ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়- বই প্রকাশ অনুষ্ঠান

একুশের ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দেলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ। ২১ ফেব্রম্নয়ারি গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার পর পুরো নেতৃত্ব চলে আসে মেডিক্যাল ছাত্রদের কাছে।
তৎকালীন ছাত্র সংসদের ভিপি গোলাম মাওলাকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ঐতিহাসিক মেডিক্যাল ব্যারাক প্রাঙ্গণেই সেদিন ছাত্রজনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এই ব্যারাকেই রক্তে রঞ্জিত হয়ে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আন্দোলন পরিচালনার জন্য চালু করা হয় কন্ট্রোল রম্নম। ভাষা শহীদদের স্মরণে ২৩ ফেব্রম্নয়ারি রাতে ব্যারাকের ছাত্ররা তৈরি করেন শহীদ স্মৃতিসত্মম্ভ। এমন একটি আন্দোলনের উৎস ভূমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণ হলেও এই গৌরবময় ইতিহাস দীর্ঘদিন চাপা পড়ে ছিল। ভাষা আন্দোলনের ৫৮ বছর পর আন্দোলনের সেই ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরেছেন তরম্নণ গবেষক এমআর মাহবুব।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসকাবে কনফারেন্স লাউঞ্জে আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এমআর মাহবুব রচিত 'রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও মেডিক্যাল কলেজ' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমনি। অধ্যাপক ডা. মির্জা মাজহারম্নল ইসলামের সভপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মজিবুর রহমান ফকির, অধ্যাপক ডা. এমএ মান্নান এমপি, ডা. মোসত্মফা জালাল মহিউদ্দিন এমপি, ভাষা সৈনিক ড. মুসত্মাফা নূর-উল ইসলাম, ডা. মনিলাল আইচ লিটু, ভাস্কর রাশা প্রমুখ। ডা. দীপুমনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বিরাট ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এসব ইতিহাস নিয়ে আজ পর্যনত্ম পূর্ণাঙ্গ কিছু লেখা হয়নি। যা লেখা হয়েছে তার সবই খ-িত আকারে। এ ধরনের গবেষণাধর্মী লেখনীর মাধ্যমে আমরা ভাষা আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারব। ভাষা আন্দোলনের ওপর পুরোপুরি চিত্র পাওয়ার জন্য এ ধরনের প্রবন্ধ আরও লেখা উচিত। তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত ভাষার যে মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল তা আজও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় গণতন্ত্রের শিকড় কেটে ফেলা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করা হয়েছে। দেশে এখনও সাম্প্রদায়িক ও অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরম্নদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তবে দেশের জনগণ কোনদিন এসব অপশক্তির কাছে মাথা নত করবে না।
তিনি বলেন, ভাষার ব্যবহারে কেউ সচেতন নয়। গণমাধ্যমে প্রতিদিন ভুলভাবে ভাষার ব্যবহার হচ্ছে। আনত্মর্জাতিক পরিম-লে তাল মিলিয়ে চলতে অন্য ভাষার গুরম্নত্ব কম নয়। তবে অন্য ভাষা শিখতে গিয়ে বাংলার ভাষার ব্যবহার ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। বাঙালী হওয়ার বড় উপাদান বাংলা ভাষা। এখন সময় এসেছে একসঙ্গে কাজ করার। ২১-এর চেতনা আমাদের কাজে প্রেরণা যোগাবে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মজিবুর রহমার ফকির বলেন, দেশে এখন ইংরেজী ভাষার চর্চা হচ্ছে বেশি। দেশের মাদরাসাগুলোয় এখনও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় না। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান দেখানো হয় না। নতুন প্রজন্মকে ভাষার গুরম্নত্ব বোঝাতে জনসচেতনা গড়ে তুলতে হবে। ৫২কে তাৎপর্যবহ করে তোলার জন্য সরকার সবরকমের পদৰেপ গ্রহণ করবে। গ্রন্থের লেখক এমআর মাহবুব বলেন, ৫২'র ভাষা আন্দেলেনে পুলিশের গুলিতে সেদিন অনেকেই প্রাণ দিয়েছিল। কিন্তু কয়েক জনের নাম পাওয়া গেলেও নিহত অনেকের অসত্মিত্ব আজও পাওয়া যায়নি। আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের গণকবর দেয়া হয়েছে। তাদের স্মৃতি রৰার্থে এসব গণকবর আবিষ্কার করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.