পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ॥ গ্রেফতারের আদেশ- ঘুষ গ্রহণের মামলায় সুপ্রীমকোর্ট by নওশের আলী

পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট সে দেশের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে গ্রেফতার করার আদেশ দিয়েছেন। ভাড়াভিত্তিক একটি বিদ্যুত প্রকল্পে দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেফতারের এ আদেশ দেয় আদালত।
সর্বোচ্চ আদালত পাকিস্তানে এই প্রথম একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। ওই আদেশে একই সঙ্গে আরও ১৫ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তাঁদের আজ বুধবার সুপ্রীমকোর্টে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে সুপ্রীমকোর্টের এই আদেশের ফলে সে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী মে মাসে সেখানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। বিরোধী দলের নেতা সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান দ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন অন্যথায় তাঁর দল দেশজুড়ে বিক্ষোভ করবে। আদালতের রায়ের পর করাচী স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্য সূচকেরও পতন হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি, আলজাজিরা ও ডন অনলাইনের।
প্রধানমন্ত্রী পারভেজ আশরাফের বিরুদ্ধে পানি ও বিদ্যুতমন্ত্রী থাকাকালে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নয়টি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প প্রতিষ্ঠানকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, কোন বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন ছাড়াই এই প্রকল্পের জন্য অগ্রিম দুই হাজার দু’শ’ কোটিরও বেশি রুপী নিয়েছে তারা। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান কয়েকটি স্থাপন করলেও সেগুলো অনেক দেরিতে করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের মার্চে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এ চুক্তিটি অস্বচ্ছতার অভিযোগে বাতিল করার নির্দেশ দেয়। সে সময় আদালত এনএবির চেয়ারম্যান এ্যাডমিরাল (অব) ফসিহ বোখারিকে ২০০৬ ও ২০০৮ সালে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্পের অস্থায়ী পদক্ষেপ হিসেবে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পারভেজ আশরাফসহ অভিযুক্তরা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে কম মূল্যে বিভিন্ন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ চুক্তি করতে দেন। এ কারণে বিদ্যুতের মূল্য পরবর্তীতে ৭ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে পারভেজ আশরাফ পানি ও বিদ্যুতমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদনে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০১০ সালে তিনি বিদ্যুতমন্ত্রী থাকাকালে রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট অনুমোদন করেন। ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে ‘রাজা রেন্টাল’ হিসেবে বিদ্রƒপ করা হতো।
পিএমএল-কিউর পার্লামেন্ট সদস্য মখদুম ফয়সাল সালেহ হায়াতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত ২০০৯ সালে তদন্ত শুরু করে। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ এবং আরও ১৫ জনকে গ্রেফতার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের কোর্টে হাজির করার নির্দেশ দিলেও বিশ্লেষকরা বলছেন প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবীরা তা দেরি করানোর উপায় বের করে ফেলবেন। আদালত অবশ্য পরে শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেছে। আদালতের নির্দেশের পর আইনজীবী আমির আব্বাস সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলায় অভিযুক্ত কেউ দেশ ত্যাগ করলে এর দায়-দায়িত্ব ন্যাশনাল এ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর চেয়ারম্যান এবং তাঁর তদন্ত দলেরও ওপর বর্তাবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আদালত।
গত বছরের জুনে সুপ্রীমকোর্টের আদেশ অমান্য করায় রাজা পারভেজ আশরাফের পূর্বসূরি ইউসুফ রাজা জিলানী প্রধানমন্ত্রিত্ব হারান। এরপর ৬২ বছরের রাজা পারভেজ আশরাফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সুপ্রীমকোর্টের এ নির্দেশ পাকিস্তানকে গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ করেছে। আদালতের রায়ের পরিণাম কি হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। পাকিস্তানে এক বছরের মধ্যে দু’জন প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। পারভেজ আশরাফ ক্ষমতাচ্যুত হলে পিপিপিকে তাঁর স্থলে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিতে হবে। আদালতের রায়ের পর প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি আজ করাচীতে ক্ষমতাসীন জোটের সব দলের জরুরী বৈঠক আহ্বান করেছেন।
পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরি ইসলামাবাদে হাজার হাজার লোকের মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসার এবং সরকারের পদত্যাগ দাবি করার সময় সুপ্রীমকোর্ট এ নির্দেশ দিল। অনেকে সন্দেহ করছেন যে, তাহিরুল কাদরির লংমার্চের সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশের যোগসূত্র রয়েছে। তবে কেউ কেউ এটিকে কো-ইনসিডেন্স বলে উল্লেখ করেছেন। আদালতের এ নির্দেশ জারির পর ইসলামাবাদে পার্লামেন্ট চত্বরে বিক্ষোভকারীদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে।
এদিকে বিরোধী তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের প্রধান ইমরান খান ঘোষণা করেছেন আট দিনের মধ্যে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন না করা হয় তা হলে তাঁর দল দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রতিবাদ করবে। অপরদিকে আদালতের নির্দেশ শোনার পর করাচীর স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক প্রায় তিন শতাংশ হ্রাস পায়।

No comments

Powered by Blogger.