ভোজ্যতেলের দাম

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে নানা কারসাজি এ দেশে বুঝি আর শেষ হবে না। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, আলু, পিঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য আমাদের জীবনধারণের সঙ্গে একান্তভাবে সম্পৃক্ত। এগুলো ছাড়া জীবন চলে না।
আর এ কারণেই বোধহয় অসাধু ও বিবেক-বিবেচনাহীন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ওইসব নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে মাঝেমধ্যে সর্বনাশা খেলা খেলে। কোন কোন সময় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ে বাড়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেখানেও বৃদ্ধির পরিমাণটা অনেক সময় আমদানিমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন হয়ে পড়ে বাজারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী ওই অসাধু চক্রের কারসাজিতেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কম অর্থাৎ আমদানি ব্যয় কম হলেও যদি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, তখন তাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা হবে? তখন সেই অপতৎপরতাকে বহুলনিন্দিত ‘সিন্ডিকেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করলে কি অযৌক্তিক হবে?
কিছুদিন আগে পিঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, যা এখন সহনীয় পর্যায়ে। অভিযোগ রয়েছে, সেই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাও ঘটেছিল কতিপয় বড় ব্যবসায়ীর পরিকল্পিত সিন্ডিকেটের কারণে। আকস্মিক সেই মূল্যবৃদ্ধির সুবাদে রাঘববোয়ালরা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাজার কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিয়েছে বলে পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়। এর রেশ কাটতে না কাটতে সম্প্রতি হঠাৎ করেই চালের দাম বেশ বেড়ে গিয়েছে, যা এখনও অব্যাহত। এ সময় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্যতেলের বাজার। দৈনিক জনকণ্ঠ গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বর্তমানে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিনের দাম ১৬ টাকা বেড়ে ১২৬ থেকে ১২৮ টাকায় উঠেছে, এক সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল কেজি প্রতি ১১০ থেকে ১১২ টাকা। ট্যারিফ কমিশনের তথানুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের তুলনায় বর্তমানে কমপক্ষে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে, যার কোন যৌক্তিক কারণ নেই বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন ভোজ্যতেলের দাম কম। এ অবস্থায় কেন দেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে? জনকণ্ঠ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা কোনো জবাব দিতে পারেননি। ব্যবসায়ীরা জবাব দিতে না পারলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, এর পেছনে কারসাজি রয়েছে। আমদানিকারক, মিল মালিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব অবশ্য এর সঙ্গে সিন্ডিকেট জড়িত বলে স্বীকার করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের মনিটরিং সেল এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য-উপাত্ত-পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছে এবং পত্রপত্রিকার পাতায় তার প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আসল কাজটি এবারও হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারা, কিভাবে মূল্যবৃদ্ধি করছে সবই জানা; শুধু বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটি বাঁধা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা যখন একে অপরের ওপর মূল্যবৃদ্ধির দোষ চাপানোর চেষ্টা করে কিংবা যৌক্তিক কোন কারণ দেখাতে পারে না, তখন তাদের অনৈতিক কারসাজির বিষয়টি বুঝতে বড় গবেষক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না; এ ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন তা হলো সদিচ্ছা, দেশপ্রেম ও সততাপূর্ণ সৎ সাহস। সরকারকে সার্বিক বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। যে পর্যায়ের, যত প্রভাবশালী ব্যক্তিই বাজার অস্থিতিশীল করার মতো জনস্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত থাকুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.