাউটদের গ্রাম ও স্কুল পরিদর্শন করতে হবে। দেখতে হবে কোথাও কোন সমস্যা আছে কি না। যদি সমস্যা থাকে তাহলে তার সমাধান করতে হবে। বেশ একটা দায়িত্ব চলে আসবে নিজের ঘাড়ে। ১৩টি চ্যালেঞ্জ আর ইভেন্টের মাধ্যমে স্কাউটদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে এই মহাসম্মেলন।
বাংলাদেশের স্কাউটিং ॥ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে স্কাউটিং আরম্ভ হয় ১৯৭২ সালে। সে সময়ের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে সভাপতি করে তৈরি হয় বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি। স্কাউটার পিয়ার আলী নাজির প্রথম জাতীয় কমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় এখনও চলছে বাংলাদেশের স্কাউটিং মহামিলনমেলা।

No comments

Powered by Blogger.